৬ ডিসেম্বর ফেনী শত্রুমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে মুক্তিসেনারা সম্মুখ যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ফেনীর মাটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিল। এর কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক ও রেলপথের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে মুক্তিবাহিনীর হাতে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকবাহিনী ও রাজাকার-আলবদর বাহিনীর নৃশংস বরর্বতায় ক্ষত-বিক্ষত ফেনী শহরে বাঙালিরা বিজয়ের নিশান উড়িয়ে স্বজন-হারাদের কান্না ভুলিয়ে দিয়েছিল। জেলার বিভিন্ন স্থানে আটটি বধ্যভূমিতে শহীদদের লাশ শনাক্ত করতে ছুটে বেড়িয়েছিল স্বজন হারা ব্যক্তিরা। মুক্তিযুদ্ধের এ দিনে ফেনী অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম ও তার বাহিনী পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে অসম সাহসিকতা দেখান। ভারতের বিলোনীয়া ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল থেকে ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট একে একে বিলোনিয়া, পরশুরাম, মুন্সিরহাট ও ফুলগাজী জয় করে হানাদার বাহিনী থেকে। এক পর্যায়ের পাক হানাদার বাহিনীরা শুভপুর ব্রিজ হয়ে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়।
অপরদিকে অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপি’র নেতৃত্বে এ অঞ্চলে আরেকটি মুক্তিবাহিনী ছিলো বিএলএফ বা মুজিব বাহিনী নামে। তারা দাগনভূঞা, রাজাপুর, সিন্দুরপুর হয়ে হানাদার বাহিনীকে টানা আক্রমণ করতে করতে ফেনী শহরের দিকে এগুতে থাকে। এক পর্যায়ে পাক হানাদাররা ৬ ডিসেম্বর রাতে কুমিল্লার দিকে পালিয়ে পায়। সে সময় ফেনীর অবাঙালি মহকুমা প্রশাসক বেলাল এ.খানও পাকবাহিনীর সঙ্গে পালিয়ে যায়।
ফেনী হানাদারমুক্ত হওয়ার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে নিয়ন্ত্রণ মুক্তিবাহিনীর হাতে চলে আসে। পাক বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী ফেনী সরকারি কলেজ, তৎকালীন সিও অফিসসহ কয়েকটি স্থানে স্বাধীনতাকামী নিরীহ মানুষকে নির্মম ভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছিল। সে অমর শহীদদের স্মৃতির ভাস্কর হিসেবে ফেনী কলেজ অডিটরিয়ামের পাশে বধ্যভূমি ও জেল রোডের পাশে বীর শহীদদের নাম সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।