টিকা : জনগণের মধ্যে তৈরি হওয়া উৎসাহ-উদ্দীপনা ধরে রাখতে হবে

| শুক্রবার , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৮:২৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে মানুষ করোনার টিকা নিচ্ছেন। টিকা গ্রহণকালীন কারো মাঝে কোনো ধরনের ভয়-শঙ্কা চোখে পড়েনি। বরং টিকাদান কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি টিকা কর্মসূচি উদ্বোধনের পর থেকে টিকাগ্রহণকারী কারো শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোনো খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, টিকা গ্রহণে মানুষের উৎসাহ দিন দিন বাড়ছে। এতে করে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে চাপও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ একটি ঐতিহাসিক দিন। এদিন থেকে শুরু হলো বাংলাদেশে গণমানুষকে করোনার টিকা দেওয়ার জাতীয় কর্মসূচি। এদিন সম্মুখসারির যোদ্ধাসহ সারা দেশে ৩১ হাজারের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছে, যাদের মধ্যে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়, সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারাও ছিলেন। তাঁরা নিজেরা টিকা নিয়ে অন্যদেরও টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ এবং এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে যারা দ্বিধান্বিত, তারা ভরসা পাচ্ছে যে সরকারের উচ্চ কর্মকর্তারাও টিকা নিতে যখন এগিয়ে এসেছেন, তখন ভয়ের কোনো কারণ নেই।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ নিজেরা টিকা নেওয়ার পর দেশের মানুষকে কোনোপ্রকার গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে, সব সংশয় কাটিয়ে ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে নির্ভয়ে করোনার টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, টিকা নেওয়ার পর তারা আগের মতোই সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থা অনুভব করছেন। কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আসার আগে মানুষের মনে যে দ্বিধা ছিল, ভয় ছিল, তা সরে যাচ্ছে। সেই দ্বিধা কেটে যাচ্ছে; মন থেকে সরে যাচ্ছে ভীতি। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ায় এবং তাদের মধ্যে কারও দেহে ‘ভীতিকর’ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না যাওয়ায় এ টিকা গ্রহণে ক্রমেই বাড়ছে মানুষের আগ্রহ।
টিকাদান কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করতে সরকার ‘সুরক্ষা’ নামে একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করেছে। স্বাস্থ্যকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণমাধ্যমকর্মীসহ ১৫ শ্রেণিপেশার মানুষকে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিবন্ধন করা হচ্ছে।
টিকার নিবন্ধন করতে যেন কাউকে বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমানে টিকার নিবন্ধন করতে মানুষকে অনেক ধাপ অতিক্রম করতে হয়। নিবন্ধনের পর এসএমএস পেতেও যোগাযোগ করতে হয়। নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা যায় কিনা ভাবতে হবে। মানুষ যেন এক ধাপে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, বিষয়টি এভাবে হতে পারে যে, একদিন তিন-চারটি গ্রামের মানুষকে ডেকে ইউনিয়ন পরিষদে হাজির করে তাদের নিবন্ধন সম্পন্ন করা যেতে পারে।
সারা বিশ্বে মানুষ যেখানে টিকার জন্য ব্যাকুল, বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো যখন হন্যে হয়ে সর্বত্র টিকা খুঁজে বেড়াচ্ছিল, তখন বাংলাদেশ সরকার শুধু প্রথম দিনের জন্যই তার টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে সাড়ে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা পাঠিয়ে রেখেছিল। অস্বীকার করার উপায় নেই যে টিকা প্রশ্নে এটি সরকারের বড় সাফল্য। যাঁরা এ সাফল্যকে স্বীকার করতে চান না, তাঁরা সাধারণ মানুষকে টিকা না নেওয়ার জন্য বিভ্রান্তি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বিশ্বের পরিস্থিতি এবং গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে সাধারণ মানুষের স্বতঃপ্রবৃত্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে এসব অপপ্রচার মানুষ আর বিশ্বাস করছে না।
আমরা প্রত্যাশা করবো করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচির ব্যবস্থাপনাগত ব্যাপারে যেন কোনো সমস্যা না থাকে। কেননা এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় কর্মকাণ্ড এবং এর সঙ্গে বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলার সম্পর্ক রয়েছে। যদি কোথাও করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচিতে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সে সমস্যা দ্রুত বিবেচনায় নিয়ে দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। টিকা নিয়ে জনগণের মধ্যে যাতে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি ও ভয়ভীতি না থাকে, তা দূর করতে হবে। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে এ কর্মসূচি নিয়ে জনগণের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে