তালেবানে কে এই বারাদার

যুক্তরাষ্ট্র ধরল, যুক্তরাষ্ট্রই ছাড়িয়ে নিল

| রবিবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

মোল্লা ওমরের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠদের একজন মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারের নেতৃত্বেই হতে যাচ্ছে আফগানিস্তানে তালেবানের নতুন সরকার। গোঁড়া এই দলটির অপেক্ষাকৃত নরম নেতা হিসেবই বারাদারকে দেখে পশ্চিমারা। তালেবানের সঙ্গে চুক্তির সময় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন ফোনে, চুক্তিপত্রে সইও করেছিলেন এই বারাদারই। ২০২০ সালে কাতারের দোহায় স্বাক্ষরিত ওই চুক্তির আওতায় আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্যরা চলে যাওয়ার ক্ষণেই ২০ বছর পর ঝড়ের বেগে দেশটির ক্ষমতা দখল করে তালেবান। মিশন গুটিয়ে শেষ মার্কিন সৈন্যটি চলে যাওয়ার পর এখন এই ইসলামী গোষ্ঠী সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, আর তাতে বারদারই নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে। খবর বিডিনিউজের।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর অভিযানের মুখে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে ক্ষমতা হারানোর পর দোহায় তালেবান যে রাজনৈতিক দপ্তর চালাচ্ছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন বারাদার। ক্ষমতা পুনর্দখলের পর আফগানিস্তানে ফিরে এসে নতুন সরকার গঠনে বিভিন্ন আফগান দল-উপদলের মধ্যে আলোচনায়ও তাকেই নেতৃত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে। তালেবানে বারদারের গ্রহণযোগ্যতা পশ্চিমাদের কাছে বেশি হওয়ার কারণ ২০০১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর তার তৎপরতা। বলা হয়, তালেবানের পতনের পর দলটির যে ক্ষুদ্র অংশ পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে সমঝোতা করতে চিঠি দিয়েছিল, সেই দলে বারাদারও ছিলেন।
ক্ষমতা হারানো তালেবানের নেতা বারাদার ২০১০ সালে পাকিস্তানে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ২০০১ সালে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাদের নেতারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়েছিলেন। তখন বারাদারের পেছনে লেগেছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। এক পর্যায়ে করাচিতে তার অবস্থানের তথ্য তারা পেয়ে পাকিস্তানকে জানায়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে করাচিতে যে অভিযানে বারদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাতে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীও ছিল। এরপর টানা আট বছর তিনি পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যখন তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করতে যায়, তখন তাদের বারাদারকে প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই ২০১৮ সালে বারাদারকে মুক্তি দিতে হয় পাকিস্তানকে। মুক্ত বারাদার সোজা চলে যান দোহায়, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় নয় সদস্যের তালেবান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এই আলোচনায় নেতৃত্বে ছিলেন জালমে খালিলজাদ।
দুই বছরের আলোচনা শেষে চুক্তিতে তালেবানের পক্ষে সই করেন মোল্লা বারদার। এরপর প্রথম কোনো তালেবান নেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে সরাসরি কথা বলেন তিনি। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, পাকিস্তান, চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনায় বারদারই তালেবানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তালেবানের আমির বা শীর্ষনেতা হায়বাতুল্লাহ আখুনজাদা তাদের প্রয়াত নেতা মোল্লা ওমরের মতোই সবসময় আড়ালে থাকেন। আর সেই কারণে বারাদারই দলটির প্রকাশ্য মুখ।
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠদের একজন হিসেবেই পরিচিত বারাদার। বলা হয়, মোল্লা ওমরের ‘ব্রাদার’ হিসেবেই দলে সবাই মনে করত তাকে, তার অপভ্রংশ হিসেবে বারাদার যুক্ত হয় মোল্লা আবদুল গনির নামের পেছনে।শীর্ষ অন্য তালেবান নেতাদের মতো বারাদারের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কেও খুব কমই জানা যায়।
অন্য অনেক আফগানের মতো গত শতকের ৭০ এর দশকে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই বারদারের লড়াইয়ের হাতেখড়ি। জনশ্রুতি আছে, সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি মোল্লা ওমরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত বাহিনী চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানে যখন গৃহযুদ্ধ চলছিল, তখন মোল্লা ওমর ১৯৯৪ সালে তালেবান গঠন করেন। কান্দাহারে যে মাদ্রসা থেকে তালেবানের উৎপত্তি, তা প্রতিষ্ঠার সময় মোল্লা ওমরের সঙ্গে বারদারও ছিলেন। তাদের মধ্যে আত্মীয়তার খবরও বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাওয়া যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিউজিল্যান্ডে ছয় মাসের মধ্যে করোনায় প্রথম মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধকাবুলে উল্লাসে ছোড়া গুলিতে নিহত ১৭