‘ডিজেল-সিএনজি সব গাড়ি একাকার’

বর্ধিত ভাড়া নেয়ার চেষ্টা, যাত্রীদের সাথে বাকবিতণ্ডা চলছেই

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১১ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ

টানা তিনদিনের অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট শেষে বাস ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা আসতেই গত সোমবার থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে শুরু হয় বাড়তি ভাড়া নেওয়ার প্রতিযোগিতা। টাইগারপাস থেকে আগ্রাবাদ যেতেও ৫ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দূরপাল্লার বাসের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা বেশি। নতুন প্রজ্ঞাপনে শুধুমাত্র ডিজেলচালিত গাড়ির ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসচালিত গাড়ি চলবে আগের ভাড়া অনুযায়ী। কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ, এখন সব গাড়িই ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। কি ডিজেল, কি সিএনজি সবই একাকার। চট্টগ্রাম নগরীতে চলাচলকারী বেশিরভাগ বাসই সিএনজিচালিত। নতুন ভাড়ায় যাত্রী-শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বাকবিতণ্ডা কোথাও কোথাও হাতাহাতি পর্যন্ত হতে দেখা গেছে।
যাত্রীরা বলছেন, তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। এটা অযৌক্তিক। লিটারে ৫ টাকা করে বাড়ালে সাধারণ মানুষের জন্য ভালো হতো। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর ভয়াবহ চাপ তৈরি হয়েছে। বাকবিতণ্ডা চললেও শেষ পর্যন্ত পরিবহন শ্রমিকদের কাছে হার মেনে বাড়তি ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে যেতে হয়েছে যাত্রীদের। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন রবিউল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, নতুন করে বাসের যে ভাড়া নেয়া হচ্ছে তা অন্যায়। কিন্তু এতে আপনি কিছুই বলতে পারবেন না। এভাবেই চলতে হবে। আবির চৌধুরী নামে এক যাত্রী বলেন, টেম্পোগুলো গ্যাস দিয়ে চলে। তাহলে কোন যুক্তিতে বহদ্দারহাট থেকে চকবাজার ৫ টাকা ভাড়া ১০ টাকা আদায় করা হলো। ভাড়া বাড়ানোর সিন্ডিকেট এটা ওদের অনেক আগ থেকে। এমনকি ভাড়া ওদের মন মত না দিলে হুমকি-ধমকি ও করে। এ নিয়ে একটা ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
নগরীর নয়াবাজার বিশ্বরোড মোড় থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত সিএনজি টেম্পো ভাড়া ছিল ৮ টাকা। এখন যাত্রীদের থেকে নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা। নয়াবাজার বিশ্বরোড মোড় থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত নির্ধারিত ভাড়া ছিল ১০ টাকা, এখন নিচ্ছে ১৫ টাকা। উঠানামা ৫ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ৮ টাকা। শুধু টেম্পো নয়, নগরীর বিভিন্ন রুটের বাস ও মিনিবাসগুলোর অধিকাংশ গ্যাসে চলে। অথচ তারাও ডিজেল চালিত বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।
নগরীর বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ আসা আসিফ হোসেন বলেন, সরকার নতুন করে যে ভাড়া নির্ধারিত করে দিয়েছে তার কোন প্রভাব নেই। বাসগুলো নিজেদের ইচ্ছামতোই ভাড়া আদায় করছে। তাদের সঙ্গে কোন কথা বলতে গেলেই বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছে। তারা উঠানামা ১০ টাকার নিয়মেই আছে। এভাবে বহদ্দারহাট থেকে বাসে ষোলশহর পর্যন্ত আগের ভাড়া ছিল ৫ টাকা। এখন সর্বনিম্ন ভাড়ার অজুহাতে ১০ টাকা নেয়া হচ্ছে। সর্বনিম্ন ভাড়ার কারণে বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে প্রায় সব যাত্রীকে। গাড়িতে যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া নিয়ে হই হুল্লোড় করলেও হেলপার কর্ণপাত করছে না। বারিক বিল্ডিং থেকে জামালখান পর্যন্ত নির্ধারিত ভাড়া ৮ টাকা। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চালক সুমন বলেন, শুধু আমি নই, সবাই দুই টাকা বাড়তি নিচ্ছে, আগ্রাবাদ থেকে জামালখান ৮ টাকা ভাড়া, আমরা ১০ টাকা নিচ্ছি।
নগরীর ১নং রুটে কালুরঘাট থেকে নিউমার্কেট, ৩নং রুটে নিউমার্কেট থেকে মুরাদপুর হয়ে অঙিজেন-ফতেয়াবাদ, ৪নং রুটে নতুন ব্রিজ থেকে বারিক বিল্ডিং, ১১নং রুটে কাঠগড় থেকে অলংকার পর্যন্ত চলাচলকারী মিনিবাসগুলোর অধিকাংশই গ্যাসে চলে। অথচ ডিজেল চালিত বাস-মিনিবাসের সাথে মিলে এসব মিনিবাসগুলোতেও বাড়তি ভাড়া আদায় করেছে। কাজির দেউড়ি থেকে প্রবর্তক মোড়ে আগে ভাড়া চিল ৫ টাকা, এখন নেয়া হচ্ছে ৮ টাকা।
সাকের হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, দেওয়ানহাট মোড় থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত হিউম্যান হলারের ভাড়া ছিল ৭ টাকা, এখন করা হয়েছে ৯ টাকা। অথচ এসব গাড়িগুলো গ্যাস চালিত। আবার ভাংতি নেই অজুহাত দেখিয়ে ১০ টাকা ভাড়া নিয়ে নিয়েছে। যাত্রীরা যেন গাড়ির চালক-হেলপারদের কাছে জিম্মি। প্রতিবাদ করেও কোন কাজ হচ্ছে না।
জানা যায়, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া যথাক্রমে ১ টাকা ৭০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ১৫ পয়সা ও ১ টাকা ৬০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া যথাক্রমে ৭ টাকার স্থলে ১০ টাকা ও ৫ টাকার স্থলে ৮ টাকা করা হয়েছে।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, বিআরটিএর দুজন ম্যাজিস্ট্রেট সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার বিভিন্ন স্পটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। এ সময় বেশ কয়েকজন গাড়িচালককে জরিমানাও করা হয়েছে। বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার মুক্তার এ প্রসঙ্গে বলেন, নতুনভাবে নির্ধারিত হারে নগরীতে প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া বেড়েছে ৫৫ পয়সা। যা আগের ভাড়ার চেয়ে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। কিন্তু কোনো কোনো গাড়ি বিভিন্ন গন্তব্যে আগের তুলনায় দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও আমরা পেয়েছি। এছাড়া গ্যাসচালিত গাড়িতেও বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। তিনি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে বেশ কিছু গাড়িকে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে মহানগরীর অভ্যন্তরীণ রুট ছাড়াও নগরী থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার গাড়িগুলোতেও আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। চট্টগ্রাম-কঙবাজার, চট্টগ্রাম-ঢাকা, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম-বান্দরবানসহ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন কোম্পানির বাসে ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা বলেন, পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেই বিআরটিএ নতুন ভাড়া নির্ধারণ করেছে। কোন গাড়িতে কত ভাড়া বাড়বে তাও নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু গাড়িগুলো তাদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। পরিবহন মালিক ও প্রশাসনের এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বলেন, বিআরটিএ নতুন করে যে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে সে ব্যাপারে আমরা চালকদের জানিয়ে দিয়েছি। এরপরও কেউ যদি নির্ধারিত ভাড়ার বেশি আদায় করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার সভাপতি মো. মুছা বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ুক-এটা আমাদের কাম্য নয়। ডিজেলের দাম বাড়ার পর প্রতিটি বাসে দৈনিক ৯০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা খরচ বেড়ে গেছে। আমরা কীভাবে গাড়ি চালাব?

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩৯ ইউপির নির্বাচন আজ
পরবর্তী নিবন্ধভিড়ের চাপ, ভোগান্তি