টিপু খুন হন আওয়ামী লীগ নেতার পরিকল্পনায়

ঢাকা-দুবাই সংযোগ, গ্রেপ্তার ওমর ফারুককে দল থেকে বহিষ্কার

| রবিবার , ৩ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

একটি খুনের মামলা থেকে বাঁচতে জোট বাঁধে চার আসামি আর ছিল নয় বছর আগের আরেক খুনের প্রতিশোধ স্পৃহাও; সঙ্গে চাঁদাবাজি, দরপত্র ও এলাকা নিয়ন্ত্রণে আধিপত্যের সেই পুরনো দ্বন্দ্বেই প্রকাশ্যে খুন হন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু। ঢাকার শাহজাহানপুরে টিপু খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে উঠে আসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকের (৫২) নাম। তিনিসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল-মঈন এ তথ্য জানান। এদিকে টিপু খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন ওমর ফারুক।
গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন- আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির (৩৮) এবং মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ (৫১)। র‌্যাব জানিয়েছে, মুগদা, শাহজাহানপুর ও মিরপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের সময় নজরদারির কাজে ব্যবহার করা মোটর সাইকেল এবং হত্যার জন্য দেওয়া ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
টিপু এক সময় মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু ২০১৩ সালে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক মিল্কী হত্যামামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলে পদ হারান তিনি। পরে অবশ্য ওই মামলা থেকে টিপু অব্যাহতি পান বলে তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন। তিনি দলীয় পদ আর ফিরে না পেলেও তার স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি ওই এলাকার নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর। যে ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ফারুক গ্রেপ্তার হয়েছেন, সেই ১০ নম্বর ওয়ার্ডে টিপুর রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেখানে তিনি নিয়মিত বসতেন। এছাড়া জাতীয় ক্রীড়া পরিষদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি করতেন টিপু। পাশাপাশি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও ছিলেন তিনি।
হত্যার কারণ হিসেবে র‌্যাব বলছে, চাঁদাবাজি ও দরপত্র নিয়ে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব, রিয়াজুল হক মিল্কী হত্যার বদলা এবং বোঁচা বাবু হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। র‌্যাব মুখপাত্র আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার চারজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় সম্পৃক্ততা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে। ‘দীর্ঘদিন যাবৎ মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে টিপু ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান ছিল।
হত্যাকাণ্ড দেশে হলেও তার নিয়ন্ত্রণ দুবাইয়ে হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, দেশ থেকে কিলার নাছির, কাইল্লা পলাশসহ আরও কয়েকজন জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে বেশ কয়েকদিন যাবত মুসার কাছে তথ্য প্রেরণ করত। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর কিলার নাছির আনুমানিক চারবার জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসাকে অবহিত করে। টিপু হত্যাকাণ্ডের পর ঘুরেফিরে আসছে সুমন শিকদার মুসার নাম, যিনি তালিকাভুক্ত শীর্ষসন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশের সহযোগী বলে পুলিশের ভাষ্য। তিনি বলেন, টিপুকে খুন করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা অপরাধজগতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন; বাজেট ছিল ১৫ লাখ। রাজনীতি ও অপরাধজগতের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঢাকা ও দুবাইয়ের মধ্যে সংযোগের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন আগেই মুসা দুবাই চলে যান। হত্যা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা এবং সেখান থেকেই কলকাঠি নাড়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পর দুবাইতে বার্তা যায় কাজ শেষ (ইট ইজ ডান)।
প্রসঙ্গত, শাহজাহানপুরের আমতলী এলাকার রাস্তায় গত ২৪ মার্চ রাতে অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন টিপু (৫৪)। তার মাইক্রোবাসের পাশে দাঁড়িয়ে গুলি ছোড়ে হেলমেটধারী আততায়ী। ওই সময় গাড়ির কাছেই রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়ি চালক মুন্না। মাত্র মিনিটখানেকের মধ্যে কাজ সেরে হামলাকারী সড়ক বিভাজক টপকে গুলি করতে করতে রাস্তার অন্য পাশে অপেক্ষায় থাকা একটি মোটরসাইকেলে উঠে পালিয়ে যান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচরম আর্থিক সংকট, জরুরি অবস্থা জারি শ্রীলঙ্কায়
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এখনো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে