একটানা বর্ষণ ও পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তাণ্ডব সবকিছুর মত তছনছ করে দিয়েছে চকরিয়ার সবজিভাণ্ডারকেও। এতে ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়েছে বাজারে। বৃষ্টি–বন্যা আর পাহাড়ি ঢলে উৎপাদনের মুখে থাকা ক্ষেতের সবজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বেশুমার প্রান্তিক কৃষক। জমিতে ফলানো সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মুহূর্তে বৃষ্টি–বন্যার প্রথম ধাক্কায় সবই হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে তাদের। সরেজমিন দেখা গেছে, চকরিয়া উপজেলার বন্যা কবলিত ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৯০ শতাংশ সবজি ক্ষেত বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। এমনকি এখনো অনেক ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল থেকে সরেনি বানের পানি। এই অবস্থায় কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে সব হারানোর মাতম। চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি সবজি উৎপাদন মৌসুমে উপজেলাজুড়ে রকমারি সবজির আবাদ হয় ৮১২ হেক্টর জমিতে। সেই জমির আবাদকৃত সবজির পুরোটাই অতি ভারি বর্ষণ, বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে তছনছ হয়ে গেছে। লাভের আশায় সবজির আবাদ করেন কৈয়ারবিল ইউনিয়নের দ্বীপকূলের কৃষক জমির উদ্দিন। তিনি এখন দিশোহারা। তার ২০০ শতক জমিতে লাগানো করলা, ঝিঙা ও শসাক্ষেত লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বৃষ্টি ও বন্যা কেড়ে নিয়েছে কষ্টের সব ফসল। শুধু কি তিনি, তার এলাকার সব কৃষকই হারিয়েছেন ক্ষেতের ফসল।
বিএমচর ইউনিয়নের কৃষক আবু তাহের জানান, তিনি তিন একর জমিতে লাউ, তিত করলা ও শসা চাষ করেন। কিন্তু সবই পানির নিচে চলে গেছে। আগে বৃষ্টি হলেও অল্প সময়ে পানি নেমে যেত। কিন্তু এবার টানা বর্ষণ, সেইসাথে মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা উজানের ঢলের পানিতে সবকিছুই তছনছ হয়ে গেছে। একই ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে পুরো ইউনিয়নের সব কৃষককে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকরিয়ার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় হাজারো সবজি চাষির ৮১২ হেক্টর জমিতে ফলানো কাঁকরোল, তিত করলা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, বরবটি, শসাসহ বিভিন্ন রকমারি সবজি তলিয়ে গেছে বানের পানিতে। এতে কম করে হলেও পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মাতামুহুরী নদীতীরের সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।
কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন বলেন, কাকারা ইউনিয়ন মাতামুহুরী নদীবেষ্টিত। তাই শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে সবজি চাষ হয় এখানে। বন্যার তাণ্ডবে চাষিদের এখন মাথায় হাত।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, এবারের ভয়াবহ বন্যায় তিল পরিমাণ জায়গা অবশিষ্ট নেই যেখানে বানের পানি উঠেনি। এই অবস্থায় উপজেলার সবজি ভাণ্ডারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রান্তিক কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর ভেসে উঠবে সবজি ক্ষেতের বিবর্ণ চিত্র।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বর্ষাকাল হওয়ায় সবজির আবাদও কম হয়। এরপরও যেসব এলাকার সবজি চাষি ক্ষতির শিকার হয়েছেন তাদেরকে প্রণোদনা এবং নতুন করে বীজ সরবরাহ করার বিষয়টি মাথায় রয়েছে। এতে হয়ত প্রান্তিক কৃষকেরা আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন।