‘জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছো দান’

অজয় দাশগুপ্ত | বুধবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

কোনো মানুষের জীবনে এত আঘাত আর বেদনা থাকলে তার অবসহা কি হয় তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবে এক জীবন জয়ী নারী। জীবনজয়ী বলতে কি বুঝি আমরা? মূলত দুঃখ কষ্ট বেদনাকে জয় করে যিনি আজীবন উদযাপন করেন তিনিই জীবনজয়ী। একবার ভাবুন সাধারণ মানুষের জীবনে বেদনা শোক বা প্রিয়জন হারানো ঈশ্বর কিংবা প্রকৃতি কতটা সহনীয় করে রাখেন। রাখেন বলেই মানুষের মা বাবা ভাই হারানোর আলাদা আলাদা দিন থাকে। থাকে আলাদা সময়। শেখ হাসিনার বেলায় তা ঘটে নি। বিদেশে থাকাকালীন তিনি একরাতে তাঁর পিতা বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সহ তাঁর প্রিয় মাতা যুবক দুই ভাই আর শিশু ছোট ভাইটিকেও তিনি হারিয়ে ফেলেছিলেন। বলতে গেলে একটি মাত্র বোন ছাড়া তাঁর পুরো পরিবার উধাও হয়ে গিয়েছিল একরাতে। এমন কষ্ট এতো বেদনা সহ্য করা অস্বাভাবিক একটা বিষয়। কিন্তু তিনি এই শোক শক্তিতে পরিণত করে দেখিয়ে দিয়েছেন মানুষ তার আত্মবিশ্বাস আর মনের জোরে এমন কিছু করতে পারে যা ভাবা ও কঠিন।
এখানেই ঘটনা শেষ নয়। এক জীবনে শেখ হাসিনাকে বহুবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। অলৌকিকতারও একটা সীমা থাকে। রাজধানীর রাজপথে প্রকাশ্যে দিবালোকে সরকারের মদদে গ্রেনেড হামলায় অতি অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা ফিনিক্স পাখির মতো। বারবার ঘুরে দাঁড়িয়ে ফিরে দাঁড়িয়ে আজ তিনি একক ও দেশের সাথে অভিন্ন উচ্চারণে উচ্চারিত এক নাম। এখন আমরা এটা চোখ বন্ধ করেই বলতে পারি শেখ হাসিনা বিহীন বাংলাদেশ ভাবা ও যায় না। এই না ভাবার কারণ একাধিক। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়ন আর অগ্রগতির এক দৃষ্টান্ত। যে যত কথা বলুক আর সুশীলেরা যতো গালমন্দ করুক না কেন তারা নিজেরাও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের বেনিফিশিয়ারি। এমন কেউ আছেন যিনি শেখ হাসিনার বাংলাদেশের উন্নতি উন্নয়ন ভোগ করছেন না? সমালোচনা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। রাজনীতিতে সমালোচনা থাকবেই। বরং মনে করা হয় সমালোচনা না থাকলেই পথ হারায় সরকার। সে দৃষ্টিকোণে শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচনা হতে পারে নিন্দা ও হতে পারে বৈকি। কিন্তু খেয়াল করবেন উদ্দেশ্যহীন মতলববাজ সমালোচক নামের নিন্দুকেরা এসবের ধার ধারেন না। তাদের টার্গেট বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি ভালো মন্দ যাই করুক এরা আদাজল খেয়ে তাঁর পেছনে লেগে আছে।
এদের জনগণ চেনে। শেখ হাসিনাকে যারা চেনেন তারা জানেন স্তাবকতা বা সমালোচনা দুটিই তাঁর গা সওয়া। এগুলো গায়ে মাখেন না বলেই কথায় কথায় সত্য বলেন তিনি। কারো মুখের দিকে না তাকিয়ে সত্য বলার সাহস সবার থাকে না। শেখ হাসিনার আছে। কারণ তিনি যা করেন তা বুঝে শুনেই করেন।একসময় ছাত্র মৈত্রীর নেতা রাজশাহীর ফজলে হোসেন বাদশা এখন এমপি। সরকারী দলের সাথে জোটে থাকলেও বাদশা ভাই আওয়ামী লীগ করেন না। সে বাদশা ভাই আমার কাছে গল্প করেছিলেন সংসদে যখন জামাত নেতারা বিএনপির সাথে মিলে তাঁকে কটুক্তি করতো তিনি কিছু ই বলতেন না। এমন কি ফাঁসিতে ঝুলে যাওয়া মুসলিম লীগার পরিবারের সাকা চৌধুরী সংসদ গরম করে ফেলতেন আবোল তাবোল কথা বলে। সা কা চৌধুরীর অশ্রাব্য কথার পরও মাথা নীচু করে ডায়েরীতে কি সব লিখে যেতেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাদশা ভাই বলছিলেন তিনি দু একবার প্রশ্ন করেছিলেন তাঁকে। উত্তর না দিয়ে হেসে এড়িয়ে যেতেন শেখ হাসিনা। এরা সবাই ফাঁসিতে ঝোলার পর ফজলে হোসেন বাদশা বুঝে গিয়েছিলেন কি লিখতেন শেখ হাসিনা আর কত দৃঢ় তাঁর মনোবল।
আমাদের জীবনে আমরা বাংলাদেশের বহু রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী দেখেছি। লৌহমানব সামরিক শাসক একনায়ক এসবও শুনেছি দেখেছি। কিন্তু দিনশেষে এরা তাসের ঘরের মত উড়ে গেছে। উড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। কারণ তাদের পা মাটিতে ছিল না। শেখ হাসিনার পা সবসময় মাটিতে। শেখ হাসিনার সবচাইতে বড় গুণ তিনি দেশের মানুষের মনের ভাষা বোঝেন। কতটা বোঝেন তার একটা গল্প বলি। গেলবার শেখ হাসিনা যখন সিডনি সফরে এসেচিলেন সুযোগ হয়েছিল খুব কাছ থেকে তাঁকে দেখার। তাঁর কথা শোনার। গল্পচ্ছলে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে বিদ্যুৎ দেয়ার কথা বলতে গিয়ে এমন সব নারীদের নাম ও ঘটনা বলছিলেন যাদের কথা মনে রাকার কোন কারণ নাই তাঁর। কিন্তু নাম ঠিকানা সহ সবকিছু মুখস্থ তাঁর। দলের নেতা কর্মীদের নামও তাঁর কন্ঠস্থ। এটাই শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনাকে পছন্দ করেন না এমন মানুষের সংখ্যা কম কিছু না। কিন্তু খেয়াল করবেন তেমন এক শ্রেণির লোকেরাই তাঁর ঘোর বিরোধী যারা পাকিস্তান ভাঙা মানতে পারে নি। যাদের আপনি বাইরে থেকে প্রগতিশীল বলে ভুল করবেন যারা পোশাকে খাবারে আধুনিক যাদের এক পা দেশে এক পা বাইরে এরাই মূলত তাঁকে অপছন্দ করে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ তাঁকে ভালোবাসে। ভালোবাসে বলেই তিনি টিকে আছেন। আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি তারা প্রতিনিয়ত একটা বিষয় দেখি এবং বুঝতে পারি বিদেশে পালিয়ে থাকা কিংবা অঘটন করে চলে আসা বেঈমান গুলোই হাসিনা বিরোধী। আপনি যদি এদের সাথে যৌক্তিক কথা বলেন.এরা তা মানবে না। তাদের রাগ বা হতাশার কারণ জিজ্ঞেস করলে ও উত্তর পাবেন না। কারণ এগুলো বিষয় না। বিষয় যেকোন ভাবে শেখ হাসিনার বিরোধিতা করা। আমরা বুঝি এই রাগের কারণগুলো কী কী। একসময় এসব নিয়ে লেখা বা কথা হলেও এখন আর কেউ এগুলো পাত্তা দেয় না। সবাই জানে শেখ হাসিনার বিরোধীরা মতলববাজ। যতটা তারা সমালোচক ততোটাই নিন্দুক। এদের কথা শুনে কোনদিন লাভ হয় নি। দেশের কোন কল্যাণ হয় নি।
শেখ হাসিনা কী কী করেছেন বা কি তাঁর কৃতিত্ব সে বিচার করার ধৃষ্টতা আমার নাই। এর জন্য মহাকাল তো বটেই সময় ও দাঁড়িয়ে আছে। নিজস্ব বলয় ভেঙ্গে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। একসময় আমাদের তলাহীন ঝুড়ি বলা দেশের নেতারা এখন বাংলাদেশ বললে দু বার ফিরে তাকান। উপমহাদেশে এমন একটি দেশও নাই যারা বাংলাদেশকে সমীহ করেন না। নারী শক্তির প্রতীক নারী শক্তির বিজয় নিশ্চিত করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে গেছেন সেটা পাকিস্তানের চাইতে ভালো কেউ জানে না। আমাদের কথিত বুদ্ধিজীবীরা যাই বলুক না কেন পাকিস্তানীরা এবং পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীরা একবাক্যে স্বীকার করেন দুই দেশের পার্থক্যের বড় কারণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁরা তাদের দেশের সরকারকে বলেন, আমাদের আর কিছু পারো না পারো বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। এই আহাজারী বা এই কামনা ই বলে দেয় শেখ হাসিনা কতবড় নেত্রী।
বিষয়টা এখন এমন তাঁর হয়ে কধা বললেই মনে করে স্বার্থ আছে লোকটার। এটা ভুল। স্বার্থ তোষামোদী স্তাবকতা ছিল আছে থাকবে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে যে দেশের মাথার ওপর শেখ হাসিনার মতো নেতা থাকে তার আর যাই হোক ভয় থাকে না। ভেবে দেখুন তো, পাঁচজন বাঙালিকে এক রাখা যায়? একটা গ্রামকে এক ছকে বেঁধে রাখতে পারবেন? পারবেন না। অথচ এই এক নারী কী এক যাদুবলে দেশ ও জাতিকে ধরে রেখেছেন। বেঁধে রেখেছেন এক বন্ধনে। শত বিরোধিতা বা সমালোচনার ওপরে বিরাজমানা শেখ হাসিনার শতায়ু কামনা করি। তাঁর দীর্ঘ জীবন ও কর্মেই বেঁচে থাক আমাদের স্বদেশভূমি।
লেখক : প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঙালির সংশপ্তক
পরবর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনা : বাঙালির সাহসী ঠিকানা