জিনিয়াস অব দি পিপল

জসীম উদ্দীন হায়দার চৌধুরী | শুক্রবার , ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

একটা দেশের জনগণের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও সাধারণ জ্ঞানবুদ্ধির এবং চেতনার স্তরের গড় পরিমাপক/সূচককে (ওহফবী) বুঝানোর জন্য ‘সমাজ বিজ্ঞানে’ এই শব্দ গুচ্ছ (ঞবৎসরহড়ষড়মু) – ‘জিনিয়াস অব দি পিপল’ গণমানুষের প্রতিভা ব্যবহার করা হয়। () পাকিস্তানে এই ‘শব্দবন্ধটি’ (এবহরঁং ড়ভ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব) প্রথম ব্যবহার করেছিলেন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, সরাসরি প্রত্যক্ষ ভোটে পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে, পাকিস্তানের জনগণ ইউরোপআমেরিকার দেশের জনগণের মতো শিক্ষিত ও যোগ্য নয়। এই জন্যে, তাঁদেরকে (জনগণকে) ‘মৌলিক গণতন্ত্রের (বেসিক ডেমোক্রেসী) প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে। (বি, ডি, মেম্বার) এই বি,ডি, মেম্বাররাই জনগণের পক্ষে ভোট দিয়ে পার্লামেন্টের সদস্য ও প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করবেন। () সাম্প্রতিককালে, বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে, প্রবল শক্তিমত্তা নিয়ে দেড়শো কোটি মানুষের দেশে গণচীনের উত্থান ঘটেছে। এতে, বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে এক ধরনের ভীতির সৃষ্টি হয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে চীনা আতঙ্ক। এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ব্যবসায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্প (শিক্ষায় মাধ্যমিক পাস এবং পদাতিক সেনার ট্রেনিং প্রাপ্ত) ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে অশনি সংকেতের আওয়াজ তুললেনআমেরিকা পিছিয়ে যাচ্ছে আমেরিকাকে বাঁচাও! মার্কিন আধিপত্যবাদীজাতীয়তাবাদী শ্লোগানে ট্রাম্প বাজিমাৎ করেছেন। আমেরিকার জনগণের মন জয় করে তিনি এক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। () ‘জিনিয়াস অব দি পিপল’তত্ত্বের শিকারে নিজেকে অত্যন্ত সফল ও দক্ষ প্রমাণিত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদী। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা নিন্দা ও সমালোচনাকে নীরব প্রত্যাখ্যানে উড়িয়ে দিয়েবিপুল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে তিনি কট্টর হিন্দুত্ববাদী, সাম্প্রদায়িকতবাদী, জাতীয়তাবাদী ও মুসলিম বিদ্বেষের অবিরাম প্রচারণা ও কার্যক্রম চালিয়ে দিল্লীর ক্ষমতার মসনদে প্রায় পাকাপোক্ত স্থায়ী আসনের ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। ভারতের ‘গণমানুষের প্রতিভা’ তিনি ঠিকই ধরতে পেরেছেনযেটাকে বলা হচ্ছে – ‘মোদী ম্যাজিক’। () যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চট্টগ্রামের সাকা চৌধুরী (সালাহ্‌ উদ্দিন কাদের চৌধুরী) বিচারকালে দম্ভ সহকারে বলেছিলেনতাঁকে ফাঁসি দেওয়া হলেসারা চট্টগ্রামে আগুন জ্বলবে। তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর কাউকে দুটি মশাল জ্বালাতেও দেখা যায়নি। () সদ্যসমাপ্ত জাতীয় সংসদের নির্বাচনে, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স (ইংরেজিতে) ও ডক্টরেট ডিগ্রিধারী এক মাইজভাণ্ডারী প্রার্থী তাঁর মহিলা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কাছে ভোটে হেরে যান। তিনি সম্ভবত তাঁর নির্বাচনী এলাকার ‘গণমানুষের প্রতিভাপূর্বঅনুধাবন (ঋড়ৎবংবব) করতে পারেননি। () চট্টগ্রামের ধনাঢ্যব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ধারণা করেছিলেনসরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করলেপ্রতিবাদে চট্টগ্রামে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়বে। কিন্তু তেমনটি ঘটেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানবতার কল্যাণে শীতবস্ত্র বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধঅপেক্ষা