তাপদাহে জনজীবনে স্বস্তি দেবে গাছ

বৃক্ষরোপণে চসিককে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

নগরের কয়েক জায়গায় গাছ কাটার প্রতিবাদে গত মাসে ‘হত্যা করা গাছেদের জন্য শোকসভা’র আয়োজন করা হয় সাধারণ জনগণের ব্যানারে। চলতি মাসের শুরুতেও গাছ কেটে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ না করা দাাবিতে আন্দোলন হয়। অতি সাম্প্রতিক সময়ের এ দুটো ঘটনা থেকে স্পষ্ট বিভিন্ন সময়ে বৃক্ষ নিধনের আয়োজন চলে নগরে। অথচ পরিবেশবাদী এবং নগরপরিকল্পনাবিদরা বারবার বলে আসছেন, গাছ লাগানো উচিত। কারণ গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। বিশেষ করে চট্টগ্রামসহ দেশজুড়ে গত কয়েকদিন ধরে টানা তাপদাহ বয়ে যাওয়ায় গাছ লাগানোর বিষয়টি আবারো সামনে আসে।

এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামসহ দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তীব্র তাপদাহে জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বৃক্ষরোপণের এ নির্দেশনা দেয়া হয়। গত রোববার এ নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দেশের সর্বত্র, বিশেষ করে নগর এলাকার উপযুক্ত স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ এবং তা পরিচর্যা বা সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। এদিকে কৃষি সম্প্রসারণের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি বয়স্ক বৃক্ষ ১০ জন মানুষের অঙিজেনে চাহিদা পূরণ করে। বাতাস থেকে ৬০ পাউন্ডের অধিক বিষাক্ত গ্যাস শোষণ ও ১০টি এসির সমপরিমাণ তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। শত শত টন কার্বন শোষণের মাধ্যমে বায়ুর দূষণরোধ ও তাপদাহ দুপুরে প্রস্বেদনের মাধ্যমে বাতাসে প্রায় ১০০ গ্যালন পানি নির্গত করে পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি আশিক ইমরান আজাদীকে বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ করার একমাত্র উপায় কিন্তু গাছ লাগানো। এটার দিকে আমাদের জোর দিতে হবে। কারণ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই এখন গাছ লাগানো ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই। যেসব খালি জায়গা আছে সেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে স্থাপনা তৈরি না করে শুধু গাছ লাগানো দরকার। যেসব গাছগুলো ছায়া দেয় এমন গাছগুলো শহরে লাগানো দরকার। শহরে বা রাস্তায় লাগানো দরকার দরকার এমন গাছের তালিকা আছে। এ বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ আছেন তাদের সহায়তা নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করে পুরো চট্টগ্রামকে সবুজের আওতায় নিয়ে আাসা দরকার।

তিনি বলেন, শহরের ভবনের ছাদগুলো তো কংক্রিটের। এগুলো গরম হয়ে শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। তাই সবুজ ছাদ বাগান করতে মানুষকে উৎসাহিত করা দরকার। এজন্য সিটি কর্পোরেশন মানুষকে ইনটেনসিভ দিতে পারে। যেমন ছাদবাগান করলে হোল্ডিং ট্যাঙে কিছুটা রেয়াত দিতে পারে।

এদিকে এক বছর আগে নগরের সড়ক বিভাজনের মাঝখানের জায়গায় থ্রি লেয়ার উদ্ভিদ লাগানোর জন্য চসিককে প্রস্তাব দিয়েছিল বেসরকারি উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা ‘ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপিনিয়ন (ইকো)। সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল আজাদীকে বলেন, উদ্ভিদ লাগানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু উদ্ভিদ লাগালে হবে না। যেহেতু আমাদের জায়গা কম তাই পরিকল্পনা করে লাগাতে হবে। এমন উদ্ভিদ লাগতে হবে যেগুলো পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গতকালের আবহাওয়া পরিস্থিতি :

গতকাল নগরে সর্বেঠচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সকালে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮০ শতাংশ এবং বিকেলে ছিল ৮৬ শতাংশ। ফলে তাপদাহ বয়ে না গেলেও গতকালও গরমে অস্বস্তিবোধ করেন নগরবাসী।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম জানান, আজ সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ দুই এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সে সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ২
পরবর্তী নিবন্ধগরমে ধড়ফড় করতে করতে টেম্পোতেই মারা গেল যুবক