‘দূর হয়ে যাক মৃত্যু জরা ভয়/ লাগুক প্রাণে মঙ্গল বারতা/ আগামী দিনের নতুন সূর্যোদয়/ ঢেকে দিক সব জীর্ণ অক্ষমতা।’ নানা ঘাত–প্রতিঘাত, রাজনৈতিক উত্তাপ, আশা নিরাশার দোলাচল আর স্বপ্ন ভঙের বেদনায় আজ বিকেলে সূর্যটা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়তেই বিদায় নেবে আরও একটি বছর ২০২২। নতুন করে নতুন ভোরে নতুন সুরে নতুন স্বপ্নে ভর করে আগামীকাল নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে মানুষ।
যা কিছু পুরনো তার মাঝেই বাসা বাঁধে শোক, দু:খ, জরা, ব্যাধি, অসন্তোষ আর অসঙ্গতি। অন্যদিকে নতুনের আবাহন চিরটাকাল স্বপ্ন দেখার, স্বপ্ন পূরণের প্রেরণা যোগায়। সকলের প্রত্যাশাও তা–ই। কিন্তু তাই বলে অতীতকে মুছে ফেলা যায় না। সদ্য পুরনো বছরটাতে আমরা অনেককে হারিয়েছি; তাদের সান্নিধ্য আর কখনো পাওয়া হবে না ভেবে চোখের কোণে জল জমে। আবার পরক্ষণে সম্ভাবনাময় আগামীর হাতছানি স্মৃতির পানসীতরী ভাসিয়ে নেয় বহুদূর। মন যাযাবরের এমন সাপলুডু খেলায় সময় বয়ে চলে। মিনিট–ঘন্টা–দিন–মাস পেরিয়ে বছর চলে যায়। জাগতিক এ নিয়মের ব্যতয় ঘটাবে এমন সাধ্য কার? তবু এটাওতো সত্য যে, অতীত সে যতোই অতীত হোক, তারই মাঝে লুকিয়ে থাকে বর্তমানের চোখ। অতীতের সেই ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বছর হবে জাগরণের বছর।
২০২২ সাল অনেক তালবেতাল অবস্থার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, হরতাল, লুটপাট, দখল, গুম, ছিনতাই বিভিন্ন আতংকের মধ্যে মানুষ দিন অতিবাহিত করেছে। নেতাদের আশার কথার ফুলঝুরি আর কাজে অশুভ পরিণতি মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে এবং হতাশাগ্রস্ত হয়েছে। তবু মানুষ আশা করে কষ্টের পরে সুখ আসতে পারে। ঘটেছে অনেক বড় মাপের রাজনীতিবিদদের মহাপ্রস্থান। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে মেধাশূন্য ব্যক্তিদের রাজনীতিতে দখল। বিদায়ী বছরে রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ছিল বহুল আলোচিত ও সমালোচিত ঘটনা। রাষ্ট্র ও জনস্বার্থের বিষয়টি ছিল উপেক্ষিত। সরকারি ও বিরোধী দল ছিল প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কাজে ব্যস্ত এবং বিরোধী দলের সংসদ বর্জন ছিল অব্যাহত। বছরের শেষ দিকে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেছে। প্রতি বছরের মতো এবারও আনন্দ, বেদনা, দুঃখ–কষ্ট, সুখ আর আশা–নিরাশার দোলায় দুলেছি আমরা। কখনো মন ভালো হয়ে গেছে, কখনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ভারাক্রান্ত হয়েছে মন।
সব নতুনকে নিয়েই মানুষের দুর্ভাবনা থাকে তবুও মানুষ আশায় বেঁচে থাকে, নতুন শিশু জন্ম নেবে, অনেকেই স্বর্গবাসী হবেন তবু মানুষ ভালো কিছু পাওয়ার আশায় থাকে। সকল রাজনৈতিক দল দেশের জন্য একত্রিত হয়ে মিলেমিশে কাজ করে। ২০১৩ সালে যেন বাংলাদেশ সোনার বাংলায় পরিণত হয়। সরকার যে সমস্ত প্রশাসনিক উন্নয়নের কাজ শুরু করেছেন তা যেন পরিপূর্ণ করতে পারে। তবে সরকারের উচিত হবে ২০২২–এর ভুলগুলো চিহ্নিত করা। এবং সে ভুলগুলো সংশোধন করতে হবে। সব সেক্টরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাতে হবে। এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করে সরকারি দল ও বিরোধী দল মিলে একটা সুন্দর দেশ গড়ার প্রত্যয়ে শপথ করা। যাতে আগামী প্রজন্মের জন্য এদেশটা সুন্দর বসবাসের উপযোগী হয়। তাহলে ২০২৩ সালটা ইতিহাসে স্মরণীয় সফলতার বছর হবে।