তেলাপিয়া-পাঙাসে বাঙালি!

শেখ আবদুল মুকিত | শুক্রবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২১ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

বাঙালি ঘরে জন্ম হওয়ায় বাঙালি হিসেবেই যে মরতে হবে, এতে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। কারণ, জাতের কখনো পরিবর্তন হয় না। কিন্তু বাঙালি হওয়ার বৈশিষ্ট্যগুলো এই জীবনে বারবার রূপ বদল করতে দেখলাম। এক সময় বলা হতো, ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’। হিন্দি-উর্দুভাষীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলতে শুনতাম, ‘পানি কা কীড়া খানেওয়ালা বাংগালি’, যার অর্থ দাঁড়ায়, পানির পোকাখেকো বাঙালি। তাঁদের ভাবসাব দেখে মনে হতো, যেন পানির পোকা খাওয়ার চেয়ে স্থলচর দু-চার পেয়ে জন্তু-জানোয়ার খাওয়া অনেক গর্বের। অবশ্য আফ্রিকার কিছু আদিবাসী সুবর্ণ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মাছ ধরে খায় না। কারণ, এতে নাকি বুনো জন্তু-জানোয়ারদের সাথে লড়াই করে, তাদের বধ করে খাওয়ার পৌরূষ, শৌর্য-বীর্য নেই! অতএব, তাদের কখনো মাছে-ভাতে বাঙালি হওয়ার সুযোগ নেই।
গত তিন-চার দশক ধরে মাংস খানেওয়ালা অনেক হিন্দি-উর্দুভাষীর মধ্যে একটা বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে। তাঁদের মাথায় ঢুকেছে “রেড মিট” খাওয়া স্থাস্থ্যের জন্য হানিকারক। তাই তাঁরা এখন “পানির পোকা” মাছ খাওয়া শুরু করেছেন উচ্চ মাত্রায়! রুটির সাথে তো মাছ ঠিক যায় না। তাহলে কি ধরে নেবো, তাঁরা “মাছে ভাতে বাঙালি” হওয়ার চেষ্টা করছেন! সে চেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। কারণ, বাঙালি হওয়া যায় না, বাঙালি হয়ে জন্মাতে হয়।
কিন্তু মুশকিল হয়েছে আমাদের মতো আপাদমস্তক বাঙালিদের, যাদের এক সময় সত্যিই পরিচয় ছিল “মাছে ভাতে বাঙালি” বলে। রুই, কাতলা, মৃগেল, শিং, মাগুর, কৈ, মাছের রাজা ইলিশ – বাঙালির পাতের এসব নিত্য অনুসঙ্গ এখন দূর অস্ত! ওরা এখন জাতে উঠেছে। যে ইলিশ এক সময় কারো চুলকুনি হলে বাড়িতে রান্না হতো না, হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারদের নিষিদ্ধ তালিকার শীর্ষে ছিল যার অবস্থান, সেই ইলিশকে এখন অনেক বাঙালি “শেষ ইচ্ছার” তালিকায়ও রাখার সাহস পান না। কিন্তু তাই বলে কি বাঙালি এখন মাছ খাচ্ছে না? নিশ্চয়ই খাচ্ছে। বাঙালির বাঙালিপনা এখন বজায় থাকছে, ফার্মের তেলাপিয়া আর পাঙাস মাছের কল্যাণে। তাই এখন আর “মাছে ভাতে বাঙালি” না বলে বরং “তেলাপিয়া-পাঙাসে বাঙালি” বললেই বোধ হয় সমুচিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ-শ্রীলংকা ওয়ানডে সিরিজের সূচি শিগগিরই
পরবর্তী নিবন্ধরোদবৃষ্টি