ট্রেন দুর্ঘটনা ঠেকাতে তদন্ত কমিটির ১১ সুপারিশ

দ্বিতীয় প্রতিবেদনেও গেটকিপার-মাইক্রোবাস চালককে দায়ী মীরসরাইয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৪ আগস্ট, ২০২২ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাইয়ে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের ১৩ জন নিহতের ঘটনায় মাইক্রোবাস চালক ও গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে দায়ী করেছে রেলওয়ের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে লেভেল ক্রসিংয়ে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম বা সাইরেনের ব্যবস্থাসহ ১১টি সুপারিশ করেছে কমিটি। তবে দুর্ঘটনার জন্য মাইক্রোবাস চালক গোলাম মোস্তাফার নিরুর দায় বেশি বলছে রেলওয়ের গঠিত আরেকটি তদন্ত কমিটি।
এর আগে গত ১৬ আগস্ট রেলওয়ের বিভাগীয় পর্যায়ের পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি এই দুর্ঘটনার জন্য গেটম্যান ও মাইক্রো চালককে দায়ী করে। ওই কমিটির প্রধান ছিলেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলী। ওই কমিটির প্রতিবেদনেও দুর্ঘটনার জন্য মাইক্রোবাস চালক ও গেটম্যানকে দায়ী করা হয়। তখন দুর্ঘটনা রোধে ছয়টি সুপারিশ করে কমিটি। এবার জিএম-এর দপ্তর থেকে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন ১১টি সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রেলওয়ের চার সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেন। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রেলপথ) আরমান হোসেন। বাকি সদস্যরা হলেন-অতিরিক্ত প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা জাকির হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মোস্তফা জাকির হোসেন ও অতিরিক্ত প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী তারেক মো. শামস তুষার। ট্রেন দুর্ঘটনা ঠেকাতে তদন্ত কমিটির ১১ সুপারিশ : প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্মিং বা সাইরেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ট্রেন নির্ধারিত দূরত্বে এলে সাইরেন বেজে উঠবে। প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে স্বয়ংক্রিয় গেট রাখতে হবে। কেউ চাইলেও যেন তুলে ফেলতে না পারে। লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত গেটম্যানদের খাকি পোশাক দিতে হবে। লেভেল ক্রসিংগুলোয় নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা, ক্রসিংয়ে গেটম্যানদের ঘরে ল্যান্ডফোনের ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎসংযোগ দিতে হবে। প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় লেভেল ক্রসিংয়ে অন্তত তিনজন গেটম্যানকে দায়িত্ব দেওয়ার কথাও সুপারিশে বলা হয়েছে। তাদের জন্য আবাসনের সুবিধা রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া লেভেল ক্রসিং এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। লেভেল ক্রসিংয়ের আগে স্বল্প উচ্চতার গতিরোধক স্থাপন করা, লেভেল ক্রসিং এলাকায় পারাপারের নিয়মকানুন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানোর কথাও সুপারিশে বলা হয়েছে।
এছাড়াও তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার সময় গেটম্যান ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে উল্লেখ করেছেন। তবে লেভেল ক্রসিংয়ের উভয়পাশে ব্যারিয়ার ফেলে রেখে গিয়েছিলেন তিনি। তবে কেউ একজন এক পাশের ব্যারিয়ার তুলে ফেলে। এরপর মাইক্রোবাস গেলে অপর প্রান্তে থাকা ব্যারিয়ারে আটকা পড়ে। মাইক্রোর চালক হয়তো মনে করেছিল ট্রেন আসার আগেই চলে যেতে পারবে। কিন্তু পারেনি। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এতোগুলো মানুষ মারা গেছে। তাই দুর্ঘটনার জন্য গেটম্যানের চেয়ে মাইক্রোর চালকের দায় বেশি বলছে তদন্ত কমিটি।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আজাদীকে বলেন, প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য গেটম্যান ও মাইক্রোবাসের চালককে দায়ী করা হয়েছে। এছাড়াও লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে কমিটি ১১টি সুপারিশ করেছে। গেটকিপার সাদ্দাম হোসেনকে চাকরিচ্যুত করতে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। তিনি রেলওয়ের স্থায়ী কর্মী নন। একটি প্রকল্পের আওতায় গেটকিপারের দায়িত্বে ছিলেন। তদন্ত প্রতিবেদনে দায়ী করা চালক গোলাম মোস্তফা নিরু দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে নিহত হন। তদন্ত কমিটি বলছে, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন, স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য, ট্রেন চালক, পরিচালক (গার্ড), গেটম্যান ও দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নিয়েছেন। তাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই দুপুর দেড়টায় মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী ট্রেন খৈয়াছড়া ঝরনা থেকে আসা একটি পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয়। এ সময় মাইক্রোবাসটিতে চালক-হেলপারসহ ১৮ জন ছিল। তারা হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজার এলাকার একটি কোচিং সেন্টার থেকে মীরসরাইয়ে পিকনিকে গিয়েছিল। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মাইক্রোর চালকসহ ১১ জন মারা যান। পরবর্তীতে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ২জন মারা যান। সব মিলে এই দুর্ঘটনায় মোট ১৩ জন ছাত্র শিক্ষক নিহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনার কারণ জানতে রেলওয়ের পক্ষ থেকে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমধ্যবিত্তের জনজীবন দুঃখ ও হাহাকারে পূর্ণ
পরবর্তী নিবন্ধযৌতুক আধুনিক সমাজ জীবনের এক মারাত্মক ব্যাধি