দক্ষতা নির্ভর শিক্ষাই দরকার

আলেক্স আলীম | শুক্রবার , ১৪ জুলাই, ২০২৩ at ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ

বেলা শেষে আমরা যখন হিসাব মিলেতে যাই উচ্চ শিক্ষা শেষ করে আসলে আমরা কী শিখেছি! দেখা যায় আমরা অনেক কিছুই শিখেছি। সবকিছুই মুখস্থ। জানতে চাইলে বমি করতে পারি। এই সমাজে বা দেশে যে যত বেশি বমি করতে পারে সে তত বেশি ভালো সার্টিফিকেটের অধিকারী। আমি আসলে কাউকে ছোট করার জন্য লিখছি না। বাস্তবতা উপলব্ধি করেই লিখছি। ব্যতিক্রম হয়তো কেউ কেউ থাকতে পারেন। হায়ার লেভেলের কোন স্টুডেন্ট বা বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরুনো কাউকে যদি জিজ্ঞেস করেন কী কী কাজ পারেন দেখবেন বেশির ভাগই দেখবেন হাতে কলমে কিছু পারেন না। আবার অনেক কিছু পড়েছেন। যেই বিষয়টি নিয়ে পড়েছেন সে বিষয়টি সরেজমিনে দেখার হয়তো সুযোগ ছিলো কিন্তু দেখেন নি। বিষয়টি শুধু বইয়ের পাতা থেকে মুখস্থ করে শিখেছেন। যেমন পোষাক শিল্প সম্পর্কে কম বেশি সবাই পড়েছেন। কিন্ত কজন খুঁজে পাবেন যারা পোষাক শিল্পে কাজ করেনি এমন জীবনে একবারের জন্য হলেও কোন একটি পোষাক কারখান ঘুরে দেখেছেন? এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটি উক্তি মনে পড়ে গেলো। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পড়াচ্ছেন। রিভার সম্পর্কে অনেক কিছু পড়ালেন। শিক্ষক পড়া শেষে ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন বালক তুমি কি রিভার দেখিয়াছো? বালক গঙ্গা নদীর তীরে বসিয়াই বলিল না স্যার কখনো রিভার দেখিনি।

বাস্তবে এই অবস্থা এখনও তেমন বদলায়নি।

আমরা ঘরে বসে নায়গ্রা ফলসের জলের শব্দ শুনি ভার্চুয়াল জগৎ তৈরি করে। কিন্তু কর্ণফুলীতে কিম্বা নিজের জেলার বা বাড়ির পাশের নদীটাতে কি কখনও নৌকা ভ্রমণ করি!

সাঁতারের গুরুত্ব আমরা তুলে ধরি কিন্তু সাঁতার শিখানোর জন্য কি আমরা শিক্ষার্থীদেরকে উদ্বুদ্ধ করি? শুধু সাঁতার না জানার কারণে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়।

সাপ সম্পর্কে যথাযথ ধারণা না থাকায় নিরবিষ সাপের কামড়েও মানুষ মরছে। আবার কৃষকের জন্য খুবই উপকারী দাঁড়াস সাপকে স্বয়ং কৃষকই মেরে ফেলছে।

স্কিল বেইজড শিক্ষা যতদিন হবে না ততদিন এই অবস্থাই চলতে থাকবে। জাপানে একজন শিক্ষার্থীকে যখন করতে শিখায় তখন আমরা সমক্লাসের শিক্ষার্থীকে পড়তে শিখাই। জাপান একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। ঐ দেশে প্রাথমিকেই একজন শিক্ষার্থীকে দুর্যোগ কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে সেটা হাতেকলমে শিখানো হয়। জাপানের একজন শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার সাথে সাথে অনেক বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় ওরা গবেষণা করার জন্য। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা তো দূরে থাক গাইড বই মুখস্থ করে সার্টিফিকেট অর্জন করে।

জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনটি দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি হচ্ছে কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা। এই দক্ষতা অর্জনের জন্য মাতৃভাষা ছাড়াও অন্যান্য ভাষায় দক্ষতা প্রয়োজন একই সাথে কম্পিউটার লিটারিসিও ভালো ভাবে থাকতে হয়। দ্বিতীয় দক্ষতার কথা যদি বলি সেটা হচ্ছে ক্রিটিকাল থিংকিং। অর্থাৎ যে কোনো বিষয়ের গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ ধর্মী চিন্তা করতে পারা। এই দক্ষতা তাদেরই থাকে যাদের জ্ঞানের পরিধি বহুদূর বিস্তৃত। আর তৃতীয় দক্ষতা হচ্ছে প্রবলেম সলভিং স্কিল বা সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা। এটি করতে দুটি জিনিস প্রয়োজন। একটি হচ্ছে সমস্যা সমাধানের টুলস বা হাতিয়ারগুলো আয়ত্তে থাকা দ্বিতীয়ত নিজেকে সক্রিয় রাখতে পারা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি পাচ্ছি আমাদেরকে যথাযথ ভাবে দক্ষ করে তুলতে? যদি না পারি তা হলে বুঝতে হবে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ মানবসম্পদকে আমরা যথাযথ ভাবে বিকশিত করতে পারছি না। যে কারণে আমাদের যতদূর যাওয়ার কথা ছিলো আমরা ততদূর যেতে পারছি না। আমরা থেকে যাচ্ছি অপরিপক্ক।

তাই আবারও বলি যেটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে দক্ষতা নির্ভর শিক্ষা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতুমি নীল যমুনার জল
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত