জ্ঞানতাপস ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

| মঙ্গলবার , ১৩ জুলাই, ২০২১ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধনে যে কজন ব্যক্তি অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন জ্ঞানতাপস ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁদের অন্যতম। তিনি ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ১৯১০ সালে সিটি কলেজ, কলকাতা থেকে সংস্কৃতে বি.এ(সম্মান) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এম.এ (১৯১২) ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়াও ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ ১৯০৮ সালে যশোর জেলা স্কুলের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি সীতাকুণ্ড হাইস্কুলে কিছুদিন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে ১৯১৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত নিজেকে আইন পেশায় সংযুক্ত করেন। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেনের সহকর্মী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২২ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত আইন বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৩৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও রিডার হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৪৪ তিনি বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৩ সালে তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ফরাসি ভাষার খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও পালি বিভাগে যোগদান করে ১৯৫৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন।মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রায় ২৪টি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন। এর মধ্যে ১৮টি ভাষার ওপর তার উল্লেখযোগ্য পাণ্ডিত্য ছিল। উল্লেখযোগ্য ভাষাসমূহ হলো-বাংলা, উর্দু, ফারসি, আরবি, ইংরেজি, অসমিয়া, ওড়িয়া, মৈথিলী, হিন্দি, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, মারাঠি, কাশ্মীরি, নেপালি, সিংহলি, তিব্বতি, সিন্ধি, সংস্কৃত, পালি ইত্যাদি।তাঁর উল্ল্যেখযোগ্য রচনার মধ্যে ‘বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত’, ‘বাংলা সাহিত্যের কথা’, ‘বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমেরিটাস অধ্যাপক পদ লাভ করেন। একই বছর ফ্রান্স সরকার তাকে সম্মানজনক পদক নাইট অফ দি অর্ডারস অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স দেয়। ঢাকা সংস্কৃত পরিষদ তাকে ‘বিদ্যাবাচস্পতি’ উপাধিতে ভূষিত করে। পাকিস্তান আমলে তাকে ‘ প্রাইড অফ পারফরম্যান্স’ পদক (১৯৫৮), ও মরণোত্তর ‘হিলাল ই ইমতিয়াজ খেতাব’প্রদান করা হয়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স তাকে সম্মানিত সদস্য (ফেলো) রূপে মনোনয়ন করে কিন্তু পাকিস্তান সরকারের অনুমতি না থাকায় তিনি তা গ্রহণ করেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে মরণোত্তর ‘ডি. লিট’ উপাধি দেয়। ১৯৮০ সালে তাঁকে মরণোত্তর বাংলাদেশের স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধউচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিকার সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা হোক