জাতীয় জীবনে নতুন বছর আসুক নতুন বারতা নিয়ে

| শনিবার , ১ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ

বিদায় ২০২১। স্বাগতম ২০২২। সকল বিদায়ের সঙ্গেই লুকিয়ে থাকে বেদনার কথকতা, থাকে আনন্দকাব্য। ২০২১ সাল বিদায় নিলো। এই বছরটিকে বরণ করার সময় কেউ ভাবেনি যে, বছরটিও আগের বছরের মতো মানব জাতির জন্য এতটা বিষময় হবে। আমরা জানি, আনন্দ উচ্ছ্বাসে বরণ করা হয়েছিলো ২০২০ কে, একইভাবে ২০২১ সালকে। কিন্তু কাটলো আতঙ্ক, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে। প্রায় সারা বছরই থাকলো আপনজন হারানোর বেদনা, থাকলো করোনাভাইরাসের মরণ-ভীতি।
কুয়াশার চাদর ছিঁড়ে পূর্বাকাশে উঠেছে আজ নতুন সূর্য। আজ নতুন বছরের নতুন দিন। স্বর্ণরাঙা উজ্জ্বল ভোর চারদিকে ছড়িয়েছে স্বপ্নের সুষমা। নতুন আনন্দ নিয়ে এসেছে এ এক নতুন ভোর। প্রতিদিনের নিয়ম মেনে আজও উদিত হয়েছে এই সূর্য। তবে এটি উজ্জ্বল, কেননা সকলের কাছে এটি নিয়ে এসেছে নতুন সকাল। নতুন করে শুরুর দিন। অতীতের সব হিংসা-বিদ্বেষ পেছনে ফেলে, সৌহার্দ্য-সমপ্রীতির সম্মিলনের দিন।
নতুন বছর সবসময় নিয়ে আসে নতুন বারতা। ঘোষণা করা হয় সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। কোনো কিছুতেই পেছনে ফিরে যাবে না জীবন, যদিও আসে ছন্দপতন। এইজন্য নববর্ষ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘মানুষের নববর্ষ আরামের নববর্ষ নয়; সে এমন শান্তির নববর্ষ নয়; পাখির গান তার গান নয়, অরুণের আলো তার আলো নয়। তার নববর্ষ সংগ্রাম করে আপন অধিকার লাভ করে; আবরণের আবরণকে ছিন্ন বিদীর্ণ করে তবে তার অভ্যুদয় ঘটে।’ তাই প্রতিটি নতুন বর্ষে মানুষের নতুন করে আবির্ভাব ঘটে জীবনের পথে। সুন্দরের প্রত্যাশায় উদিত হয় নতুন সূর্য।
পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ক্যালেন্ডার বর্ষ রয়েছে। বর্ষ পরিক্রমায় একটি বছর শেষ হয়ে নতুন বছরের আগমন ঘটে নতুন সম্ভাবনা আর নবদিগন্তের সূচনা নিয়ে। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ আয়োজন তাদের রাষ্ট্রীয় গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রম হচ্ছে খ্রিস্টীয় দিন গণনা। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষ গণনার প্রচলন রয়েছে। তাই খ্রিস্টীয় নববর্ষ সারা পৃথিবীতে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়।
বছরের শেষ সূর্যোদয়ে মানুষের একান্ত প্রার্থনা থাকে আগামী প্রজন্ম যেন সুখের বারতা বয়ে আনে। আশা-নিরাশার দোলাচলে মানুষ এগিয়ে চলে স্বপ্নকে পুঁজি করে। নতুন বছরে নতুন স্বপ্নকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে চলার প্রয়াস প্রত্যেকেরই। বছর শেষে অপ্রাপ্তিগুলোর জন্য ব্যথিত না হয়ে বরং নতুন বছর উদযাপনের আয়োজনে সবাই ব্যস্ত সময় পার করে।
করোনা প্রত্যেকটি খাতকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমন কোনো জায়াগা নেই যেখানে করোনার প্রভাব পড়েনি। কর্মহীন হয়েছেন দেশের অনেক মানুষ। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে বড় বড় শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। করোনায় বড় ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। তবে এই করোনাকালেও আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আমাদের আশান্বিত করে। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের সর্বশেষ এক রিপোর্টে বলেছে, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১’ নামের এই রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই রিপোর্ট অনুযায়ী আর ৭ বছর পর চীন হবে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০৩০ সালে ভারত হবে তৃতীয়। আর ২০৩৫ সাল নাগাদ ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বহু ধাপ উপরে উঠে যাবে ২৫ নম্বরে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। সিইবিআর বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেক উলট-পালট ঘটে গেছে। ইউরোপ-আমেরিকার বেশিরভাগ বড় অর্থনীতির দেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বিপরীতে চীন কৌশলে করোনা দ্রুত এবং কঠোরভাবে মোকাবেলার কারণে সামনের বছরগুলোতে পৌঁছে যাবে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে। তবে দেশের মানুষ এখন একটাই প্রত্যাশা করেন- কখন করোনা চলে যাবে, কখন এই অমিক্রম বিদায় হবে। তাঁরা চান সবাই আগের মতো হাসি-খুশি থাকবেন, চলবেন উদ্বেগহীন। সবাইকে খ্রিস্টীয় নববর্ষের শুভেচ্ছা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬