ডলার সংকটের পেছনে আমদানি রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচার

বড় শিল্প গ্রুপই অর্থপাচার করে : এবিবি

| মঙ্গলবার , ২৩ মে, ২০২৩ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

ব্যাংক খাতের সংকট কিছুটা কাটলেও পুরোপুরি উত্তরণ ঘটেনি মন্তব্য করে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেছেন, চাপে থাকা বিদেশি মুদ্রার যোগানের সংকটও আগের চেয়ে কমে আসছে। তবে ডলারের অভাব এখনও ব্যাংক খাতে রয়েছে জানিয়ে তিনি প্রধান এ বিদেশি মুদ্রার সংকটের পেছনে আমদানিরপ্তানি মূল্যে কারচুপি করে অর্থপাচার, রপ্তানি কমে যাওয়া ও মূল্যস্ফীতিতে বড় কারণ হিসেবে তুলে ধরেন।

তার ভাষ্য, মূলত বড় বড় শিল্প গ্রুপই অর্থপাচার করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের কারণে এখন অর্থপাচারের পরিমাণ কমে আসছে। তবে বিশ্বব্যাপী মানি লন্ডারিং একটি সমস্যা। পণ্যের দাম নির্ধারণ একটি কঠিন কাজ।

গতকাল ঢাকার তেজগাঁওয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘ব্যাংকিং সেক্টর আউটলুক২০২৩’ সম্পর্কে ধারণা দিতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন। খবর বিডিনিউজের।

ব্যাংক খাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরার সময় খেলাপি ঋণকে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে ব্যাংক নির্বাহীদের এ সংগঠনের নেতারা বলেন, খেলাপি ঋণ এখন এক প্রকার ব্যাংকিং ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সংস্কার ও সুশাসনের মাধ্যমেই তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

এবিবি চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, খেলাপি ঋণের চ্যালেঞ্জকে শুধু ব্যাংকাররা বা বাংলাদেশ ব্যাংক মোকাবেলা করবে; সেই পর্যায়ে এই সমস্যাটি আর নেই। সার্বিকভাবে দেশ ও সমাজ হিসেবে একসাথে মিলেমিশে মোকাবেলা করতে হবে। শুধু ব্যাংকিং খাত একা এটি করতে পারবে না।

চাপে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার যোগানের সংকট আগের চেয়ে কমে আসার কারণ হিসেবে রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি ইতিবাচক ধারায় থাকার কথা তুলে তিনি বলেন, খোলা বাজার ও ব্যাংকে ডলারের বিভিন্ন দরের মধ্যে ব্যবধানও কমে আসছে।

দীর্ঘদিন পর এবিবির এ সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে ভাইস চেয়ারম্যান মাশরুর আরেফিন জানান, মুদ্রা ও ডলারের যোগানে আগের চেয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণাত্মক থেকে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। অর্থনীতির এমন ভালো খবর জানাতেই এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।

বড় শিল্প গ্রুপই অর্থপাচার করে : গত তিন দশকে দেশে ব্যাংকিং খাত অন্যভাবে তৈরি হয়েছে জানিয়ে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশে ব্যাংকিং ব্যবসা বিভিন্ন গ্রুপের কাছে চলে গেছে। ব্যবসায়ী গ্রুপ ব্যাংকের উদ্যোক্তা হচ্ছেন। আমাদের প্রতিবেশী দেশসহ অনেক দেশেই বিষয়টা এমন নয়। এজন্য সুশাসন ফেরাতে ব্যাংকে বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার।

একই সঙ্গে ব্যাংকে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত আস্থার উপর টিকে আছে। সেই আস্থা ধরে রাখতে সুশাসনে উন্নতি করতে বড় ধরনের একটি সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য একটি বড় উদ্যোগ নিতে হবে, তাহলে খেলাপি ঋণ কমানো যাবে।

ডলার সংকট ও অর্থপাচার একই সূত্রে গাঁথা মন্তব্য করে তিনি বলেন, মূলত বড় বড় শিল্প গ্রুপই অর্থপাচার করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের কারণে এখন অর্থপাচারের পরিমাণ কমে আসছে। তবে বিশ্বব্যাপীই মানি লন্ডারিং একটি সমস্যা। পণ্যের দাম নির্ধারণ একটি কঠিন কাজ।

আগে এ বিষয়ে ব্যাংকগুলো সচেতন না থাকলেও এখন প্রচারনা ও নীতিমালার কারণে ব্যাংক কর্মকর্তারাও এলসি খোলার বেলায় সচেতন হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

ডলারের অভাব এখনও আছে : তার তিন দশকের বেশি ব্যাংকিং অভিজ্ঞতায় ডলারের এমন চাপ আগে কখনও দেখেননি উল্লেখ করে এবিবি চেয়ারম্যান বলনে, ডলারের অভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অনেকেরই এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারছি না। আমাদের বেছে বেছে এলসি খুলতে হচ্ছে। ১০টি আবেদন আসলে আমরা চার থেকে ছয়টি ঋণপত্র খুলতে পারছি।

এসব এলসি খুলতে সরকার নির্ধারিত অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তবে ডলারের যোগানে আগের চেয়ে উন্নতি হচ্ছে। বিদেশি মুদ্রার সরবরাহে যেখানে ব্যাংকগুলো ঘাটতিতে ছিল, সেখান থেকে ইতিবাচক ধারায় উন্নতি হয়েছে।

এ সময় সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশুরুর আরেফিন বলেন, কখনই বলিনি ডলারের পর্যাপ্ততা আছে। এখনও চাপ রয়েছে। আমরা বলছি, সামনের দিকে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে।

ডাচবাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে যাচ্ছে। আমার ব্যাংকেও আমদানিরপ্তানি প্রবৃদ্ধি গত বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। এতেই বোঝা যায় সব ব্যাংকেই বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়ছে।

পর্ষদের চাপ নেই, পরামর্শ নিতে হয় : দেশের ডজনখানেক ব্যাংক একটি শিল্প গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ীদের হাতে, যেগুলো ব্যাংকিং ব্যবসায় ভালো করতে পারছে না। একটি ব্যাংক ২০২২ সালে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে প্রশ্ন রাখা হয়, এসব ব্যাংকের পর্ষদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাপ রয়েছে কিনা?

এর উত্তরে এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী বলেন, পর্ষদের কাছ থেকে কোনো প্রকার চাপ নেই। এটি সত্য যে আমরা তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিই, নিতে হয়। কারণ আমরা পেশাদার ব্যাংকার হিসেবে পরিচালকদের কাছ থেকে পরামর্শ নেই।

খরচ বাড়ছে ব্যাংকের : নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন নীতিমালার কারণে বর্তমানে ব্যাংকিং ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়ছে জানিয়ে সেলিম হোসেন বলেন, গত ২০২১২২ অর্থবছর থেকে ব্যাংক হিসাব, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক ঋণের বিষয়ে এনবিআরের বিভিন্ন কর আরোপের যে নীতি চালু হয়েছে তা নিয়ে আমরা বলেছি, একটু সময় দিয়ে ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী আমরা প্রভিশনও বকেয়া রাখি সে বিষয়ে এনবিআরকে সহনীয় হতে আমরা লিখিত আকারে প্রস্তাব দেব এ সপ্তাহের শেষের দিকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে রওনা হলেন প্রথম সৌদি নারী
পরবর্তী নিবন্ধবাগানে বন্যহাতির দল, ভাঙল ১২শ ফল গাছ