ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রাম। এই ইউনিয়নের মধুমতী নদী খুলনা ও ফরিদপুর জেলাকে ভাগ করেছে। টুঙ্গিপাড়া গ্রাম আজ যার জন্য সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
‘শেখ‘ শব্দটি এসেছে আরবী ভাষা থেকে, যার অর্থ শক্তিশালী, বলবান, ক্ষমতাধর সম্পন্ন। শেখ বোরহান উদ্দিন নামে এক ধার্মিক পুরুষ শেখ বংশের গোড়াপত্তন করেন। শেখ বোরহান উদ্দিনের পরে তিন চার পুরুষের আর কোনও ইতিহাস পাওয়া যায় নি। এরপর দুই এক পুরুষ পর দুই ভাই শেখ কুদরত উল্লাহ ও শেখ একরাম উল্লাহর পরিচয় পাওয়া যায়। তাদের ছিল বিরাট জমিদারি ও আভিজাত্য। প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগে শেখ কুদরত উল্লাহ টুঙ্গিপাড়ায় অনন্য স্থাপত্য শিল্প ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন যা এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই দুই ভাইয়ের মৃত্যুর দুই এক পুরুষ পর শেখ বংশের পতন শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু ছিলেন ওদের বংশধর।
১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ, বাংলা ১৩২৬ সালের ৩রা চৈত্র বুধবার, রাত ৮ টায় শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের ঘর আলো করে একটি শিশুর জন্ম হলো। বাবা আদর করে নাম রাখলেন খোকা। ভালো নাম শেখ মুজিবুর রহমান। ছেলেবেলা থেকেই মানুষের প্রতি মুজিবের ছিল অনেক ভালোবাসা, দরদ। মানুষের দুঃখে, বিপদে সবসময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। মুজিবের সাহসের জন্য অনেক বড় বড় নেতাদের প্রিয় ছিলেন তিনি। দেশের মানুষের অবস্থা বদলানোর জন্য তিনি প্রতিবাদ করেছেন, জেল খেটেছেন। এই মার্চ মাসে মুজিবের জন্ম, এই মাসে তিনি এক ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালির মনে প্রেরণা যুগিয়েছেন, আবার এই মাসেই তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। যার ফলে বাঙালি একত্রিত হয়ে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে পাক বাহিনীকে এই বাংলা থেকে বিতাড়িত করে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি ভূখণ্ডের জন্ম হয়েছে।
যুগে যুগে মানুষের কল্যাণের জন্য কতো মহামানব এসেছেন এই ধরায়। তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমলের শাসন শোষণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য কীর্তিমানেরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। তাঁরা মানুষের হৃদয়ে আজো চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির প্রেরণা, বাঙালির স্বপ্নদ্রষ্টা।