কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া থেকে জেলা সদরের ৬ নম্বর জেটিঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ নৌ–রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। নদীপথের এই গুরুত্বপূর্ণ রুটে প্রতি ঘাটে ঘাটে রয়েছে যাত্রী বিড়ম্বনা, নানা অনিয়ম এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের চাপ। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ জেটির ওপর দিয়ে যাত্রীদের উঠা–নামা করতে হচ্ছে। সমপ্রতি জেলার এই রুটে তিনটি জেটিঘাট (কুতুবদিয়া–মগনামা, মহেশখালী–কক্সবাজার ও কস্তুরাঘাট) ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই তিনটি ঘাটে অবকাঠামোগত সমস্যার সঙ্গে যানবাহনের অতিরিক্ত ভিড় ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের পারাপার হতে হচ্ছে, যা চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুতুবদিয়া দ্বীপে যাতায়াতের একমাত্র পথ পেকুয়ার মগনামা জেটিঘাট। দীর্ঘদিন ধরে মেরামতহীন অবস্থায় থাকায় জেটিটি বর্তমানে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ ঘাট দিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী কুতুবদিয়ায় যাতায়াত করছে। জেটির মূল পিলার থেকে কংক্রিট খসে পড়ে নড়বড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর ওপর দিয়ে চলছে শত শত যাত্রী ও যানবাহন। ফলে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ১৯৯০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুতুবদিয়া–মগনামা জেটিঘাটটি স্থাপন করেছিল এবং ২০০৪ সালে এটি সমপ্রসারণ করা হয়। এরপর দীর্ঘ ২১ বছরেও এই ঘাটে উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। অথচ কুতুবদিয়ার ২ লাখ অধিবাসী এবং মালেকশাহ হুজুরের দরবারের অসংখ্য ভক্ত–অনুরাগী এই ঘাটের ওপর নির্ভরশীল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছর এ ঘাট ইজারা দিয়ে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে। গত ১৪৩১ বাংলা সনে শুধু মগনামা জেটি ঘাট থেকেই ৭০ লাখ টাকা এবং কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ও দরবার ঘাট মিলে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও এই জেটি ঘাটটি বরাবরই উপেক্ষিত রয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন চৌধুরী বলেন, কিছু দিন আগে কঙবাজার জেলা প্রশাসক জেটিঘাটটি পরিদর্শন করেছেন। জরাজীর্ণ অবস্থায় বিপদ এড়াতে আপাতত ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হবে।
এদিকে, মহেশখালীতে ৩৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য নতুন জেটির কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় পুরাতন জেটি দিয়ে যাত্রী চলাচল অব্যাহত রয়েছে। ১৯৮৬ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে নির্মিত এই জেটি এখন চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়াও দীর্ঘ এই জেটির উপর দিয়ে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ ও ভিড় ঝুঁকির পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন জেটিঘাট এলাকায় এক ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করেন। নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এঙিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান–মাহমুদ–ডালিম বলেন, জেটিঘাট সংলগ্ন জায়গায় অবৈধভাবে মোটরসাইকেল পার্কিং করার কারণে রোগী, পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াতে অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছিল। এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এঙিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু জাফর মজুমদার অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা মোটরসাইকেলসমূহ জব্দ করে থানায় প্রেরণ করেন। ভবিষ্যতে জনসাধারণ, যাত্রী ও পর্যটকদের ভোগান্তি সৃষ্টি না করা এবং অবৈধভাবে সড়ক অবরোধ করে মোটরসাইকেল পার্কিং না করার জন্য মহেশখালীবাসীকে অনুরোধ করেন তিনি।
এলজিইডির মহেশখালী উপজেলা প্রকৌশলী বনি আমিন জনি জানান, কঙবাজার–মহেশখালী ঘাটে পুরাতন জেটিটি জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় পর্যটক ও যাত্রীদের সুবিধার্থে নতুন একটি জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ৩৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন জেটির দৈর্ঘ্য ৭০০ মিটার ও প্রস্থ ৭ দশমিক ৩ মিটার। ৭০০ মিটারের জেটির মধ্যে ৩০০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। এই নির্মাণকাজ চলতি ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।












