জীবনযাপনের ধরন পাল্টানো দরকার

| বুধবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বজুড়েই দিন দিন বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন আক্রান্ত হচ্ছে ডায়াবেটিসে। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে ‘ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীদের অন্তত ৫০ শতাংশ জানেন না তাদের ডায়াবেটিস আছে। এ কারণে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সবার সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।’
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যাদের প্রায় অর্ধেকই নারী। এমনকি দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে ভোগেন। আবার তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশের মত অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশেও এ চিত্র বিরাজ করছে। গত ১৪ নভেম্বর ছিল ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আগামীতে নিজেকে সুরক্ষায় ডায়াবেটিসকে জানুন।’ এ উপলক্ষ্যে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে ‘এক দশকে তরুণদের মধ্যে ডায়াবেটিস আক্রান্ত বেড়েছে দ্বিগুণ’ শীর্ষক সংবাদ। এতে বলা হয়েছে, ‘ডায়াবেটিস এবং ডায়াবেটিস জনিত রোগে বিশ্বে প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগীর পা কেটে ফেলার অন্যতম কারণও ডায়াবেটিস। ফলে রোগটি চিহ্নিত হয়েছে একটি নীরব ঘাতক ব্যাধি হিসেবে। আর বিশ্বব্যাপী এই রোগের ভীতিকর প্রভাবকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে জাতিসংঘ। যক্ষ্মা ও এইচআইভি/এইডসসহ নানা সংক্রামক রোগের পাশাপাশি কোনো অসংক্রামক ব্যাধিকে প্রথমবারের মতো বিশ্বজনীন স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেটি হলো ডায়াবেটিস। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য মতে, প্রতি ১১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত (২০১৯ সালের তথ্য)। হিসেবে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২৫ মিলিয়ন। তবে ২০৪৫ সালে ৪৮ শতাংশ বেড়ে আক্রান্তের এই সংখ্যা ৬২৯ মিলিয়নে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা সংস্থাটির। সংস্থাটি বলছে, পৃথিবীর মোট ডায়াবেটিস রোগীর ৮৭ শতাংশই উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর বাসিন্দা। এছাড়া গড়ে প্রতি ৬টি নবজাতকের ১ জন মায়ের ডায়াবেটিস দ্বারা আক্রান্ত। আতংকের বিষয়, প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি দুজন মানুষের একজন জানেনই না তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর পিছনে সচেতনতার অভাবকেই দেখছেন চিকিৎসকরা। সমপ্রতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের জনস্বাস্থ্য বিভাগ যৌথভাবে ২১০০ জনের উপর একটি গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য মতে, গৃহিণীদের বড় একটি অংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। তরুণদের মধ্যেও গত এক দশকে এ রোগে আক্রান্তের হার দ্বিগুণ বেড়েছে’।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, বিষণ্নতায় থাকা ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রামে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা গত বিশ বছরে তিন গুণ বেড়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, এর মধ্যে ৩০ ভাগের ক্ষেত্রেই ওষুধ সেবন, হাঁটা-চলা কোনোটির মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের পেছনে চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করেন তাঁরা। তাঁদের অভিমত হলো, দেশে যে হারে ডায়াবেটিসের রোগী বাড়ছে, তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামী ২০৪৫ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ হবে।
চিকিৎসকরা বলছেন, যাদের পরিবার বা বাবা-মায়ের ডায়াবেটিস হওয়ার ইতিহাস রয়েছে, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই জীবনযাপনের ধরন পাল্টানো উচিত। এই পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে নিয়মিত সময়ে খাবার খাওয়া, নিয়ম মেনে সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়া, যানবাহন ব্যবহার কমিয়ে হাঁটাচলা বাড়ানো, মিষ্টি জাতীয়, ফাস্টফুড ও তৈলাক্ত খাবার পরিহার করা ইত্যাদি। শুধুমাত্র ডায়াবেটিস নয়, আরও অনেক রোগের কারণ হতে পারে ধূমপান ও মদ পানের অভ্যাস। চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিস রোগ ঠেকাতে যেসব খারাপ অভ্যাস সবার আগে বাদ দিতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস। কারণ এগুলো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দেয়।
ডায়াবেটিক বিশেষজ্ঞ ড. এ কে আজাদ খান বলছেন, স্থূলতা বা অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়ার কারণেও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। সাধারণ মিষ্টিজাতীয় খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, ভারী খাবার স্থূলতার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরের ওজনের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে কোনভাবেই অতিরিক্ত ওজন বা মুটিয়ে যাওয়া না হয়। বিশেষজ্ঞরা এজন্য মিষ্টি, ফাস্টফুড, পোলাও, বিরিয়ানি, রেড মিটের মতো ভারী খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। এড়িয়ে চলতে হবে হোয়াইট পাস্তা, প্যাস্ট্রি, ফিজি ড্রিংক, চিনি জাতীয় পানীয়, মিষ্টি ইত্যাদি। এক বেলা পেট ভরে না খেয়ে পরিমাণে অল্প অল্প করে বিরতি দিয়ে খাওয়া দরকার। এছাড়া প্রতি সপ্তাহেই নিয়মিত ওজন মাপতে হবে। শরীরের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি ও খাবার নিশ্চিত করার জন্য পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে খাবারের তালিকা তৈরি করে সেটা অনুসরণ করা উচিত। ফলে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে, তেমনি ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে