জ্বালানির বাজারে নিজস্ব ব্রান্ডের লুব অয়েল নিয়ে আসছে বিপিসি

৫৪ লাখ লিটার আমদানির প্রক্রিয়া শুরু মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথমবারের মতো এ উদ্যোগ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৯ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

জ্বালানির বাজারে এবার নিজস্ব ব্রান্ডের লুব অয়েল নিয়ে আসছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথমবারের মতো এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ৫৪ লাখ লিটার লুব অয়েল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিপিসি। জানা যায়, দেশে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গাড়ি রাস্তায় নামছে। এতে দিন দিন ইঞ্জিন অয়েলের (লুব অয়েল) চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ৩ লাখ ২১ হাজার ২১৫টি, ২০১৬ সালে ৪ লাখ ১৬ হাজার ৪১০টি, ২০১৭ সালে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৯৮টি, ২০১৮ সালে ৪ লাখ ৯৭ হাজার এবং ২০১৯ সালে ৫ লাখ ৪ হাজার ১৩০টি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি নিবন্ধিত হয়।
সূত্র জানায়, বাজারে চার গ্রেডের লুব অয়েল রয়েছে। বছরে বর্তমানে এক লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন হতে এক লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন লুব অয়েলের চাহিদা রয়েছে। আগামী কয়েকবছরে এ চাহিদা বেড়ে এক লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন হতে এক লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হবে। বর্তমানে লুব অয়েল বাজারের ২৬ শতাংশ ‘মুবিল’ ব্রান্ডের দখলে। এটি বাজারের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রান্ড। পরের অবস্থানে রয়েছে ‘বিপি’ ব্রান্ড। বাজারে তাদের অংশীদারিত্ব রয়েছে ১১ শতাংশ। তাছাড়া ‘টোটাল’ ৬ শতাংশ, কাস্ট্রল ২ শতাংশ, ক্যালটেঙ ২ শতাংশ ও ‘শেল’ ব্রান্ডের বাজার রয়েছে ২শতাংশ। লুব অয়েলের ৫১ শতাংশ বাজার রয়েছে কম মূল্যের বিভিন্ন ব্রান্ডের।
বিপিসি সূত্র জানায়, লুব অয়েলের বাজারে প্রথমবারের মতো নিজস্ব ব্রান্ড নিয়ে আসতে কাজ শুরু করেছে বিপিসি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সেবামূলক ও সৃজনশীল কাজের অংশ হিসেবে লুব অয়েল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাষ্ট্রীয় জ্বালানি বিপণন ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটি। প্রাথমিকভাবে ৫৪ লাখ লিটার আমদানি করা হবে। এরমধ্যে প্রথম বছরে ১৮ লাখ লিটার আমদানির জন্য ইতোমধ্যে গত ১৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রকাশ করেছে বিপিসি। আগামী ৩১ নভেম্বর দরপত্র উন্মুক্ত করার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।
বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) জাহিদ হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত,সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত রাষ্ট্রীয়ভাবে লুব অয়েল ব্রান্ডিং করে থাকে। বিপিসি দেশের জ্বালানি বিপণন ও নিয়ন্ত্রণ করে আসলেও এতোদিন কোন লুব অয়েল ছিল না। এখন আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্বালানিখাত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের গাড়ির চালক ও মালিকরা লুব অয়েলকে ‘মুবিল’ হিসেবে চিনে। মুবিল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এটি দেশের মোট চাহিদার এক চতুর্থাংশের বেশি ব্যবসা করছে। অথচ মুবিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পতেঙ্গার সরকারি স্থাপনাতেই। এই প্রতিষ্ঠানে যমুনা অয়েলের সামান্য অংশীদারিত্ব রয়েছে। কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে লুব অয়েলের মতো একটি বড় ব্যবসা দীর্ঘদিন থেকে ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দিয়েছে।
বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহদী হাসান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ দেশীয় বাজারে চাহিদার বেশিরভাগ লুব অয়েল মানসম্মত নয়। মূল্য কম থাকার সুযোগে নিম্নমানের লুব অয়েল ব্যবহার করায় যানবাহনের ইঞ্জিন ও কারখানার যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে বিপিসি নিজেদের ব্রান্ডের লুব অয়েল আনার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রথম বছরে ১৮শ’ টন আমদানির জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। তাছাড়া ব্রান্ডের নাম নির্ধারণ, লোগো তৈরিসহ আনুষাঙ্গিক কাজও চলমান রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে বিপিসির লুব অয়েল বাজারে আসবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধপর্যায়ক্রমে দেশের সবাই ভ্যাকসিন পাবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচ কারণে জিতেছেন বাইডেন