ঢাকার মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতি হত্যা মামলায় ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ তালুকদারসহ ৩৩ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আলী হোসাইন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য আগামী ২১ মে দিন ঠিক করে দেন। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও জাতীয় পার্টির একাধিক পদধারী নেতা এবং সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রফিক উদ্দীন বাচ্চু বলেছেন, অভিযোগ গঠনের সময় আসামিরা নিজেদের ‘নির্দোষ দাবি করে’ ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। খবর বিডিনিউজের। গত বৃহস্পতিবার এ মামলায় ৩৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি হয়। ওইদিন অভিযোগ গঠনের জন্য সোমবার দিন ঠিক করেছিলেন বিচারক। ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাতে ঢাকার শাজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। খিলগাঁও রেল গেইটের কাছে মোটরসাইকেলে আসা এক ব্যক্তি যানজটে আটকে পড়া টিপুর গাড়ির কাছে এসে তাকে গুলি করে। হামলাকারীর এলোপাতাড়ি গুলিতে গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী প্রীতিও মারা যান। এ হত্যাকাণ্ড ওই সময় আলোচনা তৈরি করে। ওই রাতেই টিপুর স্ত্রী স্থানীয় নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় পরের বছর ৫ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার। সেখানে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ‘সত্যতা’ পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়। তবে ‘এঙএল সোহেল’ নামে এক সন্দেহভাজনের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারায় তাকে বাদ দিয়ে আসামি করা হয় ৩৩ জনকে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি, এলাকায় আধিপত্য ও মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জেরে হত্যা করা হয় টিপুকে।
অভিযুক্ত আসামিরা হলেন– ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মারুফ আহমেদ মনসুর, জিসান আহম্মেদ মন্টু, মানিক ওরফে জাফর, সুমন সিকদার মুসা, মাসুম মোহাম্মদ আকাশ, শামীম হোসাইন, তৌফিক হাসান ওরফে বাবু, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মারুফ রেজা সাগর, ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরিফুর রহমান ওরফে সোহেল।
এছাড়া মতিঝিল থানা জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, হাফিজুল ইসলাম হাফিজ, হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সোহেল শাহরিয়ার, মাহবুবুর রহমান টিটু, নাসির উদ্দিন মানিক, মশিউর রহমান ইকরাম, ইয়াসির আরাফাত সৈকত, আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান, সেকান্দার শিকদার আকাশ, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম মাতবর, আবু সালেহ শিকদার, কিলার নাসির, ওমর ফারুক, মোহাম্মদ মারুফ খান, ইশতিয়াক আহম্মেদ জিতু, ইমরান হোসেন জিতু, রাকিবুর রহমান রাকিব, মোরশেদুল আলম পলাশ, রিফাত হোসেন, সোহেল রানা, ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক নেতা আমিনুল, সামসুল হায়দার উচ্ছল এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামানেরও বিচার হবে এ মামলায়।
এই ৩৩ জনের মধ্যে জিসান আহমেদ মন্টু, মো. মানিক, মো. রিফাত, মো. সোহেল রানা, মো. আমিনুল, মো. কামরুজ্জামান পলাতক। আসামিদের মধ্যে মুসা, শুটার আকাশ ও নাসির উদ্দিন মানিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪) ছিলেন ঢাকার মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন তিনি।
মতিঝিল এজিবি কলোনির গ্র্যান্ড সুলতান রেস্তোরাঁর মালিক টিপু ঠিকাদারির কাজও করতেন। দুই মেয়ে, এক ছেলের জনক টিপু থাকতেন শাহজাহানপুরে।