ক্যাপিটলে তার সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলার পর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এককাট্টা ডেমোক্র্যাটরা। ট্রাম্পের উপর চাপ বাড়িয়ে শুক্রবার ডেমোক্র্যাট নেত্রী তথা হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়ে দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট পদ থেকে এখনই পদত্যাগ না করলে ট্রাম্পকে ইমপিচ করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। বস্তুত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের মেয়াদ আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন। তার মধ্যে পেলোসির হুঙ্কারে অনেকটা ব্যাকফুটে চলে যেতে হল ট্রাম্পকে।
শুক্রবার ডেমোক্র্যাটদের দীর্ঘ বৈঠকের পর, বিবৃতি দিয়ে পেলোসি বলেন, ‘আমি আশা করব, প্রেসিডেন্ট দ্রুত ইস্তফা দেবেন। যদি না করেন তা হলে রুলস কমিটি (নীতি সংক্রান্ত কমিটি)-কে বলে রেখেছি, তারা যেন তাকে ইমপিচ করার প্রস্তাব আনে।’ হাউস সব পথ খোলা রেখেছে বলেও জানিয়েছেন পেলোসি।
পেলোসির সুর শোনা গিয়েছে কংগ্রেস সদস্য তথা ডেমোক্র্যাট নেত্রী প্রমীলা জয়পালের গলাতেও। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে তিনি বলছেন, ‘এখনই তাকে ইমপিচ করা হোক।’ পেলোসির বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে ডেমোক্র্যাট নেতা কাইয়ালি কাহেলেও দাবি তুলেছেন ট্রাম্পকে ইমপিচ করার। তঁর মতে, হিংসায় উস্কানি দেন এমন প্রেসিডেন্টকে আমেরিকা চায় না। তার অভিযোগ, যত দিন ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে থাকবেন আমেরিকার বিপদের আশঙ্কাও ততই বাড়বে।
বিবিসি জানায়, আগামী সোমবার হাউজ ডেমোক্র্যাট থেকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘সহিংসতায় উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগ উত্থাপন করা হবে। তাদের অভিযোগ, গত বুধবার ক্যাপিটলে কংগ্রেসের অধিবেশন চলাকালে ট্রাম্প সমর্থকরা যে তাণ্ডব চলায় তার উসকানিদাতা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে। ওই সহিংসতায় এক পুলিশ কর্মকর্তা এবং এক নারীসহ চার ট্রাম্পভক্ত নিহত হয়েছেন। নিহত নারী মার্কিন বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন। এ বিষয়ে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিশংসিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কংগ্রেস। তবে আমার মনে হয়, তিনি দীর্ঘ মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করার জন্য একদমই উপযুক্ত নন। এদিকে, হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে অভিশংসনের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়, ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এটা করা হচ্ছে। যদি সত্যিই অভিংশসন প্রস্তাব আনা হয় তবে তাতে আমাদের এই মহান দেশকে আরো বিভক্ত করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো লাভই হবে না।’ যদি ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব নিয়ে সত্যিই অগ্রসর হন তবে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো প্রেসিডেন্টকে দ্বিতীয়বারের মত অভিশংসিত করার চেষ্টা হবে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে জিততে বিদেশি সহায়তা চাওয়ার অভিযোগে ট্রাম্প এরই মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদে একবার অভিশংসিত হয়েছেন; তবে তাকে তখন ক্ষমতা থেকে সরানো যায়নি। সেনেট তাকে ওই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। এবারও অভিশংসনের মাধ্যমে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা কতটা সফল হবে তা বলা মুশকিল। কারণ, ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদই আছে আর মাত্র ১১ দিন। নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি জো বাইডেনের কাছে হেরে গেছেন। আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন বাইডেন। ওই দিন ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটে এখনো রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।