টিকে থাকুক মৃৎ শিল্প, স্বাবলম্বী হোক শিল্পীরা

রিপন সেন গুপ্ত | বৃহস্পতিবার , ২১ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চৈত্রের তীব্র তাপের শেষ প্রহরে কালবৈশখী আগমনের শীতল হাওয়া বৈশাখ। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আজো গুটিকয়েক স্থানে ঘুর্ণি চাকার ধ্বনি। কর্মের চাকা ঘুর্ণিপাক, ভাগ্যেরটা হালকা বাতাস। বংশ পরম্পরায় মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ব্যবহারে উপকারী হলেও আজ কালের গ্যাড়াকলে বিলুপ্ত প্রায়। মানব সভ্যতার গোড়াতেই তাদের হস্ত শিল্প হিরাতুল্য। সৃষ্টিতে খাদ্য, বাসস্থান উপাদানের শিল্পী হলেও আধুনিকতায় ঘরে বাইরে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির কারুকার্যে কম কিছু নয়।

পদবী ‘কুমার’ অতীতে ‘মৃৎ শিল্পী’ আজ। কর্মের রসায়ন প্রকৃতি প্রাপ্য। শুরুতে রাজা নবাবদের প্রাসাদ অভ্যন্তরে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি, নববর্ষ মেলায় শিশুদের খেলনা, গ্রামে ভিন্ন সাজ বাড়ি-বিয়ের ভোজনে তৃষ্ণার পাত্র, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবে সৃষ্টিতে অসাধারণ স্থপতি। জনপ্রিয়তার সৃষ্টি ‘কলসি’ যা পূর্বে প্রতি ঘরে একটি না থাকলেই যেন নয়। গোষ্ঠীগত সংখ্যা গ্রামকেন্দ্রিক, শহরে বেশ বেমানান।

স্বল্প চাহিদায়, কর্মের প্রাপ্তি খুবই অল্প। পরের প্রয়োজনীয়তা মিটালেও নিজ পরিবারে দর্শক, অন্যের ঘরে সৌন্দর্য্যে আলো এদিক সেদিক, নিজ ফুটো বাড়িতে চন্দ্র-সূর্যের মুখ। আহার পাত্র কর্মের তৈরি কিন্তু নিজ অসচ্ছল পরিবারে দানার অভাব। প্রকৌশলী হাতে খড়ি বস্তু, অন্যের সন্তানের শিক্ষা অভিষেক আর নিজ সন্তানের হাতেখড়ি, ঘুরন্ত চাকাতে। অর্থ অভাব বিনা চিকিৎসায় প্রিয়জনদের অকালে হারানো অভ্যাসে পরিনত। তবুও পেশা ছাড়ার মনটা ভিখারী। আধুনিকতার ছোঁয়ায় যান্ত্রিক যন্ত্রে আভিজাত্যের বস্তু সৃষ্টিতে আজ তাদের ভূমিকা পুকুর সমান। বংশ পরম্পরায় পেশা বাঁচাতে চাইলেও যুগের তালে অনেকের পরিবর্তন লক্ষণীয়। তাদের আজ দেখা মেলা ভার। আদি সংস্কৃতি, পেশা, আধুনিক যুগে বিলুপ্ত প্রায়।

যার দরুন আজ ডিজিটালে মানুষ হস্ত শিল্প বাদে স্বল্প সময়ে যান্ত্রিক শিল্পের উপর নির্ভরশীল। অতীত আর ঐতিহ্য ভুলে যাওয়া ঠিক নয়, সময় পরিবর্তনে বারে বারে ফিরে আসে। আজও তাদের আমরা খুঁজি বছরে একবার, নববর্ষে বা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসবে। তারা বাঁচুক স্বাবলম্বীতায় আর পেশা টিকে থাকুক আজীবন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৈশাখী উৎসব বাঙালি ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক
পরবর্তী নিবন্ধহাড়ির খবর