তলোয়ার-রাইফেল বিতর্কে সিইসির অনুতাপ, সিইসির দোষারোপ

এনআইডিতে কোটি কোটি ভুল আছে বলে ধারণা ‘জোর করে তো আনতে পারব না, তবে ডেকে যাব’

| বুধবার , ২০ জুলাই, ২০২২ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

ভোটের মাঠে তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলছেন, সেটা ছিল নিছকই কথার পিঠে কথা। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের তৃতীয় দিনে ফের তলোয়ার প্রসঙ্গ উঠলে তিনি ওই ব্যাখ্যা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। সকালে ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) নেতারা সিইসির ওই বক্তব্যের সমালোচনা করলে নিজের ব্যাখ্যা তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমকে পাল্টা দোষারোপ করেন হাবিবুল আউয়াল। খবর বিডিনিউজের।

ভোটের মাঠে কেউ শক্তি প্রদর্শন করলে প্রতিরোধ করার করার পরামর্শ দিয়ে সংলাপের প্রথম দিন রোববার সিইসি বলেছিলেন, আপনাদের সমন্বিত প্রয়াস থাকবে, কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকেও কিন্তু রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি দৌড় দেন, তাহলে আমি কী করব? কাজেই আমরা সাহায্য করব। পুলিশের উপর, সরকারের উপর আমাদের কমান্ড থাকবে। তার ওই বক্তব্য সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার মত বলে সমালোচনা ওঠে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বিবৃতি দিয়ে ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। মঙ্গলবার ইসলামী ঐক্যজোট নেতারা সেই প্রসঙ্গ টেনে সিইসির কথার সমালোচনা করেন। পরে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল দাবি করেন, সংবাদমাধ্যমে তার বক্তব্যটি ভুলভাবে প্রচার করা হয়েছে; সিইসি হিসেবে প্রকৃত অর্থে তিনি ওই কথা বোঝাননি। আমার এক ভাই বলেছেন- একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হছে। পরশু আমি বলেছিলাম যে, কেউ তলোয়ার নিয়ে এলে আপনারা রাইফেল নিয়ে দাঁড়াবেন। এটা আপনাদের বুঝতে হবে, একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই কথাটি কখনো মিন করে বলতে পারেন না। আমি হয়ত অল্প শিক্ষিত; অল্প শিক্ষিত হলেও এ ধরনের কথা বলতে পারেন না।

হাবিবুল আউয়াল বলেন, এটা হচ্ছে কথার পিঠে কথা। এটা কখনো একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মিন করতে পারে না। … ইংরেজিতে একটি শব্দ আছে হিউমার বা কৌতুক করে বলা। এটাকে জাতীয় পর্যায়ে- একেবারে অকাট্য সত্য, যেন একটা ঐশী বাণী হিসেবে প্রচার করে, অনেক ধরনের ব্যানার দিয়ে- যেটাতে আমরা…।

সংবাদমাধ্যমে তথ্য সরবরাহে নির্বাচন কমিশনের উদার নৈতিক অবস্থানের কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, যতগুলো সম্মেলন বা আলোচনা হয়েছে, তাতে কোনো রাখঢাক করা হয়নি। বড় স্ক্রিনে কথা ও ছবি প্রচার করা হয়। কিন্তু কেন মিডিয়া এটা করলেন? এটা কী বুঝে না, না-বুঝে? উনাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা খুবই আছে। কিন্তু এটা করে আমার মর্যাদাকে একেবাবেই ক্ষুণ্ন করে দেওয়া হয়েছে এবং আপনারাও এটা বিশ্বাস করছেন। আমার বাবা বেঁচে থাকলে উনিও বিশ্বাস করতেন যে, আমার ছেলে এমন বাজে পরামর্শ দিল কেন? আমার মা বেঁচে থাকলেও বিশ্বাস করতেন। ওরা সবাই পেপার পড়তেন। পেপার পড়ে তারা হয়তো বলতেন ‘বাবু’ এত খারাপ পরামর্শ দিলে কেন? তো আমি এজন্য এটাই বলব- কখনও কখনও আমরা ভুল করে ফেলি। এর জন্য অনুতপ্ত। আমি হিউমার করতে গিয়েছিলাম; এটাই আসল।

নির্বাচনকালীন সরকারের আকার নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারা নিজেদের দাবি সংলাপে তুলে ধরলে তা সরকারের কাছে উপস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনীর নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোটের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নিয়ে ১১ দফা সুপারিশ জানান।
মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি সংলাপে যোগ দেয়নি। দুপুরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সংলাপে অংশ নেয়। আর বিকালে সাম্যবাদী দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ চলে। এ বৈঠকে সিইসি বলেছেন, আমার মনে হয় জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) কোটি কোটি ভুল আছে। তবে আমরা সংশোধনের চেষ্টা করছি। দলটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া এনআইডি সংশোধনের হয়রানি প্রসঙ্গ তুললে সিইসি বলেন, ভুলের পরিমাণটা এতো বেশি গেছে, আমার মনে হয় কোটি কোটি ভুল। আ-কার, ই-কার, ঈ-কার নিয়ে ওখানে বিপদে পড়ছে, এয়ারপোর্টে বিপদে পড়ছে, ওর সঙ্গে মিলছে না। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে আমার বন্ধুবান্ধব যারা আছে, ৪০-৫০টা আমি নিজেও করে দিয়েছি।

এদিকে ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া বিএনপি ইসির সঙ্গে আলোচনায়ও যাচ্ছে না, তবে তাদের বারবার ডেকে যাবেন বলে জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের তৃতীয় দিন গতকাল তিনি একথা বলেন। চতুর্থ দিন বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সূচি থাকলেও দলটি ইতোমধ্যে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের জোট শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া ভোটে কারও আসা, না আসা নিয়ে ইসিকে মাথা না ঘামাতে বলেন। সিইসিকে উদ্দেশ তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। ইসির কাজ ভালো নির্বাচন করা। কোন দল নির্বাচনে এল বা না এল, এটা ইসির দেখার বিষয় নয়। বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে এসে নির্বাচন করানো কাজও নয়। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরে সিইসি বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সবাইকে ডাকছেন তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাত ৮টার পর দোকান খোলা থাকলেই বিদ্যুৎ লাইন কাটা
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরও ৭৭ জন করোনায় আক্রান্ত