জিডিপিতে অবদান ও কর্মসংস্থানের দিক থেকে চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে

| রবিবার , ২৮ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সত্যিই কঠিন। এ মুহূর্তে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বই নানা সংকট অতিক্রম করছে, অগ্রসর হচ্ছে অর্থনৈতিক নিম্নমুখিতার মধ্য দিয়ে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে কোনো দেশই প্রত্যাশিত টার্গেট পূরণ করতে পারছে না। শেয়ারবাজার ও ব্যাংকিং খাতে আস্থাহীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক এমন খারাপ অবস্থাতেও বাংলাদেশের শিপ ব্রেকিং বা জাহাজ ভাঙা শিল্প আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। গত ২৬ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘শিপ ব্রেকিংয়ে বিশ্বে এক নম্বরে বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, নানা প্রতিকূলতার মাঝেও শিপ ব্রেকিং সেক্টরে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জাহাজ কাটার তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে সামপ্রতিক সময়ে জাহাজের আনাগোনাও বেড়েছে। অনেক শিপ ব্রেকিং ব্যবসায়ী ঋণ খেলাপী এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও এই সেক্টরের উন্নতিতে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন অনেকেই। দেশে স্টিলের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়া শিপ ব্রেকিং শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গত তিন মাসে পুরো পৃথিবীতে সর্বমোট ১২০টি জাহাজ স্ক্র্যাপ করা হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামেই এসেছে ৪১টি। আগের বছর একই সময়ে বিশ্বব্যাপী জাহাজ স্ক্র্যাপ হয়েছিল ১৭০টি। ওই সময় বাংলাদেশে জাহাজ এসেছিল মাত্র ২৪টি। এক বছরের ব্যবধানে বিশ্বব্যাপী স্ক্র্যাপ জাহাজের সংখ্যা ৫০টি কমে গেলেও বাংলাদেশে ১৭টি জাহাজ বেশি এসেছে।
সূত্র বলেছে, ২০২০ সালে বিশ্বে মোট ৬৩০টি জাহাজ স্ক্র্যাপ করা হয়। এরমধ্যে ভারতে ২০৩টি, বাংলাদেশে ১৪৪টি, পাকিস্তানে ৯৯টি, তুরস্কে ৯৪টি, চীনে ২০টি ও ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে ৬০টি জাহাজ স্ক্র্যাপ করা হয়। ২০১৯ সালে জাহাজ স্ক্র্যাপ করা হয়েছিল ৬৭৬টি। ওই বছর বাংলাদেশে স্ক্র্যাপ করা হয় ২৩৬টি। ভারতে করা হয়েছিল ২০০টি, তুরস্কে ১০৭টি, পাকিস্তানে ৩৫টি, চীনে ২৯টি ও ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে ৬৯টি জাহাজ কাটা হয়। শিপ ব্রেকিং সেক্টরে জাহাজ আমদানি এবং স্ক্র্যাপ করার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এখানে উল্লেখ্য, ২০১১ সালে বর্তমান সরকার জাহাজভাঙাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করে। এতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হন। দ্রুত বাড়তে থাকে ইয়ার্ডের সংখ্যা। কিন্তু সরকার শিল্প হিসেবে ঘোষণার পর থেকে এ খাতে নতুন করারোপ শুরু করে। একই সময় আন্তর্জাতিক বাজারে বিলেটের দাম পড়ে যায়। ফলে জাহাজভাঙা শিল্প প্রতিকূল প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়। এ অবস্থায় শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পরও এর সম্ভাবনার চেয়ে সংকটই দেখা দেয়।
সঙ্গতকারণেই সংশ্লিষ্টরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন যেন জাহাজ ভাঙা শিল্পে যেসব ভ্যাট, ট্যাঙ ও শুল্ক আছে তা আর বৃদ্ধি না করে কমিয়ে আরো সহনীয় পর্যায়ে করা হয়। এসব শুল্ক আরো বৃদ্ধি হলে অস্তিত্ব সংকটে থাকা অন্য ইয়ার্ডগুলোও বন্ধ হয়ে গিয়ে দেশের সরকারী বেসরকারী ব্যাংকগুলির হাজার হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়ে যাবে।
সেই সাথে সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ, অপারসম্ভাবনাময় জাহাজভাঙা শিল্পের পরিপূর্ণ বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ শিল্পকে আরো এগিয়ে নিতে মালিক, শ্রমিক, সামাজিক নিরাপত্তা ও পরিবেশ সংরক্ষণ কাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলোকে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। এর অবকাঠামোগত ও আর্থিক সুবিধা বিষয়ে যে সব জটিলতা এবং সমস্যা রয়েছে তা দূরীকরণে সরকারকে আরো তৎপর হতে হবে। এ খাতে বিনিয়োগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যে ধরনের অনিশ্চিত, অনুৎসাহী মনোভাব বিরাজ করছে তা দূর করতে হবে। এছাড়া পুরনো জাহাজ আমদানিসংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যা এবং জটিলতাসমূহ দূরীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশে জাহাজভাঙা শিল্প সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে খুব তাড়াতাড়ি আরো ভালো অবস্থানে পৌঁছে যাবে।
কিন্তু অর্থনৈতিক এ সুবিধার পাশাপাশি কিছু সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতিও বিবেচনায় নিতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন। দেশের জিডিপিতে অবদান ও কর্মসংস্থানের দিক থেকে চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে জাহাজ ভাঙা শিল্প। সুতরাং আমরা আশা করব এ শিল্পের উন্নয়নে সরকার মনোযোগ আরো বাড়াবে। তাই দেশের ধারাবাহিক কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে