সামপ্রতিক যেকোনো নির্বাচনের তুলনায় আনোয়ারায় এবারের উপজেলা নির্বাচনকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে নির্বাচন কমিশন। উপজেলার ৭৪টি ভোট কেন্দ্রের সবগুলোকেই ঝুঁকিপূর্র্ণ হিসাবে চিহ্নিত করে জোরালো নিরাপত্তা থাকছে কেন্দ্রগুলোতে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে থাকবে বিজিবি ও র্যাব। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ৩শ’ পুলিশ রাখার কথা থাকলেও অতিরিক্ত হিসাবে চাওয়া হয়েছে আরো ৩ শতাধিক পুলিশ। বাড়ানো হচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা। সব মিলিয়ে ভোটের দুই দিন আগে থেকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ঢাকা থাকবে আনোয়ারা।
সাবেক ও বর্তমান দুই মন্ত্রীর প্রভাবে আনোয়ারায় এবারের উপজেলা নির্বাচন পেয়েছে অন্যমাত্রা। সেই সাথে ভোটকে ঘিরে বেড়েছে আতংক, উত্তেজনা। সাধারণ ভোটারেরা উন্মুখ হয়ে আছে বহুদিন পর জমজমাট একটি নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে। শুরু থেকে ভোটে চেয়ারম্যান পদে ৩ প্রার্থী থাকলেও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এসে মোটরসাইকেল নিয়ে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরীর পরিবর্তে বর্তমান চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরীর ওপর আস্থা রেখেছেন ফলে বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে তৌহিদুল হক চৌধুরীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। অপরদিকে অর্থমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারীরা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হককে নিয়ে জোরালো প্রচারণায় আছেন।
দুই পক্ষই ভোটের প্রচারণায় বহিরাগতের আনাগোনা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী তৌহিদুল হক চৌধুরীর সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ–সভাপতি এস এম আলমগীর চৌধুরী বলেন, প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন আতংক ছড়াচ্ছে। মহড়া দিচ্ছে। শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী মোজাম্মেল হকের পক্ষে ভোটের মাঠে থাকা যুবনেতা মোজাম্মেল হক বলেন, তারা সব সময় বিনা ভোটে জয়ী হতে চায়। ওরা ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কিন্তু মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে; তারা পরিবর্তন চায়। দুর্বৃত্তায়নের অবসায়ন চায়। ভোট ডাকাতির দিন শেষ। হুমকি ধমকি দিলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর সালেহ ঝুঁকি বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে আজাদীকে বলেন, ‘সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এই উপজেলা নির্বাচন অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সব কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে ভোটের দুই দিন আগে থেকে নিরাপত্তার চাদরের ঢাকা থাকবে আনোয়ারা উপজেলা। আমরা বিভিন্ন মহল থেকে যেসব অভিযোগ পাচ্ছি তা দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সংসদ নির্বাচনে কোনো কোনো কেন্দ্রে ১জন পুলিশ দিয়ে নির্বাচন হয়েছে। এবার চারজন বা তারও বেশি পুলিশ থাকবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে বিজিবি ও র্যাব থাকছে। প্রতি ইউনিয়নে একজন করে মোট ১১জন ম্যাজিস্ট্রেট থাকার কথা থাকলেও ম্যাজিস্ট্রেটও বাড়ানো হচ্ছে। ভোটারদের জন্য ভোট কেন্দ্র নির্বিঘ্নে করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
উপজেলা নির্বাচনে আইনশৃংখলা বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত পরিপত্রে বলা হয়, সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ৩জন পুলিশ, ১৩জন আনসারসহ মোট ১৭ জন , গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ৪জন পুলিশসহ ১৮ থেকে ১৯জন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য থাকার কথা। কিন্তু এবার নির্বাচনী দায়িত্বের জন্য আরো ৩শ’ অতিরিক্ত পুলিশ চাওয়া হয়েছে। আগামী সোমবার থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে মাঠে থাকবে বিজিবি ও র্যাব। ভোটের আগে দুই দিন ও পরে দুইদিনসহ মোট ৫দিন তারা দায়িত্ব পালন করবেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে কত প্লাটুন দায়িত্বে থাকবে তা দুয়েকদিনের মধ্যে জানা যাবে এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় ৫/১০টি কেন্দ্রের জন্য একটি করে মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করবে।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী গতকাল শুক্রবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রচারণা চালিয়েছেন। দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন।