লোহাগাড়ায় প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার রিকশা ও টমটমের ব্যাটারি চার্জে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎ। এসব ব্যাটারি চার্জে আবার নেয়া হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, বৈধ সংযোগে বিল কমাতে কৌশলে করা হচ্ছে মিটার টেম্পারিং। উপজেলায় বিদ্যুৎ চুরির অন্যতম প্রধান কারণ নিষিদ্ধ ব্যাটারি চালিত রিকশা ও টমটম বন্ধ না করলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের নানা সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা কোনো কাজে আসবে না বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, লোহাগাড়া উপজেলা সদরসহ ৯ ইউনিয়নে প্রায় ৩ হাজার ব্যাটারি চালিত রিকশা ও টমটম চলাচল করে। এসব যানবাহন রাখা ও চার্জ দেয়ার জন্য রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ২ শতাধিক গ্যারেজ। সিংহভাগ গ্যারেজেই নিষিদ্ধ এসব রিকশা ও টমটম চার্জ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। অনেক স্থানে চলছে মিটার টেম্পারিংয়ের মতো ঘটনাও। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া সীমানায় এসব রিকশা ও টমটম চলাচল করছে দাপটের সাথে। এসবের কারণে দুর্ঘটনার পাশাপাশি বাড়ছে যানজট, ভোগান্তি। এছাড়া সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন করে ব্যাটারি চালিত রিকশা-টমটম আমদানি বন্ধ ও পুরনোগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়ার কথা থাকলেও গত কয়েক বছরেও তা কার্যকর হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, লোহাগাড়া সদরের আশপাশের গ্যারেজে প্রতিটি ব্যাটারি চালিত রিকশা ও টমটম চার্জ করতে চালককে গুণতে হয় ১শ টাকা। গ্রামাঞ্চলে তা পড়ে ৮০ টাকা। প্রতিটি রিকশা ও টমটমের জন্য প্রয়োজন ৪টি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি। আর প্রতিসেট ব্যাটারি চার্জের জন্য ১ হাজার ওয়াট হিসেবে ৫ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। পরিপূর্ণ চার্জ হতে সময় লাগে ৭-৮ ঘণ্টা। সে হিসেবে উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার রিকশা ও টমটমের ব্যাটারি চার্জের জন্য প্রতিদিন জাতীয় গ্রিড থেকে প্রায় ১৫ কিলোওয়াট এবং মাসে ৪৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু সিংহভাগ গ্যারেজে ব্যাটারি রিচার্জে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে। এতে একদিকে বিপুল রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার, অন্যদিকে ভুতুড়ে বিলের বোঝা বহন করছে সাধারণ গ্রাহকরা। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে আবাসিক বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে রিকশা ও টমটমের ব্যাটারি চার্জ দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে কয়েকটি ব্যাটারি চালিত রিকশার গ্যারেজে ঘুরে ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ করার জন্য বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন। যার কারণে গ্যারেজ মালিকরা খরচ কমিয়ে বাড়তি টাকা আয়ের জন্য অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে থাকেন। তবে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার পেছনে রয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের একদল অসাধু কর্মকর্তা।
স্থানীয়রা জানায়, কাছে কোথাও যাওয়া-আসার জন্য বিকল্প কোনো যানবাহন না থাকায় বাধ্য হয়ে এসব ব্যাটারি চালিত রিকশা ও টমটমে উঠতে বাধ্য হন। এসব গাড়ি মহাসড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফলে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। স্থানীয়রা এসব যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি লোহাগাড়া জোনাল অফিসের ডিজিএম মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, উপজেলায় প্রায় ৯২ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন। প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে পাওয়া যায় অর্ধেকের কম-বেশি। রাত ১২টার পর ব্যাটারি চালিত যানবাহনগুলোতে চার্জ করার নির্দেশনা রয়েছে বলে জানায়। মিটার টেম্পারিং করে গ্যারেজে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগে পল্লী বিদ্যুতের একদল অসাধু কর্মকর্তা জড়িত থাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তবে এ ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানান।