তীব্র রোদেও হাঁটু পানি

গত কয়েক বছরে এত বেশি জোয়ারের জল উঠেনি প্রধান খালগুলোতে স্লুইচ গেট না থাকাতেই এ অবস্থা নগরীর বেশিরভাগ নিচু এলাকায় দুর্ভোগ

আজাদী প্রতিবেদন ম | শুক্রবার , ১৫ জুলাই, ২০২২ at ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ

সময়টা দুপুর। চারদিকে তীব্র রোদ। তখনও বৃষ্টি হয়নি। তবুও গতকাল বৃহস্পতিবার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ শহরে অনেক নিচু এলাকায় ছিল হাঁটু থেকে প্রায় কোমর সমান পানি। পূর্ণিমার প্রভাবে কর্ণফুলী নদীতে বেড়েছে জোয়ারের পানি। শহরের প্রধান খালগুলোতে স্লুইচ গেট না থাকায় জোয়ারের অতিরিক্ত পানি ঢুকে পড়ে নগরে। এতেই প্লাবিত হয় নিম্নাঞ্চল। এ সময় বাসা-বাড়ি, হাসপাতাল, দোকানপাটসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে পড়ে। ফলে দুর্ভোগ বাড়ে নগরবাসীর। স্থানীয় লোকজনের দাবি, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় জোয়ারের পানি ওঠে। তবে গতকালকের জোয়ারের পানির পরিমাণ গত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি ছিল।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল কর্ণফুলী নদীতে প্রথম জোয়ার শুরু হয় সকাল ৭টা ২৩ মিনিটে। ভাটা শুরু হয় ১টা ২ মিনিটে। নিয়ম অনুযায়ী, যখন ভাটা শুরু হয় তখন জোয়ার থাকে সর্বোচ্চ উচ্চতায়। ভাটা শুরু হলেও শহর থেকে পানি নামতে নামতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। অর্থাৎ একটার পর থেকে প্রায় সাড়ে ৩টা পর্যন্ত জোয়ারের পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে।
এ সময়টা মধ্যাহ্ন ভোজের হওয়ায় দুর্ভোগ বেশি হয়েছে। বাসা-বাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকে যাওয়ায় রান্না করতে পারেনি অনেক পরিবার। বস্তি এলাকায় এ ভোগান্তি ছিল বেশি। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা ও সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাথ তঁঞ্চঙ্গ্যা দৈনিক আজাদীকে জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার কর্ণফুলী নদীতে দ্বিতীয় ভাটা শুরু হয় দুপুর ১টা ২ মিনিটে। এ সময় পানির উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ৪১ মিটার। এর আগে বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ৪৭ মিনিটে প্রথম ভাটা শুরু হয়। তখন পানির উচ্চতা ছিল ৪ দশমিক ৭৬ মিটার। এ দিকে আজ শুক্রবার দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে দ্বিতীয় ভাটা শুরু হবে। এ সময় পানির উচ্চতা থাকবে ৫ দশমিক ৪৩ মিটার। এ ছাড়া গত রাত ১টা ৩২ মিনিটে প্রথম ভাটা শুরু হয়। তখন পানির উচ্চতা ছিল ৪ দশমিক ৮৬ মিটার।
গতকাল শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চাক্তাই-রাজাখালী রোড, পূর্ব বাকলিয়া, ইসমাইল ফয়েজ রোড, আবু জহুর রোড, মিয়া খান নগর মাদ্রাসা রোড, পাথরঘাটা আশরাফ আলী রোড, খাতুনগঞ্জ ও আছাদগঞ্জের মাঝামাঝি চাঁন মিয়া লেনে জোয়ারের পানি উঠেছে। এর মধ্যে মিয়াখান নগর মাদ্রাসা রোডে প্রায় কোমর সমান পানি হয়েছে। এ ছাড়া বাকলিয়ার বাইদ্দার টেক, ইছহাকের পুল, তক্তার পুল এলাকায় পানি উঠে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বৃষ্টি নাই। তবু চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় এত পানি দেখে অবাক হতে হয়েছে। ঘরের নিচতলায় ২ ফুট পানি ঢুকেছে। অতীতে যে পানি উঠতো তার চেয়ে এবার ৬ ইঞ্চি বেড়েছে। দুপুরের রান্নার সময় হওয়ায় মানুষের কষ্ট হয়েছে। অনেকে রান্না করতে পারেনি। কলোনি ও বস্তি এলাকায় এ সমস্যা বেশি ছিল।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রতি বর্ষায় জোয়ারের ধাক্কায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আজকে (গতকাল) রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায়ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে অধিকাংশ নিচু এলাকায় হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক নিচু এলাকার দোকান-গুদামে পানি ঢুকেছে। ব্যবসায়ীরা জোয়ারের পানি থেকে বাঁচতে দোকান-গুদামের নিচ তলা উঁচু করেন। তারপরও প্রতি বছরই বাড়ছে জোয়ারের পানির উচ্চতা। জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পেতে ২০১৮ সালে সিডিএ (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজ শুরু করলেও এখনো সে কাজ শেষ হয়নি। উল্টো চাক্তাই খালের একাংশ ভরাট করে বাঁধ দেয়ার ফলে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। তাই আমরা ব্যবসায়ীরা দ্রুত স্লুইচ গেট নির্মাণ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।
এ দিকে চকবাজারের মুহাম্মদ আলী শাহ দরগাহ লেন এলাকায় দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত হাঁটুর অর্ধেক পানি ছিল বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হামিদ। হালিশহর এমপিবি গেট, নয়ার হাট বিদ্যুৎ অফিসের সামনের সড়ক ও বন্দরটিলার বিভিন্ন নিচু এলাকাও তলিয়ে যায় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা হাসান। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পুরাতন ভবনের নিচতলায়ও পানি উঠে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী রাসেল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৃষ্টি হলেও কমেনি গরমের তেজ
পরবর্তী নিবন্ধচামড়া শিল্পের আন্তর্জাতিক সনদ পেলেই চামড়ার দাম বেড়ে যাবে : বাণিজ্য সচিব