ঢাকায় দরপত্রে জালিয়াতি নিলাম হয়নি চট্টগ্রামে

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

ঢাকায় জমা হওয়া নিলামের দরপত্রে জালয়াতি হচ্ছে বিডারদের (নিলামে অংশগ্রহকারী) এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম কাস্টমসে নির্ধারিত সময়ে নিলাম অনুষ্ঠিত হয়নি। গতকাল বেলা আড়াইটায় ফেব্রিক্স-সিএনজি অটোরিকশাসহ ৬৩ লট পণ্যের নিলাম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে শেষ মুহূর্তে দরপত্রের বক্স খুলতে পারেনি কাস্টমস। এর আগে গত ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলম বরাবর লিখিত অভিযোগ করে।
অভিযোগে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নিলামে (টেন্ডার সেল-১৮/২১) এর ১১০ নম্বর ক্যাটালগে সর্বোচ্চ এক কোটি ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা বিড করেন খোরশেদ আলম নামের একজন বিডার। কাস্টমসের সরকারি নিলাম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান কে এম কর্পোরেশন তার নাম ঘোষণা করে। কিন্তু পরবর্তীতে সর্বোচ্চ তালিকায় দেখা যায়, সাজ্জাদ হোসেন নামের অপর বিডারের নাম। অথচ তিনি বিড করেছিলেন ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। বিষয়টি জানতে কে এম কর্পোরেশনের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তারা খোরশেদ আলমের দরপত্রটি দেখান। আমাদের মনে হয়েছে-দরপত্রটি বাতিল করার জন্য দরপত্রে কিছু জালিয়াতি করা হয়েছে। এটা সবাই জানে যে, একটি পণ্যের জন্য একটি দরপত্র ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ওই দরপত্রে ক্যাটালগ নং ১১০ এর সাথে ক্যাটালগ নং ১১২ লিখা হয়েছে। দরপত্রে প্রদত্ত মূল্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট আয়করসহ দর উল্লেখ করা হয়েছে মর্মে লিখা ছিল। কোনো দরপত্র ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পাঠানো হলে নিলাম শাখা থেকে দরপত্র যাচাইয়ের জন্য নিলামকারী প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে-১১০ নম্বর ক্যাটালগের ঢাকার সর্বোচ্চ দরদাতা খোরশেদ আলম চট্টগ্রামের দরদাতার সাজ্জাদ হোসেনের দরের সাথে বেশি পার্থক্য থাকায় নিলামকারী প্রতিষ্ঠান অথবা নিলাম শাখার কোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে এ কাজটি করা হয়েছে। আমাদের সন্দেহের আরেকটি কারণ হচ্ছে-সাধারণত সর্বোচ্চ দরদাতা ছাড়া বাকি দরদাতাদের পে অর্ডারগুলো ২ থেকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ফেরত দেয়া হয়। কিন্তু টেন্ডার সেল-১৮/২১ এর সর্বোচ্চ ছাড়া বাকিদের পে অর্ডার ফেরত দেয়া হয় ৯ দিন পর।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (নিলাম শাখা) মো. আলী রেজা হায়দার দৈনিক আজাদীকে বলেন, যার দরপত্র নিয়ে অভিযোগ, সেই খোরশেদ আলমের দরপত্রটি আমলে নিয়ে তাকে সর্বোচ্চ দরদাতা ঘোষণা করছি। এখন তিনি যদি পণ্য নিতে না চান, তাহলে আমরা তা পে অর্ডার বাজেয়াপ্ত করবো। অভিযোগের বাকি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা চাই শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিলাম অনুষ্ঠিত হোক। সে কারণে চট্টগ্রাম-ঢাকার দরপত্রগুলো আমরা একযোগে খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে কারণে আজ (গতকাল) নিলামের দরপত্র বঙ খোলা হয়নি। তবে আগামী রোববার ঢাকার দরপত্রগুলো আসলে আমরা এক সাথে সব দরপত্র খুলবো।
চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এয়াকুব চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা কাস্টমস কমিশনারকে বলেছি, চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে মংলাতে যেভাবে দরপত্র সিল করে পাঠানো হয়, সে প্রক্রিয়ায় যেন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে দরপত্রগুলো নিয়ে আসা হয়। তাহলে নিলাম কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
উল্লেখ্য, গতকাল ফেব্রিঙ-সিএনজি অটোরিকশাসহ ৬৩ লট পণ্যের নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বাকি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে-এসিড, টেঙটাইল, কেমিক্যাল, ড্রাগন ফ্রুট, হ্যাংগার, জিংক অঙাইড, সেলফ অ্যাডহেসিভ টেপ, পেপার ট্যাগ, ল্যাবরেটরি পণ্য, কটন হ্যান্ড কভার, অ্যালুমিনিয়াম পাউডার, কটন ড্রকর্ড, পুস্তক, স্ট্যান্ড ও ওয়াল ফ্যান, জুস, সাইক্লোহেঙানোন, স্যানিটাইজার, ফোর হুইলার ইলেকট্রিক যানবাহন, বাচ্চাদের সাইকেল, মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ, থান কাপড়, ফুটওয়্যার, টাইলস, ইলেকট্রিক মেশিনারী, কিউমিন সিড, ক্যাপিটাল মেশিনারী, লুব্রিকেটিং অয়েল, পিপি আইলেট ও পিভিসি ব্যানার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআয়েসী ভাব ছেড়ে সবাই সতর্ক হোন : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধ২২ সালে ২২ দিন ছুটিতে সাপ্তাহিক বন্ধ ৬ দিন