ড. জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায়: উপমহাদেশের রসায়ন বিজ্ঞানী

| শনিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

অধ্যাপক ড.জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায়। প্রখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ। ভারতে উপক্ষার সংশ্লেষণ গবেষণায় অন্যতম পথিকৃৎ। জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায়ের জন্ম ফরিদপুরে তিল্লীগ্রামে। পিতা পূর্ণচন্দ্র রায় ছিলেন একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং ভারতে দিয়াশলাই শিল্পের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবসায়ী। তাঁর বাল্যকাল কেটেছে রাজশাহীর মাতুলালয়ে। কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হলেও পড়াশোনার চেয়ে তার খেলাধূলা ও নাটকে আগ্রহ বেশি ছিল। এ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতায় এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএসসি পাসের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯১৯ সালে রসায়ন শাস্ত্রে এমএসসিতে প্রথম হন এবং স্বর্ণপদক লাভ করেন। জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজে রসায়ন বিভাগের লেকচারারের পদে যোগদান করে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের তত্ত্বাবধানে জৈব রসায়ন গবেষণা শুরু করেন। ১৯২৩ সালে তিনি ভ্রমণবৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ডে যান ও নোবেল পুরস্কার-বিজয়ী জৈব রসায়ন-বিজ্ঞানী স্যার রবার্ট রবিনসনের অধীনে গবেষণায় রত হন।
১৯২৬ সালে স্যার রবিনসনের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি যে গবেষণা-পত্র প্রকাশ করেন তা যোজ্যতার আধুনিক ইলেকট্রনিক তত্ত্বের ভিত্তিস্বরূপ। ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুকাল অধ্যাপনা ও গবেষণা এবং অস্ট্রিয়ার গ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক প্রেগলের সঙ্গে মাইক্রো-রসায়ন বিষয়েও গবেষণা করেন। ১৯২৮ সালে ভারতে ফিরে লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হন। এখানে দীর্ঘকাল অধ্যাপনার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ড্রাগস ও ড্রেসিং দপ্তরের অধিকর্তা হন। এই সময় রণাঙ্গনে প্রয়োজনীয় প্রধান প্রধান ভেষজ ও রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুতের কেন্দ্র সারা দেশে গড়ে তোলবার ব্যাপারে বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করেন। এরপর ভারত সরকারের শিল্প ও সরবরাহ বিভাগের সহ-অধিকর্তা নিযুক্ত হন এবং ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ঐ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৫৮ খ্রী. ক্যালকাটা কেমিক্যাল-এ প্রধান শিল্পও গবেষণা উপদেষ্টা রূপে যোগদান করে ১৯৬৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তার রচিত ১৮০টির বেশী মৌলিক গবেষণানিবন্ধ ভারত, ব্রিটেন, আমেরিকা ও জার্মানীর নানা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি ভারতে উপক্ষার সংশ্লেষণ গবেষণায় অন্যতম পথিকৃৎ। এ সম্পর্কে তার একটি কৃতিত্বপূর্ণ অবদান বারবেরিন উপক্ষারের সংশ্লেষণ। আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্রের প্রিয় শিষ্য ‘জ্ঞানত্রয়ে’র তিনি অন্যতম। তিনি ১৯৭০ সালের ৯ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধরোজায় ভিন্নধর্মমতাবলম্বী শিক্ষার্থীদের খাবার সংকট নিরসনে চবি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ