টিকা পেয়ে উচ্ছ্বসিত তৃতীয় লিঙ্গের ৩০০ জন

বেদে সমপ্রদায়ের ১৫০ জন পাবেন বৃহস্পতিবার

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৩ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

বিশেষ কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় লিঙ্গের ৩০০ জন টিকা পেলেন চট্টগ্রামে। গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বিশেষ বুথ স্থাপনের মাধ্যমে তাদের টিকা দেয়া হয়। বিশেষ করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকাসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে টিকার জন্য অনলাইনে যাদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ নেই এবং যারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন নি এ ধরনের জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে বিশেষ এই কর্মসূচি স্বাস্থ্য বিভাগের। তৃতীয় লিঙ্গের এ জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। নেই জন্ম নিবন্ধন সনদও। যার কারণে করোনার টিকার জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনেরও সুযোগ ছিলনা অনেকটা অবহেলিত এ জনগোষ্ঠীর। এখন রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই টিকা নিতে পেরে বেশ উচ্ছ্বাস দেখা গেছে তাদের চোখে-মুখে। বিশেষ কর্মসূচির আওতায় কেবল তালিকার ভিত্তিতেই তাদের টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর একটি সংগঠন এ তালিকা তৈরি করেছে। যা পরবর্তীতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়। যদিও এ জনগোষ্ঠীর ৫০০ জনকে টিকা প্রয়োগের টার্গেট ছিল। কিন্তু টিকা নিতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন ৩০০ জন। দুপুর দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর এ টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এদিকে, এবার বেদে জনগোষ্ঠীর ১৫০ জনকে টিকা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। আগামী ২৫ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সিভিল সার্জন কার্যালয়ে তাদের টিকা দেয়া হবে। তৃতীয় লিঙ্গের সংগঠন নবজাগরণ হিজরা শ্রমজীবী সমবায় সমিতির পরিচালক ফাল্গুনী হিজরার আবেদনের প্রেক্ষিতে বেদে জনগোষ্ঠীর ১৫০ জনকে টিকা প্রয়োগের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. আসিফ খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিশেষ কর্মসূচির আওতায় বস্তিবাসীদের টিকাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

দুপুর গড়াতেই টিকা নিতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন। বিশেষ এই জনগোষ্ঠীর সংগঠন ‘সূর্যের আলো’ ও ‘নবজাগরণে’র সদস্যরা তাদের সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে দেন। দুটি বুথে অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ সুশৃঙ্খলভাবেই তাদের টিকা প্রয়োগ সম্পন্ন হয়।
টিকা নিতে আগ্রহ থাকলেও জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকায় রেজিস্ট্রেশনের সুযোগই ছিলনা তৃতীয় লিঙ্গের ডেইজির। তবে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই সহজে টিকা নিতে পেরে ডেইজির প্রতিক্রিয়াও ছিল দেখার মতো। বেশ উচ্ছ্বাস ভরে ডেইজি বলেন, আমাদের তো এনআইডি, জন্ম নিবন্ধন কিছুই নেই। এজন্য ইচ্ছা থাকলেও রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাইনি। এখানে সহজে টিকা পেয়ে খুব ভালো লাগছে। খুব সুন্দর ভাবেই টিকা নিতে পারছি।
টিকা পেয়ে উচ্ছ্বসিত গোলাপী বলেন, এনআইডি না থাকায় টিকাই হয়তো পাবোনা বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু এখানে টিকা নিতে পেরে বেশ খুশি লাগছে।
তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সংগঠন নবজাগরণ হিজরা শ্রমজীবী সমবায় সমিতির পরিচালক ফাল্গুনী হিজরা বলেন, অন্য দশ জনের মতো আমাদেরও কিন্তু টিকা পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু এনআইডি, জন্ম নিবন্ধন না থাকায় আমরা রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগও পাইনি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করে কয়েকদিন আগে একটি সভায় সিভিল সার্জন স্যারকে আমাদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি মাত্র এক দিনের মধ্যেই আয়োজন করে আমাদের কাছে খবর পাঠান। সরকারসহ যাদের মাধ্যমে এ টিকা নেয়া সম্ভব হয়েছে, সকলের প্রতি ধন্যবাদও জানিয়েছেন এ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী ফাল্গুনী।
তৃতীয় লিঙ্গের এ জনগোষ্ঠী সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে খুবই সুশৃঙ্খলভাবেই টিকা নিয়েছেন বলে জানান এ টিকাদান কার্যক্রম সমন্বয়কারী টিমের সদস্য ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেয়াদ শেষে জেলা পরিষদেও প্রশাসক
পরবর্তী নিবন্ধমহামারীতে খুন-ডাকাতি কম, বেড়েছে ধর্ষণ