ডিজিটাল বিশ্বে শিশুদের সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব সবার

| শনিবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন ব্যবহার বাড়ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, কিশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবার হাতেই এখন স্মার্টফোন রয়েছে। বয়স বিবেচনায় স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা দুটিই রয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ১০ বছরের বেশি বয়সী মোট জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশের কাছে বর্তমানে স্মার্টফোন রয়েছে। এর বিপরীতে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার এখনো কম।

বিশ্লেষকদের মতে, বিস্তৃত পরিসরে ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিতে এটি অন্যতম একটি। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) প্রথমবারের মতো অঞ্চলভিত্তিক ও বৈশ্বিক অনুমান প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে ১০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশের নিজস্ব স্মার্টফোন রয়েছে।

বার্ষিক প্রতিবেদনে আইটিইউ জানায়, সহজে ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে মোবাইল বা সেলফোন সবচেয়ে সহজ ও সুবিধাজনক মাধ্যম। এর সঙ্গে ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও ব্যবহারের মাত্রা নির্ধারণ করে। কিন্তু প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, ‘বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারের তুলনায় স্মার্টফোনের মালিকানার হার বেশি। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশে। কেননা এসব দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যয় অনেক বেশি।’

এদিকে আরেক খবরে বলা হয়েছে, দেশের ৮৯ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। মোবাইল সেটের মধ্যে স্মার্টফোনের ব্যবহার ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্তত একটি মোবাইল সেটের মালিক দেশের ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ। ডিজিটাল ডিভাইস হিসেবে কম্পিউটার ব্যবহার করে মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ‘ব্যক্তি এবং খানা পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভিগম্যতা এবং ব্যবহার জরিপ’ প্রতিবেদনটি গত সোমবার বিবিএসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। গত ২৯ মে থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশের ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা থেকে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, দেশের ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। ইন্টারনেট ব্যবহারে নারীর চেয়ে পুরুষরা এগিয়ে। পুরুষ ৪৫ দশমিক ৩ এবং নারী ৩২ দশমিক ৭ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখনও বড় বাধা হচ্ছে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা না জানা। এ কারণে ৬৭ দশমিক ৮ শতাংশ ইন্টারনেটে প্রবেশ করে না। এছাড়া উচ্চমূল্যের কারণে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণে ২ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেটমুখো হচ্ছে না। আবার ৬৮ দশমিক ২ শতাংশেরই এ মাধ্যমটির প্রয়োজন হয় না।

জরিপে দেখা গেছে, কথা বলা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ইন্টারনেটের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। আবার কথা বলার ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারী এগিয়ে। ব্যবহারকারীর ৮৪ দশমিক ৭ শতাংশ ইন্টারনেট কলে কথা বলে। নারী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৮৫ দশমিক ২ শতাংশ ইন্টারনেটে কথা বলে। পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার ৮৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

ফেসবুকসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইন্টারনেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যবহার ৮৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগে ইন্টারনেট ব্যবহার করে মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ।

অন্যদিকে ইউনিসেফ জানিয়েছে, প্রতিদিন ১ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি বা প্রতি আধা সেকেন্ডে একজন শিশু প্রথমবারের মতো অনলাইন জগতে প্রবেশ করে। বলা হয়েছে, ডিজিটাল দুনিয়ায় এই প্রবেশ তাদের সামনে উপকার ও সুযোগের বিশাল দ্বার উন্মোচন করে। তবে একই সঙ্গে তাদের ঝুঁকি ও ক্ষতির মুখেও ফেলে, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষতিকর আধেয় (কনটেন্ট), যৌন হয়রানি ও শোষণ, সাইবার উৎপীড়ন ও তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার।

ডিজিটাল বিশ্বের ক্ষতির হাত থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখা, অনলাইনে তাদের কার্যক্রমের তথ্য নিরাপদ রাখা এবং তাদের জন্য নিরাপদ ও মানসম্পন্ন আধেয় ব্যবহারের সুযোগ তৈরিতে তেমন কাজ হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডিজিটাল বিশ্বে শিশুদের সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব সরকার, পরিবার, স্কুল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সবার। শিশুদের ওপর ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাবকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনতে বিশেষ করে প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ শিল্পে বেসরকারি খাতের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু এই দায়িত্ব কখনোই যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়নি। তাই তথ্য ও গোপনীয়তার বিষয়ে নৈতিক মানসহ অনলাইনে শিশুদের উপকারে আসে এবং তাদের সুরক্ষিত রাখে- এমন চর্চাগুলো বাড়াতে বেসরকারি খাতের শক্তি ও প্রভাবকে কাজে লাগাতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে