তেলের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জনজীবনে

| সোমবার , ৮ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ

কোনো ধরনের গণশুনানি এবং পূর্বালোচনা ছাড়াই হঠাৎ ঘোষণায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। দৈনিক আজাদীসহ দেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) দিনগত রাত ১২টার পর থেকে নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে লিটার প্রতি ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। রাত ১০টায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন কর্তৃক পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতদিন ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা, পেট্রোল ৮৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। এখন ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫% বেড়েছে। পেট্রোলের দাম ৫১.১৬% বেড়েছে। আর অকটেনের দাম বেড়েছে ৫১.৬৮%।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈশ্বিক বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ার কারণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি), ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) এ পরিশোধিত এবং আমদানি/ক্রয়কৃত ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের মূল্য সমন্বয় করে ভোক্তা পর্যায়ে পুনঃনির্ধারণ করা হলো। এ দিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জনবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় আমজনতার স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। যতদিন সম্ভব ছিল, ততদিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির চিন্তা করে নাই। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই কিছুটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে হচ্ছে। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কমিয়ে দিয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনরায় বিবেচনা করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জনজীবনে। জানা যায়, ইতোমধ্যে পণ্য পরিবহণে বেড়েছে ভাড়া। সেই সাথে বেড়েছে বিভিন্ন প্রকার সবজি ও মাছের দাম। এভাবে পূর্ব কোন ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে পেট্রোল-ডিজেল-অকটেনের দাম, ব্যাপক আকারে বাড়ানো সমর্থন করছেন না সাধারণ মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘তেলের দাম বাড়ানোর বহুমুখী প্রভাব পড়ে। যে দাম বাড়ে তারচেয়ে অনেক বেশি চাপ জনগণের ওপর পড়বে। যেমন, যতটা তেলের দাম বাড়বে তারচেয়ে বেশি পরিবহন ব্যয় বাড়বে, পণ্য পরিবহণের খরচ বৃদ্ধির কারণে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। কিছুদিন ধরে তো দাম বেড়েই চলেছে, সেটা আরেক দফা বাড়বে। যা বহন করার অবস্থায় বাংলাদেশের মানুষ নেই এখন। এর বাইরে অর্থনীতির ওপরও চাপ পড়বে। বিশেষ করে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা চাপে পড়বেন। এবার বৃষ্টি কম হয়েছে, কৃষককে সেচ দিতে হচ্ছে। ফলে, ফসল উৎপাদনের খরচও বেড়ে যাবে। সরকারের একটা বড় বিকল্প ছিল তেলের ব্যবহার কমানো। সে ধরনের কোনো চেষ্টা সরকার করেনি।’
যেহেতু আমাদের দেশের অর্থনীতি এখনো অনেকটা কৃষিনির্ভর। তাই কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি কোন সুখকর বিষয় নয়, হতে পারে না। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দু’দুবার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের কপালে নতুন করে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। এদিকে পেট্রোল ও অকটেনের দাম বৃদ্ধির ফলে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যয়ও অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। মোটা দাগে বলতে গেলে জ্বালানি তেলের এই মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন পত্রিকান্তরে বলেন, ‘এই দাম যেহেতু প্রশাসনিকভাবে নির্ধারণ করা হয়, তাই এটা কখনো বাড়ানো যৌক্তিক নয়। এখানে বেশি স্বেচ্ছাচারিতা করা হয়েছে। কোনো ধরনের নীতি এখানে নেই। এর জন্য বিইআরসির মতো সংস্থার মাধ্যমে দাম বাড়ানো-কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কিংবা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তখন ভর্তুকি দিতে হবে। আমরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছি যে দাম নির্ধারণে কোনো নির্দিষ্ট নীতি নেই। এর জন্য একটা নীতিমালা থাকা দরকার।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে