চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে গুপ্ত সংগঠন ছাত্র শিবিরের সন্ত্রাসীরা মব তৈরি করেছে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। এসময় তিনি মব সৃষ্টিকারীদের ফাঁদে পা না দেয়ার জন্য চুয়েট উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানান। নাছিরের দাবি, জুলাই গণ অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ১৪২ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। কিন্তু এ আন্দোলনে শিবিরের নেতাকর্মীরা তাদের সম্পৃক্ততার উল্লেখযোগ্য প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে তারেক রহমানকে নিয়ে শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ করে তা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান। এসময় তিনি গতকাল জুলাই–শহীদ দিবসে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের মধ্যেও এনসিপি নির্বাচনী প্রচার–প্রচারণার জন্য গোপালগঞ্জ গিয়েছেন দাবি করে সেটা কতটা সমীচীন হয়েছে সেই প্রশ্ন তুলেন।
তিনি গতকাল বুধবার জুলাই আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের বীর শহীদ ওয়াসিম আকরামসহ সকল শহীদদের বীরত্বগাথা স্মরণে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ছাত্রদলের উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে এসব কথা বলেন। নগরের ২ নম্বর বিপ্লব উদ্যান সংলগ্ন দক্ষিণ সড়কে এ সমাবেশ হয়েছে। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র সহ–সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া।
নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, জুলাইয়ের আজকের দিনে সাঈদ–ওয়াসিমদের শহীদ দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। আজকের এইদিনে নির্বাচনী প্রচার–প্রচারণার জন্য নতুন গঠিত রাজনৈতিক দলের গোপালগঞ্জে যাওয়া আদৌ সমীচীন হয়েছে কীনা তা দেশের মানুষের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই। নতুন যে রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে তাদের কর্মী সংখ্যা এখনো খুব বেশি নয়। সেই অল্পসংখ্যক কর্মীদের সন্ত্রাসকবলিত জেলা গোপালগঞ্জে বিপদে ফেলে তাদের নেতারা পালিয়ে গেছে কীনা সেটাও প্রশ্ন। তারপরও ছাত্রদল পরিবারের পক্ষ থেকে আজ গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। মেধাভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বিনির্মাণে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আমাদের সাংগঠনিক কাঠামোগুলোকে আমরা পরিবর্ধন করছি ও ঢেলে সাজাচ্ছি। তারই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ছাত্রদলের কমিটি গঠন করেছি। সেই কমিটিকে কেন্দ্র করে গুপ্ত সংগঠন ছাত্র শিবিরের সন্ত্রাসীরা কথিত সাধারণ শিক্ষার্থী বেশে মব তৈরি করেছে। এটার নিন্দা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতি আহবান থাকবে, কথিত শিক্ষার্থী বেশে যারা মব তৈরি করেছে আপনি তাদের ফাঁদে পা দিবেন না।
নাছির বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে প্রাকাশ্যে ছাত্রদলের রাজনীতি আমরা করতে চাই। প্রকাশ্যে এই রাজনীতিকে যদি কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন কথিত সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানার ব্যবহার করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করতে চাই আমরা পিছপা হব না।
নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, জুলাই ও আগস্ট আন্দোলন–সংগ্রামে ছাত্রদলের ১৪২জন নেতাকর্মী ও সমর্থক শহীদ হয়েছেন। শহীদ ওয়াসিম আকরাম জীবনের মায়া ত্যাগ করে সেদিন ফ্যাসিবাদের পতনের লক্ষ্যে সংগ্রাম করেন। কিন্তু যে সংগঠন ৫ আগস্টের পর থেকে তথ্য সন্ত্রাসী করে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে সেই সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা জুলাই–আগস্টে আন্দোলনের একটি ছবিও দেখাতে পারেন, তাহলে আমরা মনে করব শিবির সেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল। কিন্তু একবছর পরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে একটি ছবিও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকের আমরা দেখতে পাইনি।
তিনি বলেন, জামায়াত ইসলামের ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ (ঢাকা দক্ষিণের সেক্রেটারি) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যত কথা বলছেন তা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবর্হিভূত। আওয়ামীলীগ–যুবলীগের সন্ত্রাসীরা যে ভাষায় বক্তব্য দিতেন তিনিও সে ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন। তার মত জামায়াত ইসলামের যে সকল নেতাকর্মীরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অযৌক্তিকভাবে অশ্লীল ও শিষ্টাচারবর্হিভূত বক্তব্য দিয়েছেন তাদের সেই বক্তব্য প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাব। যদি প্রত্যাহার না করেন তাহলে কিন্তু ছাত্রদলের লক্ষ লক্ষ কর্মী ঘরে বসে থাকব না।
আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া বলেন, শহীদ ওয়াসিম ফেসবুকে লিখেছিল, সাধারণ ছাত্রদের পাশে প্রাণের সংগঠন এই পরিচয়ে আমি শহীদ হবো। দলীয় পরিচয়ে ওয়াসিম শহীদ হয়েছিল। অথচ তার ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম কলেজে নিয়মিত মববাজি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, একটি সংগঠন একাত্তরকে পকেটস্থ করে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। আরেকটি সংগঠন ২৪শের অভ্যুত্থানকে পকেটস্থ করার অপচেষ্টা করছে। তারা আওয়ামী লীগের সাথে কুসুম কুসুম প্রেম করে আজ হামলার শিকার হয়েছে। তারা গুম থেকে ফিরে আসা সালাউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে অশ্লীল কটুক্তি করছে যা তাদের অপরিপক্কতার বহিঃপ্রকাশ। দেশের সরকারকে কোন দায় না দিয়ে সব দোষ তারেক রহমানকে দেয়া হচ্ছে। সরকার শুধুমাত্র ভালো গুলোর দায় নিচ্ছে। যাকে বলা হয় পাওয়ার উইথআউট রেসপনসিবিলিটি।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন এর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা ইজাজুল কবির রুয়েল, আরিফুল ইসলাম আরিফ, কাজী জিয়াউদ্দিন বাসেত, ফারুক হোসেন, বায়েজিদ হোসাইন, মাসুম বিল্লাহ, রাজু আহমেদ, নাসির উদ্দিন শাওন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি তকিবুল হাসান চৌধুরী তকি, সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন রুবেল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রবিউল হোসেন রবি, সদস্য সচিব কামরুদ্দিন সবুজ, লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মো. ইব্রাহীম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, বান্দরবান জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু বকর, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আরিফ মো. জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল মো. দেওয়ান, কঙবাজার জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন রিপন, ফাহিমুর রহমান, ফেনী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন, সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম নিলয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শুভ।