সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট ডিসি পার্ক ফুল উৎসবে গতকাল মঙ্গলবার রাতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। রাত সাড়ে আটটার দিকে দুর্বৃত্তরা তাণ্ডব শুরু করে। এ সময় দর্শনার্থীদের মধ্য সৃষ্টি হয় ভীতিকর পরিস্থিতি। ৩০–৪০ জন দুষ্কৃতকারী পার্কের প্রধান গেটে অবস্থান নেয়। এরপর তারা হকিস্টিক, লাঠিসোঁটা নিয়ে মূল গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময় তাদের মধ্যে কয়েকজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়ে তাণ্ডব শুরু করে। এ ঘটনায় ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রায় আধ ঘণ্টা পর এলাকাবাসী, পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে ডিসি পার্কের ঘটনায় গতকাল রাত ১০টায় নগরীর কাস্টমস ও সল্টগোলা মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন প্রাইম মুভার শ্রমিকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা স্লোগান দিতে দিতে জোর করে প্রধান ফটক ভেঙে প্রবেশ করে। তারা প্রধান ফটক থেকে ভাঙচুর শুরু করে। প্রথমে প্রধান গেটে টিকেট কাউন্টারে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়। হামলা চালিয়ে সেখানকার ডেস্ক, কম্পিউটারসহ অন্যান্য সামগ্রী ভাঙচুর করে। ওই সময় কাউন্টারে কর্মরতদের ধাওয়া করে। কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। স্বাভাবিক পরিবেশ মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে যায়। দুষ্কৃতকারীদের হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে অনেকে দিগবিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন।
পার্কে তাণ্ডব চালানোর পাশাপাশি বাইরে এসে দুষ্কৃতকারীরা প্রধান ফটকের বাইরে রাখা অন্তত ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। পার্কের নিরাপত্তাকর্মীরা হামলাকারীদের বাধা দিতে গেলে তাদের দিকে লাঠি নিয়ে তেড়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। তারা প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায়। সন্ত্রাসী হামলায় দর্শনার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে ছোটাছুটি করতে গিয়ে অনেকে আহত হন।
ঘটনার সূত্রপাত হয় রাত ৮টায়। ডিসি পার্কে নিয়োজিত পার্কিং কর্মচারীরা পার্ক থেকে বের হওয়া গাড়ি নিরাপদে মেইন সড়কে তুলতে একটি লরিকে সিগন্যাল দেন। লরির ড্রাইভার সিগন্যাল অমান্য করে ডিসি পার্ক কর্মচারীর গায়ে চাপ দেন। এতে উভয় পক্ষের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। পরে লরির ড্রাইভার সড়কে লরি দিয়ে যান চলাচল ব্লক করে সরে যান। আধা ঘণ্টা পর তারা সশস্ত্র অবস্থা জড়ো হয়ে অতর্কিততে পার্কের গেট ও দেয়াল ভাঙচুর করে। ডিসি পার্ক কর্তৃপক্ষ বাধা দিলে হামলাকারীরা পাথর নিক্ষেপ শুরু করে। পরে স্থানীয় নারী–পুরুষ ডিসি পার্ক রক্ষা করতে রাস্তা এসে পার্ক কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করে প্রতিহত করা চেষ্টা করেন। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও এলাকাবাসীর চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনেন।
টিকেট কাউন্টারের এক কর্মচারী জানান, লরি, ট্রাক মালিক সমিতি ও ডিপো কর্তৃপক্ষ ড্রাইভার ও হেলপারদের নির্দেশে এ ঘটনা ঘটে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ফুল উৎসব চলাকালে বিকালের দিকে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা–কর্মচারী কর্তৃক একজন গাড়ি চালককে ধরে নিয়ে মারধর করে। চালককে বেঁধে রেখে মারধরের ঘটনায় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চালকরা কাস্টমস মোড়ে সড়ক অবরোধও করে। এ ঘটনার পর পার্কের বাইরে অবস্থানরত হকার, গাড়ির চালক–কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী লোকজন ছিল। তাদের কারো কারো মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। বেশিরভাগের দুষ্কৃতকারীর হাতে ছিল লাঠি। অনেকে লুঙ্গি পরাও ছিল। এদের মধ্যে দুজন লাঠি দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ও ডিসি পার্ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. আলাউদ্দিন জানান, সীতাকুণ্ড ডিসি পার্ক সংলগ্ন রাস্তায় ট্রাক, লরির ড্রাইভার ও শ্রমিকদের দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয় এবং তা সহিংসতায় রূপ নেয়। সহিংসতা পার্শ্ববর্তী ডিসি পার্কে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ডিসি পার্কের নিরাপত্তা প্রহরী ও আনসারদের সঙ্গে বিএম কন্টেনার ডিপোর চালকদের মারামারির সূত্রপাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য বিষয় যাচাই করে বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে ডিসি পার্কে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।