ডেঙ্গু নির্মূলের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিকল্পনা

| রবিবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

সামপ্রতিক সময়ে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আতংকিত হয়ে উঠছেন অনেকে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নগরের নির্মাণাধীন ভবন ও ছাদ বাগান মালিকদের মশার কীনাশক ছিটানোর স্প্রে মেশিন রাখা বাধ্যতামূলক করছে। নিজস্ব খরচে এ স্প্রে মেশিন সংগ্রহ করতে হবে তাদের। এছাড়া ভবন মালিকদের প্রতি তিন দিন পর পর স্প্রে বা ফগিং করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় ওয়ার্ড অফিস থেকে বিনামূল্য কীটনাশক সংগ্রহ করতে পারবেন তারা। চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় এ সব সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২১ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৯টি সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে- ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দুই হাজার লিটার লার্ভিসাইড (মশার লার্ভা মারার কীটনাশক), ১৫ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড (পূর্ণাঙ্গ বা উড়ন্ত মশা মারার কীটনাশক) এবং পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের জন্য ১০০ লিটার মসকুবার ও এর জন্য প্রয়োজনীয় ন্যাপথা ক্রয় করা।

ডেঙ্‌গু বিরোধী প্রচারণা জোরদারের লক্ষ্যে নতুন করে দুই লক্ষ লিফলেট ছাপানো হবে। সভায় মশক নিধন কার্যক্রম ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে কৌশলে অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে মশক নিধন কার্যক্রম থেকে সরিয়ে নেয়া হলো বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের এক কর্মকর্তা জানান। এ ছাড়া ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আরবান ভলান্টিয়ার ও রেডক্রিসেন্ট টিমকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়। সকল আবাসিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি/ সেক্রেটারি বরাবর মাননীয় মেয়র স্বাক্ষরিত পত্র প্রেরণের মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রত্যেক সমিতির নিজস্ব করণীয় বিষয়ে পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। ডেঙ্গু সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, স্থানীয় ক্যাবল টিভিতে প্রচারণা ও আবাসিক সমিতির সাথে বৈঠক করার সুপারিশ করে কমিটি। এ ছাড়াও মসজিদের ইমাম ও মন্দিরের পুরোহিতদের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টির উপর জোর দেয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, উন্নয়নশীল বাংলাদেশে সু-স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা হলো সচেতনতার অভাব। আমরা স্বল্পশিক্ষিত বা উচ্চশিক্ষিত সবাই কম বেশি অসচেতন। সাধারণ থেকে অসাধরণ, গরিব থেকে ধনী প্রায় সকলের মধ্যেই একধরনের অসচেতনতা কাজ করে। দেশে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হওয়ায় মশার উৎপাত চরম বেড়ে গেছে। আমাদের পরিবেশে এখন ডেঙ্গু ভাইরাসের বিস্তার চলছে।

এমন পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকা ছাড়া আসলে কোন উপায় নেই। আর ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে একমাত্র উপায় হল মশা উপদ্রব কমানো। কারণ আমরা সবাই জানি, এডিস মশাই ডেঙ্গু জ্বরের কারণ। এডিস মশার উপদ্রব কমাতে যে সকল সতর্কতা আমাদের মানতে হবে, সাধারণত এডিস মশা স্বচ্ছ পানিতে ডিম পারে এবং বংশ বিস্তার করে। তাই খেয়াল রাখতে বাড়ির আশেপাশে বা বাড়ির আঙ্গিনায় কোথাও যেন পানি না জমে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমে থাকার বৃষ্টির পানিতে এডিস মশার বংশ বিস্তার হয়, যেটি ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করার জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করা। এটি করতে না পারলে চিকিৎসা দিয়ে কুলানো সম্ভব হবে না বলে সতর্ক করে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। নগরীতে অনেকেই ছাদকৃষির সাথে জড়িত। তাছাড়া বহু মানুষ বারান্দায় গাছ লাগান। গাছের গোড়ায় পানি জমে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ঘটতে পারে। তাই প্রতিদিন গাছের গোড়ায় পানি জমেছে কি না তা লক্ষ্য রাখতে হবে। পানি জমে গেলে সাথে সাথে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

সচেতনতার পাশাপাশি ডেঙ্গু নির্মূলের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন। একসময় দেশে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ছিল খুব বেশি। যার বাহকও মশা। সেই ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে এসেছে সুষ্ঠু পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার জন্য। অন্য মশা ও মশাবাহিত রোগ যেমন কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে এসেছে, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও তদ্রুপ পদক্ষেপ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে