জোড়াতালির সংস্কারে বেড়েছে দুর্ভোগ

অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক ।। চার লেনের সড়ক ঠেকেছে এক লেনে

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১১ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে অনেক আগে। মাঝখানে বড় ও মাঝারি গর্তগুলো ইট দিয়ে ভরাট করে যান চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা হলেও গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ওসব ইট ভেঙ্গে আবারো গর্ত হয়ে গেছে। এর সঙ্গে নতুন করে কার্পেটিং উঠে আরো খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। সাথে ধুলোবালি তো আছেই।
এ দৃশ্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেন-কুয়াইশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ সড়কের। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত তিন বছর ধরেই সড়কটির এমন বেহাল দশা বিরাজ করছে। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, নির্মাণ শেষে সড়কটি উদ্বোধনের দুই বছরের মাথায় ২০১৮ সালে পাইপ লাইন বসানোর জন্য কেটেছিল ওয়াসা। পরবর্তীতে ২০২০ সালের মে-জুন মাসে ক্ষতি হওয়া অংশে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করে সিডিএ। কিছু অংশে কাপের্টিংও করেছিল। কিন্তু ওই বছরের বর্ষণে তা ধুয়ে-মুছে ফিরে যায় পূর্বের অবস্থায়। যা চলতি বছরের বর্ষায় আরো করুণ আকার ধারণ করে। অবশ্য বড় বড় গর্তে ইট ফেলে সাময়িক যান চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টাও করা হয়। তবে এভাবে জোড়াতালি দিয়ে ইট বসানো সড়কটির সংস্কারের জন্য স্থায়ী কোনো সমাধানও হচ্ছে না। ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৮এপ্রিল পাইপ লাইন বসানোর জন্য সড়ক কাটার ক্ষতিপূরণ বাববদ সিডিএকে সাত কোটি ৮৯ লাখ পরিশোধ করে ওয়াসা। পাইপলাইন বসানোর পর ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে সড়কটি
সিডিএকে দাপ্তরিক নিয়মে বুঝিয়েও দেয়া হয়। তবে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পরও ওই সময় সংস্কার কাজ শুরু করেনি সিডিএ। ফলে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে ক্ষতি হওয়া সড়কটি দিনে দিনে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।
জানা গেছে, অঙিজেন-কুয়াইশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে প্রকল্প গ্রহণ করে সিডিএ। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হয়। এতে ব্যয় হয় ৪৫ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি সম্প্রসারিত সড়কটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লাইনের সড়কটির প্রস্থ ৬০ ফুট।
নিয়ম অনুযায়ী, নির্মাণ শেষে সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) বুঝিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু সিডিএ তা করেনি। ফলে আইনগতভাবে এখতেয়ার না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত এ সড়কে সংস্কার কাজ করছে না চসিকও। আবার বাজেট বা ‘মেনটেইন্যান্স’ খাতে বরাদ্দ না থাকায় উদ্বোধনের পর থেকে সড়কটি সংস্কার করতে পারছে না সিডিএ। মাঝখানে যতটুকু সংস্কার করা হয়েছে তার ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছে পাইপ লাইন বসানোর বিপরীতে ওয়াসা থেকে পাওয়া ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে।
এদিকে গত মঙ্গলবার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সড়কটির উত্তর পাশের বেশিরভাগ অংশে খানাখন্দে ভরা। কুয়াইশ রাস্তার মাথায় ছোট-বড় গর্ত দেখা গেছে। ফ্রোবেল স্কুলের সামনেও ছিল ছোট-বড় গর্ত। সেখানে সড়কের উপর মাটি ও বালির আস্তর দেখা গেছে। এভারকেয়ার হাসপাতালের একটু আগে ছোট ও মাঝারি গর্ত ছিল। সেখানে ইট গুঁড়া হয়ে উড়ছিল বাতাসের সাথে। এছাড়া সড়কের অঙিজেন মোড়, কয়লার ঘর, নয়া হাট ও ওয়াজেদিয়া, অনন্যা আবাসিক এলাকা, কফিল সড়কের মুখে অবস্থা ছিল বেশি বেহাল। সড়কটির উত্তরপাশের অবস্থা বেশি খারাপ। যে স্থানে সড়ক বেশি খারাপ সেখানে উভয়মুখী যানবাহন চলাচল করছে একই লেনে। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।
স্থানীয় বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সড়কটির জন্য এলাকাবাসী কষ্টে আছে। যাতায়াতে তীব্র ভোগান্তি হচ্ছে। বর্ষাকালে বড় বড় গর্তে পানি জমেছিল। এখন সেখানে ধুলোবালি উড়ছে। পথচারী আফতাব হোসেন আজাদীকে বলেন, ওয়াসা কাটার পর থেকেই সড়কটি নষ্ট হয়েছে। মাঝখানে যেসব জায়গায় বড় ধরণের ভাঙা ছিল সেখানে একটু সংস্কার করা হয়। কিন্তু সেগুলো আবারো নষ্ট হয়ে গেছে।
মিজান নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, এখন তো শুষ্ক মৌসুম চলছে। এখনই ভাঙাচোরা মেলামত করার উপযুক্ত সময়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের তেমন কিছু করার কথা নাই। ওয়াসা যতটুক ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ততটুকুই কাজ করতে পারি। উচিত ছিল সড়কটি সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করা, কিন্তু করেনি। আমরা তো রাজস্ব বা ট্যাঙ আদায় করি না। তাই নিজস্ব অর্থায়নেও করা সম্ভব না। প্রজেক্টের বিপরীতে টাকা খরচ করি।
ছয় লেইন করার উদ্যোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটাও প্রজেক্টভিত্তিক করতে হবে। প্রজেক্ট অনুমোদন করে সরকার টাকা দিলেই কাজ করতে পারব। আপাতত যেসব গর্ত আছে সেগুলো সংস্কার করে সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করে দিব।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-হাটহাজারী ও চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ককে সংযুক্ত করে অঙিজেন-কুয়াইশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ সড়ক। তাই এটাকে বাইপাস সড়কও বলা হয়। উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা তথা হাটহাজারী (দক্ষিণাংশ), রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এবং পার্বত্য জেলা থেকে আসা যানবাহন নগরে প্রবেশ না করে উত্তরের অন্যান্য উপজেলা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাতায়াতের জন্য সড়কটি বাইপাস হিসেবে ব্যবহার হয়।
এর বাইরেও নানা কারণে সড়কটির গুরুত্ব দিন দিন বেড়েছে। সড়কের অঙিজেন মোড়, কয়লার ঘর, নয়াহাট, ওয়াজেদিয়া ও কুয়াইশ অংশে বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই সড়কে ফ্রোবেল একাডেমি, লিবারেল আর্টস, হলি চাইল্ড, অরবিট, অঙিজেন স্কুলসহ প্রায় ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সড়কটির পাশে অনন্যা আবাসিক এলাকা, এভায়কেয়ার হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সড়কের দুপাশে জনবসতি আছে। ফলে প্রতিদিন লক্ষাধিক লোক সড়কটি ব্যবহার করে। সড়কটির ব্যবহার দিনে দিনে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেলেও যান চলাচল ব্যাঘাত ঘটছে খানাখন্দ সংস্কারের অভাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রতিশোধ নিয়ে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড
পরবর্তী নিবন্ধবন্ধের ১৫ ঘণ্টা পর শিপ ইয়ার্ড চালুর সিদ্ধান্ত