তারা দিদিকে মেরে ফেলে, আমি লুকিয়ে দেখেছি

আদালতকে বলল ৮ বছর বয়সী রাজন ত্রিপুরা পল্লীর দুই কিশোরী হত্যা মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

‘দিদি ছবিরানীর কথা অনুযায়ী বাইরে খেলছিলাম। তখন আবুল হোসেনসহ তিনজন আসে। তারা আমার দিদিকে মেরে ফেলে। আমি লুকিয়ে দেখেছি।’
সীতাকুণ্ডের জঙ্গল মহাদেবপুরের ত্রিপুরা পল্লীর ছবিরানী ত্রিপুরা ও সকলতী ত্রিপুরা হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গতকাল আদালতকে এ কথা বলে ছবিরানী ত্রিপুরার ৮ বছর বয়সী ভাই রাজন ত্রিপুরা। চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হালিম উল্লাহ চৌধুরী তার সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। সাক্ষ্য দিতে গিয়ে রাজন বলে, ঘটনার সময় আমি লোকজনকে ডাকতে গেলে আসামিরা বেড়া ভেঙে পালিয়ে যায়। আমি কান্নাকাটি করি। বাবারা তখন কাজে গিয়েছিল। খবর পেয়ে তারা আসে।

দিদি হত্যার ঘটনায় রাজনের সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের পিপি অশোক দাশ। তিনি বলেন, ঘটনার পর দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামি আবুল হোসেনসহ তিনজনকে ঘরে ঢুকতে দেখে রাজন। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজনকে সাক্ষীর তালিকায় রাখেননি। ওই অবস্থাতেই ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয় আদালত। যুক্তিতর্ক শুনানিও সম্পন্ন হয়ে গেছে। রায় ঘোষণাটা শুধু বাকি ছিল। এর মধ্যে আমরা রাজনের সাক্ষ্য নিতে আদালতের কাছে আবেদন করি। আদালতও আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে।

স্বতপ্রণোদিত হয়ে রাজনের সাক্ষ্যের ব্যবস্থা করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভিকটিমের পরিবার বা অন্য কারো কথায় আমরা এটা করিনি। রাষ্ট্রপক্ষের দায়বদ্ধতা থেকে রাজনকে আদালত কক্ষে হাজির করেছি।

ট্রাইব্যুনালের পেশকার আবু সাঈদ বলেন, আগামী ৯ জানুয়ারি এ মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। সেদিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুজায়েত হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন আদালত। মূলত শিশু রাজনের দেওয়া সাক্ষ্য সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাওয়া হবে।

২০১৮ সালের ১৮ মে সন্ধায় ১৬ বছর বয়সী ছবিরানী ত্রিপুরা ও তার বান্ধবী ১৭ বছর বয়সী সকলতী ত্রিপুরার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সকলতী ত্রিপুরার বাবা পুলিন ত্রিপুরাকে সাথে নিয়ে ছবিরানীর বাবা সুমন ত্রিপুরা সীতাকুণ্ড থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, তারা সকলে কৃষিকাজ করতে পাহাড়ে যান। তখন ঘরে ছিল ছবিরানী ও সকলতী। দুপুর ১টার সময় খবর যায় ছবিরানী ও সকলতী ঘরের মধ্যে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে তারা ঘরের দিকে ছুটে যান এবং দুই কিশোরীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পুলিশ গিয়ে লাশ নিয়ে গিয়ে ময়নাতদন্ত করেন।

ময়নাতদন্তে দেখা যায়, ছবিরানীর গলার নিচে কালো দাগ এবং সকলবতীর থুতনির নিচে চারটি ছোট কালো দাগসহ গলার নিচে কালো দাগের চিহ্ন পাওয়া যায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি আবুল হোসেনসহ অজ্ঞাত তিনজন আসামি বেলা ১১টার দিকে দুই কিশোরীকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখেন। রাজন ত্রিপুরা আসামিদের ঘরে প্রবেশ করতে দেখে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া আসামিরা প্রায় সময় দুই কিশোরীকে উত্যক্ত করতেন বলে এজাহার সূত্রে জানা যায়।

আদালত সূত্র জানায়, এ মামলায় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি চার্জশিট দাখিল করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। একই বছরের ৬ আগস্ট আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করে বিচারক। ঘটনার পরদিন আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি একপর্যায়ে তিনি আদালতে ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে মোহাম্মদ রাজীব নামের অপর একজনের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করেন।

সীতাকুণ্ডের দারোগাহাটের গুলগুলা বাজার এলাকার পূর্ব পাশের সড়কের পাশের বিল থেকে কিছুদিন পর সেই রাজীবের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রেমে ব্যর্থ হয়েই দুই কিশোরীকে হত্যা করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতামিম ফিট হলেও তাড়াহুড়ো না করার পরামর্শ সুজনের
পরবর্তী নিবন্ধপ্রথম বিভাগ হকি লিগের সমাপনী আজ