তালেবান শাসনকে স্বীকৃতি না দিতে আহ্বান বিরোধীদের

| বৃহস্পতিবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১:৩৫ অপরাহ্ণ

আফগানিস্তানের তালেবানবিরোধী বাহিনীগুলো কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটির নতুন সরকারকে স্বীকৃতি না দিতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কাবুল দখলের তিন সপ্তাহ পর মঙ্গলবার তালেবান তাদের নতুন সরকারের ঘোষণা দেয়। খবর বিডিনিউজের।
কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটির নতুন অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভায় কোনো নারী স্থান পায়নি, কেবল তাই নয়, সরকারের সব কর্মকর্তাই এসেছে হয় তালেবান, নয়তো তাদের সহযোগী সংগঠন থেকে। যুক্তরাষ্ট্রও তালেবানের এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। পানশির প্রদেশে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই করা যোদ্ধারা মঙ্গলবার ঘোষিত সরকারকে ‘অবৈধ’ অ্যাখ্যা দিয়েছে।
মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকা অনেকে অন্তর্বর্তী সরকারে স্থান পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রও উদ্বেগ জানিয়েছে। তালেবানের মন্ত্রিসভার নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকায় থাকা মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ, মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য সিরাজুদ্দিন হাক্কানি আছেন এফবিআইয়ের ‘ওয়ান্টেড লিস্টে’। তালেবানবিরোধী ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফোর্স জানিয়েছে, তারা কাবুল দখলকারী কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটির তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভার ঘোষণাকে ‘আফগান জনগণের সঙ্গে গোষ্ঠীটির শত্রুতার স্পষ্ট চিহ্ন’ হিসেবে বিবেচনা করছে।
তালেবানের দাবি, তারা এনআরএফ কে পরাজিত করে কাবুলের উত্তরে অবস্থিত পানশিরের দখল নিয়েছে। এনআরএফ এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, তারা এখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা বিদেশি নাগরিক ও দেশের বাইরে যাওয়ার কাগজপত্র থাকা আফগানদের নিরাপদে চলে যাওয়ার পথ করে দেওয়াসহ আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে প্রস্তুত ফ্লাইটগুলোকে অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে তালেবান যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে।
তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কী কী শর্ত থাকতে পারে তা ঠিক করতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন পশ্চিমা ২০টি দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠকও করেছেন।
ঝড়ের গতিতে আক্রমণ চালিয়ে তিন সপ্তাহ আগে আফগানিস্তানের প্রায় পুরো অংশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবানকে এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। বুধবার কয়েক ডজন নারীকে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। বিক্ষোভ হয়েছে বাদাকশান প্রদেশেও। এসব বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারীরা বলছেন, তারা নারীবিহীন কোনো সরকারকে মেনে নেবে না। বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস আচরণ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তালেবান। তাদের ভাষ্য, কর্মসূচি পালনে অনুমতি নেওয়া উচিত এবং কর্মসূচিতে অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করা উচিত নয়।
মঙ্গলবার তালেবানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এক বিবৃতিতে নতুন সরকারকে শরিয়া আইন অনুযায়ী চলার আহ্বান জানিয়েছেন। আগের তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানজুড়ে কঠোর শরিয়া আইন কার্যকর ছিল। তালেবান অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ‘দৃঢ় ও চমৎকার’ সম্পর্ক চায়, আমরা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল যতক্ষণ না সেগুলোর সঙ্গে ইসলামী আইন ও আফগানিস্তানের জাতীয় মূল্যবোধের সংঘাত দেখা দেয়, বলা হয় তাদের বিবৃতিতে। তালেবানের এবারের অন্তবর্র্‌তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে তালেবানের আগের সরকারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তালেবানের ধর্মীয় নীতিনির্ধারণী অংশের ভেতর তার প্রভাব সামরিক অংশের চেয়ে বেশি। সরকার গঠন নিয়ে তালেবানের ভেতর কট্টরপন্থি ও তুলনামূলক উদারপন্থিদের মধ্যে দ্বন্‌দ্েবর পর দুই পক্ষের মধ্যে আপসের অংশ হিসেবেই হাসান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হন বলে অনেকে ধারণা করছেন। তালেবানের পক্ষ থেকে এর আগে আফগানিস্তানের সব অংশের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সরকার গঠনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইউএই যুবলীগের প্রতিবাদ সভা
পরবর্তী নিবন্ধটেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির আয়োজনে ভ্যাট মেলার উদ্বোধন