ঠাঁই নেই গুদামে, গম নিয়ে বন্দরে অলস ভাসছে জাহাজ

মজুদ গমের হিসেব নিয়ে গরমিল

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৪:১২ পূর্বাহ্ণ

ঠাঁই নেই গুদামে। খাদ্যশস্য খালাসে জায়গা না থাকায় অলস চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে বাইরে অলস ভাসছে জাহাজ। চট্টগ্রাম সাইলো থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ খাদ্য শস্য ট্রাকে বোঝাই করা সম্ভব হয় ঠিক সে পরিমাণ চাল গম নামে জাহাজ থেকে। চট্টগ্রাম সাইলোতে এক লাখ পাঁচ টন পর্যন্ত গম রাখার রেকর্ড থাকলেও ৯৬ হাজার টন গম রাখার পর গতকাল গম রাখার মতো আর জায়গা ছিল না। সাইলোতে মজুদকৃত গমের হিসেব নিকেশের সাথে বাস্তবে রক্ষিত গমের হিসেবে কোনো গরমিল রয়েছে কিনা তা নিয়েও ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বহু আগ থেকে অভিযোগ রয়েছে যে, সাইলো থেকে সরবরাহকালে ওজনে কম দিয়ে চুরি করা গমের একটি বড় অংশ সাইলোতে রয়ে যাওয়ায় ধারণক্ষমতার হিসেবে গোলমাল দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অবশ্য সাইলো কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করে পুরো বিষয়টি একেবারে আজগুবি বলে মন্তব্য করেছে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশে সরকারি গুদামগুলোতে প্রচুর খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। গতকাল দেশে চাল এবং গম মিলে ১৮ লাখ টনেরও বেশি খাদ্যশস্য রয়েছে। সরকারিভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ লাখ ৩০ হাজার টন চাল ও গম কেনা হচ্ছে। এর মধ্যে ভিয়েতনাম থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল, মিয়ানমার থেকে ২ লাখ টন চাল এবং ভারত থেকে ১ লাখ টন চাল কেনা হয়েছে। রাশিয়া থেকে আমদানি করা হচ্ছে ৫ লাখ টন গম। এসব চাল ও গম রাখার জায়গার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে গম রাখার জায়গার হাহাকার চলছে। চট্টগ্রাম সাইলোতে নামানোর জন্য গমের জাহাজের দীর্ঘ সারি চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে এবং বাইরে অপেক্ষা করছে।

গত বেশ কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে দুইটি মাদার ভেসেল সাইলোতে গম খালাসের অপেক্ষায় অলস বসে রয়েছে। এরমধ্যে এমভি ক্যাসল বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। এই জাহাজটি থেকে বিশ হাজার টন গম সাইলোতে খালাস করার কথা। জাহাজটি থেকে বিপুল পরিমান গম লাইটারেজ জাহাজে খালাস করার পরও সাইলোতে নামানোর সুযোগ না পাওয়ায় দিনের পর দিন জাহাজটিকে ভাসতে হচ্ছে। অপরদিকে এমভি এস এস ভিক্টোরি নামের অপর একটি জাহাজও কুতুবদিয়ার অদূরে সাগরে ভাসছে। ৫৫ হাজার টন নিয়ে আসা এই জাহাজটির ৬০ শতাংশ গম চট্টগ্রামে এবং ৪০ শতাংশ গম মোংলায় খালাস করার কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম সাইলোতে জায়গা না পাওয়ায় এই জাহাজটি অলস বসে আছে। এছাড়া প্রায় ৪৫ হাজার টন গম নিয়ে চট্টগ্রাম সাইলোতে খালাস করার অপেক্ষায় ভাসছে ২২ টি লাইটারেজ জাহাজ।

গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম সাইলোতে গম নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সারাদিনে ট্রাকে বোঝাই করে সাইলো থেকে এক হাজার টনের মতো গম সরবরাহ দেয়া হয়। ওই এক হাজার টনের মতো গমই পরে জাহাজ থেকে খালাস করা হয়। যেখানে এক দিনে ৪/৫ হাজার টন গম সাইলোতে গ্রহণ করা হতো সেখানে এখন মাত্র এক হাজার টন গম গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে করে অলস ভাসতে থাকা জাহাজগুলো কবে নাগাদ গম খালাস করে মুক্ত হতে পারবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

গতকাল চট্টগ্রাম সাইলোতে মজুদকৃত গমের পরিমান ছিল ৯৬ হাজার টন। চট্টগ্রাম সাইলোর ধারণক্ষমতা ১ লাখ টন। এই সাইলোতে অতীতে এক লাখ পাঁচ হাজার টন গম রাখার রেকর্ড রয়েছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে যে, এক লাখ টন ধারণক্ষমতা কিংবা এক লাখ পাঁচ হাজার টন রেকর্ডের বিপরীতে ৯৬ হাজার টনে গিয়ে গম নামানো গ্রহণ বন্ধ করতে হচ্ছে কেন। বিষয়টি নিয়ে অতীতেও বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে। ওজনে কম দেয়ার মাধ্যমে গম চুরির অভিযোগ এনে সাইলো থেকে গম নেয়া বন্ধ করে দেয়ার মতো ঘটনাও অতীতে ঘটেছে। অভিযোগ করা হয় যে, ৫০ কেজির বস্তাগুলোতে ৪৮/৪৯ কেজি গম বোঝাই করে সরবরাহ দেয়া হয়। ট্রাকসহ ওজন করে দেয়ার সময়ও স্কেলে গোলমাল করে রাখা হয়। যাতে সাইলোর স্কেলে ওজন ঠিকঠাক থাকলেও বাইরের স্কেলে ওজন কমে যায়। যাতে পরিবহন ঠিকাদারদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো অভিযোগ করেছে যে, ওজনে কম দিয়ে যে বিপুল পরিমান গম চুরি করা হয় সেগুলো সময় সুযোগ বুঝে সরবরাহ দেয়া হয়। বিশেষ করে রেল পথে সরবরাহ দেয়াকালে এসব গম সাইলো থেকে পাচার করা হয়। চোরাই গমের বিশাল এক সিন্ডিকেট পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে সাইলোতে চোরাই গমের বিশাল স্টক গড়ে উঠায় জাহাজ থেকে গম খালাস কম করতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

সাইলো কর্তৃৃপক্ষের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে চট্টগ্রাম সাইলোর এসিসটেন্ট মেইন্টেনিং ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জাহেদ মাহবুব বলেছেন, এটি একটি অযৌক্তিক অভিযোগ। এমন অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। ওজন করে গম সরবরাহ দেয়া হয়। কেউ এক কেজি গমও কম নেবে না। এটি অস্বাভাবিক। সবাই নিজের গম বুঝে নেয়ার পরই কাগজে স্বাক্ষর করে। এখন ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ করলে হবে কেন? তিনি ধারণক্ষমতার ব্যাপারটি নিয়ে ব্যাখা দিয়ে বলেন, একই সাথে কয়েকটি জাহাজের গম আসায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। না হয় সমস্যা হতো না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বর্ণ গলিয়ে বানানো হয় কয়েল দুবাই থেকে আসা যাত্রী আটক
পরবর্তী নিবন্ধমান্ধাতা আমলের নয়, শহরকে বাঁচাতে চাই উন্নত পরিকল্পনা : মেয়র