জিয়া কারাগারে কত মানুষ খুন করেছে খুঁজে বের করুন

সংসদে সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী

| শুক্রবার , ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সারাদেশের কারাগারগুলোতে কত লোককে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তা খুঁজে দেখতে সংসদ সদস্যদের বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার একাদশ সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। দেশে সুশাসন নিয়ে প্রতিনিয়ত বিএনপি নেতাদের সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত কথা বলে.. আমি মনে করি আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্যদের একটা উদ্যোগ নেওয়া উচিত। জিয়ার আমলে প্রত্যেকটা কারাগারে কত মানুষকে ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছে। একেকটা ক্যু, আর শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আর্মি অফিসার, আর্মি সোলজার, বিমান বাহিনীর ৫৬৫ জন অফিসার এবং সোলজার এবং সব মিলে এই রকম কত মারা হয়েছে। এদের কাছ থেকে মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়! এদের কাছে জ্ঞানের কথা শুনতে হয়! এদের কাছে আইনের শাসনের কথা শুনতে হয়!’ খবর বিডিনিউজ ও বাসসের।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, (জিয়াউর রহমান) ১৯৭৫ এর হত্যার সঙ্গে যে জড়িত, এতে তো কোনো সন্দেহ নেই। আমি তাকে আসামি করতে চেয়েছিলাম। তখন আমাদের হোম সেক্রেটারি ছিলেন রেজাউল হায়াত। সে আবার বলল মৃত মানুষকে তো আসামি করা যায় না। আমার মনে হয় এটা ভুল, নামটা থাকা উচিত ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়ার জড়িত থাকার প্রমাণ হিসেবে খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, আব্দুর রশিদের সাক্ষাৎকার, সাংবাদিক এ্যান্থনি মাসকারেনহাস ও লরেন্স লিফশুজের বইয়ের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাই যদি না করে, তাহলে স্বাধীনতার পর যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছিল, তাদের ছেড়ে দিল কেন? গোলাম আযম তো পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে চলে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান ফেরত নিয়ে আসে।
জিয়ার শাসনামলে পাকিস্তানিদের দোসরদের মন্ত্রী, উপদেষ্টা করা, জাতির পিতার খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। আর তার বউ খালেদা জিয়া এসে আরো এক ধাপ উপরে গেল যে কর্নেল রশীদ আর হুদাকে এমপি বানিয়ে পার্লামেন্টে বসাল। এই তো তাদের চরিত্র!
শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ, আমাদের দলের বেঈমান তো ছিলই। খন্দকার মোশতাক, টোশতাক তো ছিলই। এটা তো অস্বীকার করি না। তারা তো এক সাথেই ছিল। আর আমাদের বাড়ির ভাত কার পেটে না গেছে। খালেদা জিয়া.. আর জিয়াউর রহমান তো খালেদা জিয়াকে নিয়ে মাসে একবার করে আমাদের বাসায় গিয়ে বসে থাকত। এখন তো অনেক কিছু হয়ে গেছে।
জিয়ার আমলের নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ভোট ধ্বংস করার, ভোটের উপর মানুষের আস্থা-বিশ্বাস নষ্ট করা এটা তো জিয়াউর রহমান শুরু করেছে। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ঋণ শোধ না করার কালচার তার শুরু করা। মানুষকে দুর্নীতিবাজ করা, মেধাবী ছাত্রকে এক হাতে পুরস্কার দিয়েছে, আর আরেক হাতে অস্ত্র, অর্থ দিয়ে তাদেরকে বিপথে পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি ১৯৮১ সালে ফিরে এসে … রাতে ১১টার মধ্যে বাসায় ফিরতে হবে। কেন? কারফিউ। কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছে, বহুদলীয় না। আর মদ, জুয়া এগুলো তো করেছেই, বলে লাভ নাই।
বিএনপি’র সাংসদ রুমিন ফারহানার বক্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত পোষণ করে বলেন, ইতিহাস ফিরে আসে। জাতির পিতার একদিন নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিলম ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা হয়েছিল এমনকি ৭ মার্চের ভাষণটি পর্যন্ত এদেশে বাজাতে দেয়া হোত না। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ যখন সারাদেশে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়া হচ্ছিল চট্টগ্রামেও ব্যারিকেড দেয়া হচ্ছিল। জিয়াউর রহমান তখন পাকিস্তানী সেনাদের হয়ে ব্যারিকেড দানকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছিল। এরপর সে গেল সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে। সেখানে পাবলিক ঘেরাও দিয়ে তাকে তাকে আটকাল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার যে স্বাধীনতার ঘোষণা সেটা তৎকালিন ইপিআর ওয়্যারলেস এবং পুলিশ স্টেশনের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে গেল। যে সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়েছিল সেই নেতারা সেটা সংগ্রহ করে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিল। জিয়াউর রহমান যে চট্টগ্রাম কান্টনমেন্টে ছিল সেখানে কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। যে কারণে সব থেকে বেশি মানুষ মারা গেছে সেখানে। এখনও ভাটিয়ারিতে সেই গণকবর রয়ে গেছে। সে যদি সঠিক সিদ্ধান্ত দিত আমাদের সোলজাররা সেটার ব্যবস্থা নিতে পারতো। কিন্তু সেটা সে করে নাই। যেটা অন্যেরা করেছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান করে নাই।
সরকার প্রধান বলেন, ২৭ তারিখ সন্ধ্যায় জিয়াউর রহমান কেবল স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি পাঠ করেছিল। আর এই সংসদে যখন প্রশ্ন উঠলো স্বাধীনতা দিবস ২৬ তারিখ আর জিয়া ঘোষণা দিয়েছে ২৭ তারিখ তখন ইতিহাস বিকৃতিকারিরা সেই ২৭ তারিখকে ২৬ তারিখ বানিয়ে ফেলল। অথচ ২৬ তারিখ তখন জিয়াউর রহমান পকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিল।
জিয়ার কবর নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়ার মৃত্যু সংবাদের পর তার লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। গায়েবানা জানাজা হয়েছিল। কয়েকদিন পরে একটা বাক্স আনা হল। এখানে কেউ একটা বুদ্ধি দিয়েছে। আর জেনারেল এরশাদ সাহেব আবার এই ব্যাপারে যথেষ্ট পারদর্শী। সাজিয়ে-গুজিয়ে একখানা বাক্স নিয়ে এসে দেখানো হলো। তখন এই সংসদে বার বার প্রশ্ন এসেছে- যদি লাশ পাওয়া যায় তবে লাশের ছবি থাকবে না কেন? বিএনপির প্রয়াত নেতা মীর শওকত আলীকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, সে বলেছিল, লাশ কোথায় পাব। প্রয়াত এইচ এম এরশাদও একই কথা বলেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাকে বলেছেন- বোন লাশ পাব কোথায়? আর কী বলব।
যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এই দেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার সব ব্যবস্থা করে দেশ স্বাধীন করেছেন সেখানে একজন মেজরের কথায় সবাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো আর দেশ স্বাধীন করে ফেলল তাও কখনো হয়। আর বঙ্গবন্ধুই জিয়াকে প্রমোশন দিয়ে যে মেজর জেনারেল করেছিলেন, দেশ স্বাধীন না হলে জিয়া কখনো তা হতে পারতেন না, বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়ার মা-বাবা পাকিস্তানে মাইগ্রেট করে এবং জিয়া সেখানেই আর্মিতে ঢোকে। কিন্তু তার পোস্টিং হয় আমাদের বাংলাদেশে।
‘হাড়িভাঙ্গা আম’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানোর জন্য বিএনপি’র সমালোচনার উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেখুন আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। তিনি বলেন, আমি কেবল পাকিস্তান নয় আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে ভারত, নেপাল, ভ’টান, শ্রীলংকা এমনকি মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে সব দেশেই এই আম পাঠিয়েছি। কারণ আমাদের আম অত্যন্ত সুস্বাদু। একটা হচ্ছে বন্ধুত্বের নিদর্শন। আরেকটা হচ্ছে আমার এই উদপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ, এটা বাস্তবকথা। দুইদিকেই আমাকে দেখতে হবে এবং আম কিন্তু সবাইকেই পাঠিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭১ সালে পাকিস্তানী সেনারা আমাদের ওপর যে অত্যাচার করেছে সেটা নিশ্চই আমরা ভুলতে পারিনা। সেটা ভুলে গিয়েছিল বিএনপি। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু তাকে খেতাব দিয়েছে সবই সত্যি। কিন্তু আদতে মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানটা কি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কর্নেল আসলাম বেগ, জিয়াউর রহমানকে চিঠি দেয় এবং যে চিঠিও তাঁর কাছে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া যেখানকার দায়িত্বে ছিল সেখানেই সবথেকে বেশি মানুষ মারা গেছে ,ক্যাজুয়ালিটি বেশি হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসে সে তখন যুদ্ধে কি কাজ করেছে, পাকিস্তানীদের পক্ষে যাতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা মৃত্যুবরণ করে সেই ব্যবস্থা করেছিল কি না। সেটাই আমার প্রশ্ন। তিনি বলেন, জিয়াতো একটা সেক্টরের অধিনায়ক। সেক্টর কমান্ডার ছিল জিয়া।
শেখ হাসিনা বলেন, কর্নেল আসলাম বেগ তখন ঢাকায় দায়িত্বরত ছিল পরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হয়েছিল। সেই কর্নেল আসলাম বেগ জিয়াকে মুক্তিযুদ্ধকালিন ’৭১ সালে একটা চিঠি দেয়। সেই চিঠিতে সে লিখেছিল ‘আপনি খুব ভাল কাজ করছেন। আমরা আপনার কাজে সস্তষ্ট। আপনার স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনাকে ভবিষ্যতে আরো কাজ দেয়া হবে।’ এই চিঠি অতীতেও সংসদে পড়া হয়েছে তারপরেও তিনি সংসদে এনে উপস্থাপন করবেন যাতে সংসদীয় প্রসিডিংস এর এটা একটা অংশ হয়ে থাকে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদ নেতা প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন একটা সেক্টরের অধিনায়ক হয়ে সেখানকার ক্যাজুয়ালিটি বাড়িয়ে দেয়ার মানে কি? সে নিজের হাতে পাকিস্তানী সেনাদের গুলি করতে যায়নি বরং আমাদের নিজেদের লোকদের এগিয়ে দিয়েছে মরতে। এ বিষয়টি মেজর হাফিজের বইতেও রয়েছে পরে যে বইয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে, বলেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটিকার মেধাস্বত্ব তুলে দিতে প্রস্তাব দিবেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধস্থায়ী না হওয়ার শঙ্কায় অস্থায়ীদের বিক্ষোভ