ঢাকার কলাবাগান এলাকায় নিজ বাসা থেকে কাজী সাবিরা রহমান লিপি (৪৭) নামে এক নারী চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার লাশটি উদ্ধার করা হয়। পরে এই ঘটনায় এ পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে ডিবি রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক জানান, চিকিৎসক নিহতের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। তারা হলেন- নিহত চিকিৎসকের বাসার কাজের বুয়া, সাবলেট থাকা কানিজ সুবর্ণা, তার এক বন্ধু মাহাতির মোহাম্মদ স্পন্দন ও বাড়ির দারোয়ান রমজান। রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, নিহত সাবিরার গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া পিঠেও তার দুটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে এ ঘটনাকে আত্মহত্যা মনে হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ডা. সাবিরা কলাবাগানের ৫০/১ প্রথম লেনের বাড়ির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তিনি ফ্ল্যাটের দু’টি রুম এক তরুণীকে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেন। সকালে সাবলেটে থাকা তরুণী হাঁটতে বের হয়েছিলেন। হেঁটে আসার পর তিনি বাসায় ফিরে দেখেন চিকিৎসক সাবিরার রুম বন্ধ। রুমের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। পরে তিনি দারোয়ানকে ডেকে চাবি এনে রুমের তালা খুলে দেখতে পান চিকিৎসক সাবিরা ফ্লোরে পড়ে আছেন। সবাই ভেবেছিলেন চিকিৎসক আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। পরে ডিবি এসে তার গলায় একটি ও পিঠে দু’টি আঘাতের চিহ্ন পায়। আমরা তদন্ত করছি। আশা করছি দ্রুত রহস্য উদঘাটন করবো।
হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থলে যায় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। ক্রাইম সিন জানায়, সাবিরাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা (ব্রুটালি কিল্ড) করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পরেই সাবিরার তোষকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়াতে পারেনি। তবে সাবিরার কিছু অংশ পুড়েছে। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের ইন্সপেক্টর শেখ রাসেল কবির বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাবিরার শ্বাসনালী কেটে ফেলা হয়েছে। তার শরীরে রক্ত ও পোড়া ক্ষত ছিল। তবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। আলামত দেখে মনে হয়েছে রোববার মধ্য রাতের যেকোনো সময় এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে।
ডিবি সূত্র জানায়, ডা. সাবিরা দু’টি বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম স্বামী চিকিৎসক ছিলেন। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে সাবিরা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী সামসুদ্দিন আজাদ। তিনি ন্যাশনাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তবে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বনিবনা ছিল না তার। সাবিরার দুই সন্তান রয়েছে। তার আগের স্বামীর ঘরে একটি ছেলে ও দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়েকে নিয়ে কলাবাগানের এ বাড়িতে থাকতেন সাবিরা। রোববার রাতে মেয়েটিকে গ্রিন রোডে নানার বাসায় রেখে এসেছিলেন তিনি। রাতে বাসায় একা ছিলেন সাবিরা।