জ্বালানি খালাসে বিপাকে বিপিসি

তিনটির মধ্যে দুটি জেটি নিষ্ক্রিয় জটিলতা কাটাতে ডলফিন-৪ ও ৭ ব্যবহারের পদক্ষেপ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের মালিকানাধীন তিনটি ডলফিন জেটির দুটি প্রায় নিষ্ক্রিয়। বিশেষ করে গত জুলাই থেকে পদ্মা অয়েলের জেটিতে (ডলফিন-৬) বিদেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং বন্ধ রয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর মেঘনা পেট্রোলিয়ামের জেটিটি (ডলফিন-৫) জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমদানিকৃত পরিশোধিত জ্বালানি খালাসে বিপাকে পড়েছে বিপিসি। আমদানিকৃত পরিশোধিত তেলের জাহাজ খালাসের জন্য ইতোমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের জেটি (ডলফিন-৪) ব্যবহারের অনুমতি মিললেও জেটিটিতে ডিজেল খালাসের লাইন নেই। অন্যদিকে ইস্টার্ন রিফাইনারির জেটিটি (ডলফিন-৭) ক্রুড অয়েল খালাসে ব্যবহার করা হলেও আমদানি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে জটিলতা কাটানোর জন্য পরিশোধিত জ্বালানিও খালাসের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, পুরোনো জেটি ভেঙে বিপিসির অর্থায়নে ২০০৫ সালে নির্মাণ করা হয় দুইটি ডলফিন জেটি। তন্মধ্যে ডলফিন-৫ ব্যবহার করে মেঘনা পেট্রোলিয়ামর এবং ডলফিন-৬ জেটি ব্যবহার করে পদ্মা অয়েল কোম্পানি। জেটি দুটি দিয়ে আমদানিকৃত পরিশোধিত জ্বালানি খালাস করা হয়। অন্যদিকে ইস্টার্ন রিফাইনারির মালিকানাধীন ডলফিন-৭ দিয়ে আমদানিকৃত ক্রুড অয়েলের জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়। তন্মধ্যে পদ্মা অয়েলের প্রধান স্থাপনার ডলফিন-৬ জেটিটি রক্ষণাবেক্ষণ জটিলতার কারণে গত জুলাই থেকে বিদেশী জাহাজ বার্থিং বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে জেটিটি থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের কোস্টাল ট্যাংকার দিয়ে বিভিন্ন ডিপোতে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন্স) মো. আবদুস সোবহান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘মেনটেনেন্স জটিলতার কারণে ডলফিন-৬ দিয়ে বিদেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং বন্ধ রয়েছে। জেটিটি মেরামতের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’ তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশী জাহাজগুলো হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে ছিল পদ্মা অয়েলের। অক্টোবর মাসে মেঘনা পেট্রোলিয়াম হ্যান্ডলিং শুরু করেছে।
অন্যদিকে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের প্রধান স্থাপনার ডলফিন-৫ জেটিটি গত ৩০ সেপ্টেম্বর আমদানিকৃত ডিজেল খালাসের জন্য আসা ‘এমটি গ্রান্ড এইচ-৮’ জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে অভ্যন্তরীণ লাইনগুলো দুমড়েমুচড়ে যায়। জেটি থেকে ৪নং লাইনটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে সাময়িকভাবে প্রথম জাহাজটি খালাস করা সম্ভব হলেও জেটিটিতে বিদেশী জাহাজ বার্থিং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আমদানিকৃত পরিশোধিত জ্বালানি তেলের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এতে বিপাকে পড়ে দেশে জ্বালানি আমদানি ও বিপণন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিপিসি। তাছাড়া জাহাজের ধাক্কায় ডলফিন-৫ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে জাহাজ চালনায় নিয়োজিত পাইলটের অসতর্কতা এবং টাগের অনিয়ন্ত্রিত চাপের কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে মনে করছেন বিপিসির কর্মকর্তারা। মেঘনা পেট্রোলিয়ামের
মহাব্যবস্থাপক (অপারেসন্স) সেখ আবদুল মতলেব বলেন, ‘জাহাজের ধাক্কায় আমাদের জেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে আমরা জাহাজটির মালিকপক্ষের কাছে ক্লেইম করবো। আশা করি আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে তারা আমাদের ক্লেইম নিষ্পত্তি করবেন।’ তিনি বলেন, ২০১৪ সালে এ ধরণের আরেকটি দুর্ঘটনা হয়েছিল। সেবারও আমরা জাহাজের মালিকপক্ষকে ক্লেইম করেছিলাম। তারা ক্লেইম নিষ্পত্তি করেছিলেন। তবে এবারের দুর্ঘটনাটি আগের চেয়ে বড়। এবার ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে দাবি এই কর্মকর্তার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিসির এক কর্মকর্তা বলেন, বিদেশী জাহাজ বহির্নোঙরে আসার পর চট্টগ্রাম বন্দরের পাইলটরাই জাহাজটি বন্দরে নিয়ে এসে বার্থিং করে থাকেন। এসব জাহাজ বার্থিং করার জন্য টাগ বোট ব্যবহার করা হয়। জাহাজটি মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ডলফিন জেটিতে বার্থিংয়ের সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। আবার জাহাজটিকে জেটিতে ভিড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয় টাগ বোট। এসময় টাগ বোটের গতি বেশি থাকার কারণেও জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে বলে মনে করেন বিপিসির এ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী মো. রাশেদ কাউছার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সারাদিন আমরা দুর্ঘটনাস্থলে ছিলাম। প্রাথমিক তদন্ত শেষ করে আমাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটা উল্লেখ করিনি। কারণ আর্থিক ক্ষতি নিরূপনের জন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদেরও প্রয়োজন হবে।’
এদিকে বিদেশী জাহাজ হ্যান্ডলিং জটিলতা নিরসনে দ্রুত দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছে বিপিসি। ইতোমধ্যে বিপিসির অনুরোধের প্রেক্ষিতে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের পাশে বন্দরের মালিকানাধীন ডলফিন-৪ জেটিটি সাময়িক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে ওই জেটিতে ডিজেল খালাসের কোনো পাইপ লাইন নেই। তাই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ডিজেল খালাসের পাইপ লাইনটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বিপিসি।
তাছাড়া ইস্টার্ন রিফাইনারির ডলফিন-৭ জেটিটি ক্রুড অয়েলবাহী কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু সাময়িক জটিলতার কারণে জেটিটি আমদানিকৃত ডিজেল খালাসে ব্যবহারের পদক্ষেপ নিয়েছে বিপিসি। আগামী ৭ অক্টোবরের পর থেকে জেটিটি দিয়ে ডিজেল খালাস শুরু করবে বিপিসি।
এ ব্যাপারে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ মেহদী হাসান শুক্রবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ডলফিন-৫ জেটিটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে আমদানির জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে সাময়িক জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে এ জটিলতা নিরসনের জন্য আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশেষ করে ডলফিন-৪ জেটিটি ব্যবহারের জন্য বন্দরের অনুমতি পাওয়া গেছে। ওই জেটিতে একটি ডিজেল খালাসের লাইন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাছাড়া ইস্টার্ন রিফাইনারির জেটিটিতে (ডলফিন-৭) ৭ অক্টোবর এ মাসে ক্রুডের সর্বশেষ জাহাজটি খালাস হবে। এরপর পুরো মাস জেটিটি ডিজেল খালাসের জন্য ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ নিয়ে আমরা সবার সাথে মিটিংও করেছি।’
তিনি বলেন, ‘অক্টোবর মাসে ডিজেল, ফার্নেস অয়েল ও অকটেন আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণে কিছু কার্গো বেশি আসবে। বিদেশী জাহাজগুলোকে বসিয়ে রাখলে ডেমারেজ দিতে হয়। ডেমারেজ যাতে না দিতে হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিএসসির (বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন) জাহাজগুলো ভাসমান রেখে বিদেশী জাহাজগুলোকে নির্ধারিত সময়ে খালাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধজার্মানি থেকে ৮ লাখ টিকা আসছে আজ
পরবর্তী নিবন্ধজয় দিয়েই শুরু সাফ মিশন