ট্রফি কার হাতে ফয়সালা আজ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | রবিবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর্দা নামবে আজ। প্রায় এক মাসের লম্বা ভ্রমণ শেষে আজ থামছে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচাইতে রোমাঞ্চকর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের জার্নি। শেষটা রাঙাতে আজ বাংলাদেশ সময় ২টায় ফাইনালে মাঠে নামছে পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ড। ১৯৯২ সালের পর আবারো এই দুই দল কোনো বিশ্ব আসরের ফাইনালে খেলতে নামছে। তাও আবার সেই ৩০ বছর আগের ভেন্যু অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক ক্রিকেট গ্রাউন্ড মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। সেবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে এই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার এবং একমাত্র বিশ্বকাপ ট্রফিটা জিতেছিল ইমরান খানের পাকিস্তান। এবার বাবর আজমের সামনে সেই সুযোগের হাতছানি। ইমরান যখন বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তখন এই দলের অনেকের জন্মই হয়নি। তারপরও সেই দিনের স্মৃতি আজকের ম্যাচে বাবর আজমদের সামনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে তাতে
কোনো সন্দেহ নেই। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের পথ চলাটাও যেন সেই ১৯৯২ সালের মতই। টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়তে পড়তে শেষ পর্যন্ত সেবার ট্রফি জিতেছিল ইমরানের দল। এবারেও বাদ পড়তে পড়তে শেষ পর্যন্ত ফাইনালের মঞ্চে বাবর আজমের দল। এখন দেখার বিষয় ইমরান হতে পারেন কিনা বাবর আজম। নাকি জস বাটলার ৩০ বছর আগের গ্রাহাম গুচের আক্ষেপ ঘুচিয়ে মধুর প্রতিশোধ নেয়।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ড দু’দলের পথচলা ছিল একেবারেই ভিন্ন। বলা যায় একেবারে বিপরীত মেরুর। হার দিয়ে শুরু করা পাকিস্তান পরপর দুই ম্যাচে হেরে বাদ পড়ার শংকায় পড়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের জোরে জায়গা করে নেয় সেমিফাইনালে। কিন্তু সেই সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে দেখা গেল ভিন্ন এক রূপে। অপরদিকে ফেভারিটের তকমা নিয়ে আসা ইংল্যান্ড শুরুটাও করেছিল ফেভারিটের মতই। কঠিন গ্রুপ থেকে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেলে জায়গা করে নেয় সেমিফাইনালে। আর সেমিফাইনালে শক্তিধর ভারতকে তুলোধুনা করে পৌঁছে গেল ফাইনালে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে প্রথম কোনো দল হিসেবে ১০ উইকেটে ভারতকে হারিয়ে শিরোপার লড়াইয়ে এখন জস বাটলারের দল। তাই একদিকে ধারাবাহিক ইংল্যান্ড আর অন্যদিকে ধুকতে ধুকতে চূড়ায় এসে বসা পাকিস্তান। আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান কখন কি করে বসে সেটা বুঝা মুশকিল। তাই আজকের ফাইনাল নিয়ে অনুমান করাটা মুশকিলের কাজ।
যদিও শক্তি, সামর্থ্যে দু’দল প্রায় সমান হলেও পরিসংখ্যান কথা বলছে ইংল্যান্ডের পক্ষে। কিন্তু পাকিস্তান এমন একটি দল যারা এসবের ধার ধারে না। যেকোনো সময় যেকোনো কিছুকে ফুৎকারে যেমন উড়িয়ে দিতে পারে তেমনি নিজেরাও আবার খড়-খুটোর মত উড়ে যেতে পারে। দু’দলের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে অনেক এগিয়ে ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দু’দলের ২৮ মোকাবেলার ১৮টি জয় ইংল্যান্ডের। ৯টি জয় পাকিস্তানের। একটি ম্যাচের ফল হয়নি। আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও শতভাগ এগিয়ে ইংল্যান্ড। দু’দলের দুই মোকাবেলায় দুটিতেই জিতেছে ইংল্যান্ড। ২০০৯ সালে ৪৮ রানে এবং ২০১০ সালে ৬ উইকেটে। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালটা দু’দলেরই তৃতীয়বার ফাইনালে যাওয়া। দু’দলই শিরোপা জিতেছে একবার করে। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে ফাইনালে খেলেছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত এবং পাকিস্তান। সেবার শেষ হাসি হেসেছিল ভারত। পরের আসরে অর্থাৎ ২০০৯ আবার ফাইনালে পাকিস্তান। এবার শ্রীলংকাকে হারিয়ে প্রথমবারের মত শিরোপা জিতে পাকিস্তান। অপরদিকে ২০১০ সালে ফাইনালে উঠে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথম শিরোপা জিতে নেয় ইংলিশরা। ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বার ফাইনালে ইংল্যান্ড। কিন্তু এবার তারা হেরে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। এবারে যারা জিতবে তারা তো এগিয়ে যাবেই, সে সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাশে বসবে দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়ী হিসেবে।

আজকের ফাইনালে দু’দলের ওপেনারদের মধ্যে লড়াইটা বেশ ভালোভাবেই হবে সেটা বলা যায় নিশ্চিত করে। তবে দু’দলের বোলিংও প্রায় সমানে সমান। বিশেষ করে পেস আক্রমণে। শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম, হারিস রউফদের জবাব হতে পারে স্যাম কারেন, বেন স্টোকস, ক্রিস ওকসরা। স্পিনেও দুদল সমানে সমান। পাকিস্তানের যেমন রয়েছে নেওয়াজ, শাদাব তেমনি ইংল্যান্ডের রয়েছে মঈন আলী, আদিল রশিদ। তাই লড়াইটা হবে সেয়ানে সেয়ানে। তাই এখন দেখার বিষয় পাকিস্তান ফিরিয়ে আনতে পারে কিনা ১৯৯২ সালের স্মৃতি নাকি প্রতিশোধ তুলে নেয় ইংল্যান্ড।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেই শিশুটি মারা গেছে
পরবর্তী নিবন্ধ৪৯ লাখ টাকার এলইডির আলো কম, তাই গোল বাল্ব