ত্যাগ ও সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে

চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সেনাপ্রধান

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান কাজ হল দেশের স্বার্বভৌম রক্ষা করা। এর পাশাপাশি আমরা আরো অনেকগুলো দায়িত্ব পালন করছি। দেশের অনেকগুলো উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। দুর্যোগ মোকাবেলায় যখন আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, আমরা কাজ করি। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব, পার্বত্য চট্টগ্রাম সেগুলোও আমরা যথাযথভাবে করে যাচ্ছি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমরা কাজ করছি। এটা অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের বিষয় যে, বাংলাদেশ জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে ১ নম্বরে অবস্থান করছে। এই অর্জন একদিনে হয়নি। এটির জন্য আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি, অনেক ত্যাগ করেছি। সেজন্য আমরা এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। এটা ধরে রাখতে হবে। ত্যাগ ও সেবার মানসিকতা নিয়ে সর্বস্তরের সকলকে কাজ করতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪টি ইউনিটের রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের এমআর চৌধুরী প্যারেড গ্রাউন্ডে সেনাবাহিনী প্রধান উপস্থিত হলে জেনারেল অফিসার কমান্ডিং আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ২৪ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার চট্টগ্রাম তাকে অভ্যর্থনা জানান। এসময় অধিনায়ক, ১৮ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির নেতৃত্বে একটি চৌকষ দল কুচকাওয়াজ প্রদর্শন এবং সেনাবাহিনী প্রধানকে সালাম প্রদান করেন। আইএসপিআর জানায়, গৌরবোজ্জল ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক ইউনিটসমূহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা দেশমাতৃকার সেবায় বিশেষ অবদান এবং বিবিধ প্রশিক্ষণ ও অপারেশনাল কর্মকাণ্ডে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরুপ একটি ইউনিট বা রেজিমেন্টকে রেজিমেন্টাল কালার প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১টি ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ১টি ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, ২টি পদাতিক ব্যাটালিয়ন কালার প্যারেডে অংশগ্রহণ করে এবং প্রধান অতিথির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেজিমেন্টাল পতাকা গ্রহণ করে।

এদিকে রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠানের পর ভাটিয়ারীহাটহাজারী লিংক রোডের খিল্লাপাড়ায় সেনাবাহিনী প্রধান আর্মি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন। এসময় তিনি বলেন, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নয়নের লক্ষে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫টি আর্মি মেডিকেল কলেজ এবং ৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম একযোগে উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনী প্রধান আর্মি মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে জেনারেল অফিসার কমান্ডিং আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ২৪ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার চট্টগ্রাম এরিয়া, চেয়ারম্যান গভর্নিং বডি, আর্মি মেডিকেল কলেজ চট্টগ্রামসহ সেনা এবং নৌ বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন পদবির সেনা সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠানে সেনা প্রধান আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের লক্ষে এবং পোর্সেস গোল২০৩০ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা, নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতা সার্বক্ষণিকভাবে করে যাচ্ছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে সেনা প্রধান বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ট নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন স্বার্বভৌম এই দেশ পেয়েছি। আমি গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ৩০ লক্ষ শহীদ, সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি, যাদের আত্মত্যাগ দিয়েছে আমাদের স্বার্বভৌম দেশ। আমি বিশেষভাবে স্মরণ করতে চাই, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল শহীদদের। যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী সময়েও দেশে এবং বিদেশে আমাদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি, আমাদের সকল পূর্বসুরীদের যাদের নিরলস পরিশ্রম এবং একান্ত প্রচেষ্টায় আজকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার অর্জিত স্থানে দাঁড়িয়ে আছে।

সেনা প্রধান বলেন, রেজিমেন্টাল কালার একটি গর্বের বিষয়। এই রেজিমেন্টাল কালার প্রাপ্তি একটি কষ্টসাধ্য বিষয়। এটি অর্জনের জন্য একটি মাপকাটি আছে। অনেকগুলো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এই কালার প্রাপ্তি হয়েছেন। তাই এই অর্জনের জন্য যারা কালার প্রাপ্তি হয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। রেজিমেন্টাল কালার সম্মানের বিষয়। আপনাদের মনে রাখতে হবে এই সম্মান ধরে রাখতে হলে আপনাদের ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। নিস্বার্থভাবে আপনাকে কাজ করতে হবে। সেনা প্রধান সকলকে ঊর্ধতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা এবং ভাতৃত্ববোধ বজায় রেখে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুশৃক্সখল, দক্ষ ও যোগ্য সেনাসদস্য হিসেবে গড়ে উঠার নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই সাথে সবাইকে পেশাদারিত্বের প্রত্যাশিত মান অর্জনের মাধ্যমে আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যে কোন হুমকি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা প্রদান করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির রোডমার্চে চট্টগ্রামে পাল্টা কর্মসূচি নেই আওয়ামী লীগের
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬