জ্বালানি ‘সংকট’ সমাধানে আমদানি বাড়াচ্ছে বিপিসি

চলতি মাসে একটি, অক্টোবরে আসছে চারটি অতিরিক্ত কার্গো

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

জ্বালানির চাহিদা মেটাতে দেশে নিয়মিতভাবে ৪৫ দিনের জ্বালানি মজুদ রাখে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। কিন্তু বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হঠাৎ করে চাহিদা বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে বিপাকে পড়ে রাষ্ট্রীয় জ্বালানি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটি। বিদ্যুতের বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় কোনো বাদবিবাদ ছাড়াই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চাহিদা মোতাবেক ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল সরবরাহ শুরু করে বিপিসি। এতে দেশে সরকারি মজুদ ২০-২২ দিনে নেমে আসে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়তি থাকায় এবং তাৎক্ষণিক চাহিদা মোতাবেক ডিজেল সরবরাহ দিতে সরবরাহকারীরা অপারগতা প্রকাশ করায় সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক রাখা নিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে বিপিসি। তবে সংকট সামলাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। চলতি মাসে ডিজেলের একটি এবং অক্টোবরে ফার্নেস অয়েলের দুটি ও ডিজেলের দুটি কার্গো আনার কথা বলছে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন। এতে দুই মাসে এক লক্ষ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল অতিরিক্ত আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি মিলে দেশে বর্তমানে ফার্নেস অয়েল নির্ভর ৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। তন্মধ্যে ২৬টি হচ্ছে বেসরকারি আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্লান্ট), ২০টি সরকারি। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে মাসে ৬০ হাজার টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদা রয়েছে। তন্মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ফার্নেস অয়েলের চাহিদা রয়েছে মাসে ১৫ হাজার টন, বেসরকারিগুলোতে এই চাহিদা থাকে ৪৫ হাজার টন। তবে আমদানি সুবিধা নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে ফার্নেস অয়েল আমদানি শুরু করে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এরপর আইপিপিগুলোতে ফার্নেস অয়েল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় বিপিসি। আইপিপিগুলোকে ফার্নেস অয়েল আমদানির সুযোগ দেওয়া হলেও শর্ত ছিল ১০-১২ শতাংশ ফার্নেস অয়েল বিপিসি থেকে নিতে হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কম থাকলে চুক্তির শর্ত মোতাবেক চাহিদার ১০-২০ শতাংশ জ্বালানি বিপিসি থেকে নেওয়ার কথা থাকলেও তারা নেয় না। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে আইপিপিগুলো সেই শর্ত কাজে লাগিয়ে বিপিসি থেকে ফার্নেস অয়েল নেওয়া শুরু করে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে আইপিপিগুলোর জন্য দুই লক্ষ ৪৯ হাজার টন ডিজেল ও ২ লক্ষ ৮৬ হাজার টন ফার্নেস অয়েল সরবরাহের চাহিদা দেয় পিডিবি।
এদিকে জ্বালানির সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বিপিসি। পদক্ষেপের অংশ হিসেবে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে চাহিদার অতিরিক্ত ৩০ হাজার টনের এক কার্গো ডিজেল, অক্টোবর মাসে ৪০ হাজার টনের দুই কার্গো ফার্নেস অয়েল এবং ৬০ হাজার টনের দুই কার্গো ডিজেল অতিরিক্ত সরবরাহের জন্য সাপ্লাইয়াসদের কার্যাদেশ দিয়েছে বিপিসি।
সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টনের ১১টি জাহাজের সিডিউল থাকলেও আরও ৩০ হাজার টন বাড়িয়ে ১২টি জাহাজের সিডিউল দেয় বিপিসি। একইভাবে অক্টোবর মাসে ২০ হাজার টনের একটি জাহাজের সিডিউল থাকলেও অতিরিক্ত ৪০ হাজার টন বাড়িয়ে তিনটি কার্গোর সিডিউল দেওয়া হয়। পাশাপাশি ৩ লাখ টন ডিজেলের ১০টি জাহাজের সিডিউল থাকলে তাতে আরও ৬০ হাজার টন বাড়িয়ে ১২টি জাহাজের সিডিউল নির্ধারণ করেছে বিপিসির অপারেশন বিভাগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মজুদ সবসময় কম-বেশি হয়। তবে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হঠাৎ করে ফার্নেস অয়েল নেওয়া শুরু করলে বিপিসিতে সাময়িক মজুদ বাড়লেও তা সংকট পর্যায়ে পড়ে না।’ মজুদ অর্ধেকে নেমে আসার বিষয়টি স্বীকার করে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘সেপ্টেম্বর মাসে এক কার্গো ডিজেল বেশি আসবে। এতে প্রায় ৩০ হাজার টন বেড়ে যাবে। আবার অক্টোবর মাসে ফার্নেস অয়েলের একটি কার্গোর সিডিউল ছিল। এখন সেখানে তিনটি কার্গো আসবে। ডিজেলের জন্য ১০টি কার্গোর সিডিউল ছিল। সেখানে আসবে ১২টি কার্গো। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ টনের কাছাকাছি অতিরিক্ত আমদানি হবে। ফলে আগামী দিনগুলোতে কোনো সমস্যা বা সংকট তৈরি হবে না।’
ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের মজুদ কমে যাওয়ার সংকটটি সাময়িক হিসেবে উল্লেখ করে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহদি হাসান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিপিসির পরিকল্পনায় থাকে না। হঠাৎ করে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ দেওয়ার কারণে সাময়িক জটিলতা হয়েছে। এখন পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী আমরা ইমপোর্ট প্ল্যান নতুন করে সাজিয়েছি। অতিরিক্ত কার্গো আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত আমদানির জাহাজগুলো আসা শুরু করলে সাময়িক এ সংকট কেটে যাবে। অক্টোবর পর্যন্ত এই দেড় মাসে কমপক্ষে ৫টি কার্গো অতিরিক্ত আসবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনুমতি ছাড়া মামলার নথি প্রদর্শন করা যাবে না
পরবর্তী নিবন্ধগণমাধ্যমে শৃঙ্খলা আনার দাবি সাংবাদিকদেরই : তথ্যমন্ত্রী