টাইগার পাসে র‌্যাম্প নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও গৃহায়ণ মন্ত্রীর ফোন ।। ‘নতুন ডিজাইন করুন যাতে র‌্যাম্পও হয়, গাছও বাঁচে’ আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সুশীল সমাজের সাথে বৈঠক

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ৪ এপ্রিল, ২০২৪ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীর টাইগারপাসে র‌্যাম্প হচ্ছে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ফোন করে র‌্যাম্প নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলেছেন। সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসকে ফোন করে ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কোনো গাছ কাটা যাবে না। বিকল্প চিন্তা করুন। নতুন ডিজাইন করুন যাতে র‌্যাম্পও হয়, গাছও বাঁচে। পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো কিছু করা যাবে না বলেও ড. হাছান মাহমুদ জানিয়ে দিয়েছেন।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপিও ফোন করে র‌্যাম্প নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একটি গাছও কাটা যাবে না। গাছ কেটে র‌্যাম্প হবে না। সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসকে ফোন করে মন্ত্রী উক্ত নির্দেশ প্রদান করেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তিনি সবার সাথে আলোচনা করে র‌্যাম্পের বিকল্প ডিজাইন তৈরি করার জন্যও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে আগামী দিনকয়েকের মধ্যে চট্টগ্রামের সুশীল সমাজের সাথে সার্কিট হাউজে বড় ধরনের বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ওই বৈঠকেই র‌্যাম্পের ভাগ্য নির্ধারিত হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র বলেছে, নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিমি দীর্ঘ দেশের সবচেয়ে বড় এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। পতেঙ্গা থেকে টাইহারপাস পর্যন্ত ফ্লাইওভারের রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন লাইট লাগানোসহ টুকটাক কাজ করা হচ্ছে। মূল এই অবকাঠামোর সাথে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ১৫টি র‌্যাম্প যুক্ত করা হবে। যাতে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টের মানুষ ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের সুফল ভোগ করতে পারেন।

মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হওয়ায় সিডিএ নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে র‌্যাম্প নির্মাণের দিকে মনযোগী হয়। এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের ১৫টি র‌্যাম্পের মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুইটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলা, সিইপিজেড ও কেইপিজেড পয়েন্ট দুটি করে র‌্যাম্প নির্মিত হবে। টাইগারপাসে আমবাগান রাস্তার সাথে সংযুক্ত র‌্যাম্পটি ইতোমধ্যে নির্মিত হয়ে গেছে। জিইসি মোড়ে র‌্যাম্প নির্মাণের পাইলিং শুরু হচ্ছে। টাইগারপাস মোড় থেকে কদমতলীর দিকের রাস্তার র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে সয়েল টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। আর এই র‌্যাম্প নির্মাণের সময় বিপুল সংখ্যক গাছ কাটার বিষয়টি সামনে আসে। সিডিএ বনবিভাগের কাছ থেকে ৪২টি গাছ কাটার অনুমোদন নিয়েছে। একই সাথে রেলওয়ের ১৪ শতক জায়গা ব্যবহারের জন্য অনুমতি চেয়েছে। বনবিভাগের পক্ষ থেকে শহরের সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা হিসেবে খ্যাত ওই সড়কটির পাশে শতবর্ষী গাছসহ অনেকগুলো গাছ মার্কিং করে দিয়ে এসেছে। গাছের গায়ে সাদা ও লাল কালির মার্কিং দেখেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়। যে কোনো মূল্যে এই গাছ রক্ষার অঙ্গীকার করেন পরিবেশবিদেরা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নগরীর টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ডমুখী নান্দনিক দোতলা রাস্তাটি শহরের অন্যতম নান্দনিক রাস্তা, এটি একটি আইকনিক সড়ক। এই রাস্তায় যেভাবে র‌্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে তাতে শুধু গাছই নয়, আইকনিক সড়কটিও জৌলুশ হারাবে। কিন্তু সিডিএর পক্ষ থেকে বলা হয় কোনো শতবর্ষী গাছ নয়, ৪২টি ছোট এবং মাঝারী আকৃতির গাছ কাটা পড়বে। এতে পাহাড় বা পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলেও তারা দাবি করেন। কিন্তু পরিবেশবাদীসহ সুশীল সমাজ সিডিএর এই বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে বলেন, ৪২টি নয়, একটি গাছও কাটতে দেয়া হবে না। দোতলা সড়ক এবং গাছগুলো চট্টগ্রামের সম্পদ। এগুলো নষ্ট করতে দেয়া হবে না।

পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে গাছ কাটার ব্যাপারটি প্রচার হলে মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে উঠে। মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের কর্মসূচি পালিত হয়। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গিয়ে দেখা করেন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সাথে। সিডিএ চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে একটি বিকল্প বের করার ব্যাপারে প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন। অপরদিকে চট্টগ্রামের নগর পরিকল্পনাবিদেরা একাধিক বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন।

গাছ রক্ষার জন্য চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ যখন একজোট তখনই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির এমপি একটি গাছও না কাটার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসকে ফোন করে বিকল্প পথ খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, একটি গাছও কাটা যাবে না। ওখানে র‌্যাম্প হবে না। গাছ এবং প্রকৃতি ধ্বংস না করে কিভাবে র‌্যাম্প নির্মাণ করা যায় সেটি নিয়ে কাজ করার জন্য তিনি সিডিএ চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

মন্ত্রীর নির্দেশনার পর সিডিএ চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। সিডিএ টাইগারপাসে র‌্যাম্প নির্মাণের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। গাছ না কেটে কিভাবে র‌্যাম্প তৈরি করা যায় সেটি নিয়ে একাধিক টিম কাজ করবে। তারা পৃথক পৃথক প্রস্তাবনা তৈরি করবে। এর আগে সিডিএ চেয়ারম্যান নগরীর সার্কিট হাউজে চট্টগ্রামের পরিবেশবাদীসহ প্রকৌশলী, সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলবেন। তিনি গাছ না কেটে কিভাবে র‌্যাম্প তৈরি করা যায় সেই বিষয়গুলো নিয়ে সকলের খোলামেলা মতামত নেবেন। সবগুলো বিষয় নিয়ে বিস্তারিত পরীক্ষা নিরীক্ষার পরই টাইগারপাসের র‌্যাম্পের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। তবে ইতোমধ্যে আইকনিক সড়কটিতে থাকা শতবর্ষীসহ ছোট বড় সবগুলো গাছেরই ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে। এসব গাছ যে আর কাটা পড়ছে না, সেটি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে গেছে। সূত্র বলেছে, প্রয়োজনে র‌্যাম্প নির্মিত হবে না, কিন্তু তবুও একটি গাছেও আঁচড় লাগবে না।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি র‌্যাম্প নির্মাণের কার্যক্রম স্থগিত হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কোনো গাছ কাটা পড়বে না। মন্ত্রী মহোদয় একটি গাছও কাটতে না করে দিয়েছেন।

কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান স্যার কয়েকদিনের মধ্যে সার্কিট হাউজে বৈঠক করবেন। তিনি চট্টগ্রামের সুশীল সমাজের সাথে বসে করণীয় নির্ধারণ করবেন। সবার সাথে আলোচনা করার পরই র‌্যাম্পের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও কাজী হাসান বিন শামস দৈনিক আজাদীর কাছে স্বীকার করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএপ্রিলে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমল ৪০ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম কাস্টমসে আবারও সার্ভারে ত্রুটি