তৈরি পোশাক খাতে সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নিন

| মঙ্গলবার , ১ নভেম্বর, ২০২২ at ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে আবারও ভাটা পড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, এ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দেশের পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানির বিপরীতে আয় হয়েছে ৩৯০ কোটি ডলার। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৫ ডলার। সেই হিসেবে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছে।
গতকাল দৈনিক আজাদীতে চট্টগ্রামের তৈরি পোশাক খাত সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ‘আড়াই হাজার কোটি টাকার তৈরি পোশাক আটকা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের ৫০টির বেশি গার্মেন্টস কারখানার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার তৈরি পোশাক স্টকলট হয়েছে। প্রায় প্রতিটি কারখানার গুদামে আটকা পড়েছে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক। বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার দেওয়ার পরও অভ্যন্তরীণ বাজারে ধস নামায় নিচ্ছেন না এসব পণ্য। একই সাথে বিদেশে পোশাকের বিক্রি কমে যাওয়ায় প্রতিটি কারখানায় কোটি কোটি টাকার অর্ডার কমে গেছে। এতে করে চট্টগ্রামের গার্মেন্টস মালিকরা সংকটে পড়েছেন।
সামপ্রতিক পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে একাধিক গার্মেন্টস মালিক বলেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অন্তত ত্রিশ শতাংশ অর্ডার কমে গেছে। শত শত কোটি টাকার পণ্য স্টকলট হওয়া কিংবা অর্ডার বাতিল হওয়ার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মাঝে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট কারখানাগুলোকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। বিজিএমইএর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দেশের গার্মেন্টস সেক্টরে দুর্দিন দেখা দিয়েছে। করোনাকালের ভয়াবহ পরিস্থিতির চেয়ে বর্তমান সংকট প্রকট মন্তব্য করে একাধিক গার্মেন্টস মালিক বলেছেন, পোশাক তৈরি করে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। শিপমেন্টের আগে বায়ার বলছেন পোশাক নিতে পারবেন না। বাজারে ক্রেতা নেই। এতে করে শত শত কোটি টাকার পোশাক তৈরি করেও ক্রেতার অনাগ্রহে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে রপ্তানির সাথে জড়িত গার্মেন্টসগুলোতে প্রচুর পণ্য স্টকলট হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার তৈরি পোশাক স্টকলট হয়েছে বলে বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বা ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল বিজিএমইএ। ২০১৪ সালে এই লক্ষ্য ঘোষণার পর একটি পথনকশাও তৈরি করেছিল সংগঠনটি। যদিও শেষ পর্যন্ত করোনাসহ নানা কারণে লক্ষ্যমাত্রাটি অর্জিত হয়নি। এদিকে আবার জুলাই মাসে রাজধানীর গুলশানের এক অভিজাত হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে টেকসই পোশাকশিল্প গড়তে ২০টি লক্ষ্য ঘোষণা করেছে বিজিএমইএ। ২০৩০ সালের মধ্যে এসব লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চায় সংগঠনটি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে পোশাকের রপ্তানি ১০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া। এ সময় জনগণ, অন্তর্ভুক্তিকরণ, স্বচ্ছতা, অবকাঠামো, উদ্ভাবন, সার্কুলারিটি, বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক, ব্র্যান্ড বাংলাদেশ ও পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি বিজিএমইএর নতুন লোগো উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ২০৩০ সালের মধ্যে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। আর এ সময় পোশাকশ্রমিকের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৬০ লাখে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তার মানে ১০ হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্য অর্জনে আগামী ৯ বছরের মধ্যে বাড়তি ৫ হাজার ৭৮৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে হবে।
এমন লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হওয়া তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানিতে সংকট সত্যিই দুঃখজনক।
ঢাকা চট্টগ্রামের এমন শোচনীয় অবস্থার কথা উল্লেখ রয়েছে আজাদীর প্রতিবেদনে। একাধিক গার্মেন্টস মালিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, প্রতিটি গার্মেন্টসের গুদামে প্রচুর রপ্তানিযোগ্য পণ্য আটকা পড়েছে। ক্রেতারা এসব পণ্য নিচ্ছেন না। কবে নেবেন তা-ও ঠিক নেই। বাজার ঠিক হলে নেবেন বলে আশ্বাস দিলেও কবে বাজার ঠিক হবে বা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। দেশের ছয় হাজারেরও বেশি গার্মেন্টসের মধ্যে নানা কারণে ইতোমধ্যে তিন হাজারের মতো বন্ধ হয়ে গেছে। যে তিন হাজার চালু রয়েছে সেগুলোও বর্তমানে অর্ডার বাতিল এবং স্টকলটের সমস্যায় পড়েছে। সারা দেশের এক হাজারের বেশি কারখানায় স্টকলটের ধাক্কা লেগেছে বলে বিজিএমইএর নিকট জানানো হয়েছে।
সংকট নিরসনে চট্টগ্রামের গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাবি করেছেন মালিকরা। এছাড়া প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বৈদেশিক মুদ্রার আকাল ঘোচাতে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রপ্তানি বাড়াতে পণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধআলজিরিয়ার জাতীয় দিবস