তৃতীয় দিনেও অবরোধ বিক্ষোভ

ঘাতক বাস চালক গ্রেপ্তার, শিক্ষকের অপসারণসহ ১০ দফা দাবি উপচার্য ভবনে ৩০ মিনিট তালা লাগিয়ে চুয়েট শিক্ষাথীদের বিক্ষোভ দুই শিক্ষাথী নিহতের ঘটনা

রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ

চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ঘাতক শাহ আমানত বাসের চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার নাম তাজুল ইসলাম (৪৮)। তার বাড়ি উপজেলার চন্দ্রঘোনাকদমতলী ইউনিয়নের আধুরপাড়া গ্রামে। চালক গ্রেপ্তারের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবহিত করা হলে, এতে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে বাকী দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান তারা।

রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় জড়িত বাস চালককে নগরীর কোতোয়ালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তাকে এবং বাসের হেলপারকে বিবাদী করে সড়ক দুর্ঘটনা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এই মামলায় চালককে আইনি প্রক্রিয়া শেষে জেল হাজতে প্রেরণ করা হবে। এদিকে এই ঘটনায় তীব্র রোদ উপেক্ষা করে তৃতীয় দিনের মতো চট্টগ্রামকাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। এর আগে ৯ দফা দাবির কথা বলা হলেও তার সাথে আরও এক দফা দাবি যোগ করেছেন তারা। আন্দোলন নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে এমন দাবিতে সুমন দে নামে চুয়েটের এক শিক্ষকেরও অপসারণ দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দেওয়া এই দশ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

সরেজমিনে গতকাল বুধবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, এদিন দশটায় রাস্তায় গাছ ফেলে, ব্যারিকেড দিয়ে ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। সেখানে তাদের দাবির স্বপক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ছিল। এর আগে ঘটনার পর সোমবার বিকাল থেকে রাত সাড়ে ৯টা এবং মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রাখে।

এর আগে মঙ্গলবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে দাবি তুলে ধরেন। পরে রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় আসেন চুয়েটের উপাচার্য রফিকুল আলম, উপউপাচার্য জামাল উদ্দিন আহমেদ, রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির প্রমুখ। এ সময় রেজিস্ট্রার শিক্ষার্থীদের দাবি মানা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জানান। শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের মেনে নেওয়া দাবি রাতের মধ্যে লিখিত আকারে প্রকাশের শর্তে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করে কাপ্তাই সড়ক ছেড়ে দেন।

এদিকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় দশ দফা দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। পরে সেখানে শুকনো কাঠের স্তূপে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে উপাচার্য ভবনে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন চুয়েট উপাচার্য ড. রফিকুল আলমসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক। এ প্রসঙ্গে চুয়েট পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ জাবেদ মিয়া বলেন, চুয়েটের উপচার্যের ভবনে তালা লাগিয়ে দেওয়ার সংবাদ পায়। আমরা সেখানে যায়নি। উপচার্যের অনুরোধে ৩০ মিনিট পর শিক্ষার্থীরা তালা খুলে দেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রশাসন তাদের কিছু দাবি মেনে নিলেও সব দাবির সঙ্গে একমত হতে পারেনি। এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকেরা আমাদের কিছু দাবি মেনে নিয়েছেন বলে মৌখিকভাবে বলেছেন। বিষয়টি আমরা আজ রাতের মধ্যে লিখিতভাবে দেখতে চাই। নিহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাস মালিক সমিতি দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এ ছাড়া আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৫টি বাস ও ৪টি অ্যাম্বুলেন্সের দাবি জানালেও তারা আমাদের ১টি বাস ও ১টি অ্যাম্বুলেন্স প্রদানের বিষয়ে জানিয়েছে। শাহ আমানত ও এ বি ট্রাভেলসের বাস এ সড়কে চলবে না বলে প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু এদের রুট পারমিট বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি আমরা মানবিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুমন দের বরখাস্ত এবং পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলাম। সে বিষয়েও আমরা কোনো ধারণা পাইনি।

তিনি আরও বলেন, পণ্যবাহী ট্রাকের কথা বিবেচনা করে এবং প্রশাসনের মেনে নেওয়া দাবি রাতের মধ্যে লিখিত আকারে প্রকাশ করার শর্তে আমরা রাতে রাস্তা ছেড়ে দিই। আমাদের বাকি দাবিগুলো আদায়ের লক্ষ্যে আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১০টা থেকে আমরা আবারও রাস্তায় অবস্থান নিয়েছি। সব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসপরীক্ষা বর্জন করে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসেছিলাম। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে যেসব আমাদের হাতে আছে, সেগুলো আমরা মেনে নিয়েছি। দ্রুত সেগুলোর বাস্তবায়ন করা হবে। তবে বেশ কিছু দাবি রয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ। সেগুলোর জন্য আমাদের সময় দিতে হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে আলোচনা করছি। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা আলোচনা করছি। আশা করি আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হবে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার আনুমানিক বেলা সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার জিয়ানগরে বাসের ধাক্কায় মারা যান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় শিক্ষার্থী শান্ত সাহা এবং একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক হোসাইন। এ ছাড়া আহত হন একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বন্দর দিবস আজ
পরবর্তী নিবন্ধসিডিএ’র নতুন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ