জাগ্রত হয় সম্প্রীতিবোধ ও মানবিক ঐক্য

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | শনিবার , ১ এপ্রিল, ২০২৩ at ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ

মাহে রমজানে আচরিত ইবাদতবন্দেগি ও নানা আয়োজনের মাঝে মুসলমানদের ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সমপ্রীতিবোধের উজ্জ্বল তাগাদা রয়েছে। মাসজুড়ে একই পদ্ধতি অনুসরণে একই সময়ে সূত্রবদ্ধ জীবন প্রণালীতে মানুষে মানুষে সমপ্রীতিবোধ জাগ্রত হয়। ঐক্য ও উজ্জীবনের সুর ধ্বনিত হয়।

 

 

অশান্তি অস্থিরতা কেটে যায় সম্মিলিত পদচারণায়, অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির অনুকূল প্রভাবে। মুসলিম জাতিকে একই সুতার মালায় গাঁথা অভিন্ন বিশ্বাস ও চেতনায় সমৃদ্ধ ভাবা হয়। মুসলিম জাতির শক্তির দুটি উৎসতাকওয়া ও ঐক্য। আর ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রেরণা এবং তাকওয়ার বৈশিষ্ট্য জাগ্রত করার সেরা সুযোগ মাহে

রমজান। প্রায় পৌনে দুশ কোটি মুসলমান একই সময়ে একই নিয়মপদ্ধতি মেনে এবং অভিন্ন উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহর নির্দেশে সিয়াম সাধনায় প্রবৃত্ত হয়ে সম্মিলিত শক্তি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয় মাহে রমজানে। এর চেয়ে সুন্দর ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির দৃষ্টান্ত আর কিই বা হতে পারে? সারা বিশ্বে প্রায়

একই সময়ে সিয়াম সাধনায় মনোনিবেশ করে মুসলমানরা বিশ্ববাসীকে এটাই জানিয়ে দেয় যে, মুসলিম মিল্লাত একই সূত্রে আবদ্ধ, সুশৃঙ্খল ও আল্লাহর নির্দেশে ঐক্যবদ্ধভাবে সমর্পিত সকলেই। এই যে মিলনের সুর, অভিন্ন চিন্তাচেতনা, আচারআনুষ্ঠানিকতায় ধর্মীয় ঐক্যের বহিঃপ্রকাশ মাহে রমজানে

অনুশীলিত হয় তা যেন আল্ল্লাহর ইচ্ছারই অনুরণন। মহান আল্লাহর অমোঘ বাণীওয়াতাসিমু বিহাবলিল্লাহি জমিয়াউঁ ওয়ালা তাফাররাকুঅর্থাৎ ‘তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। (আল ইমরান : ১০৩) মুসলমানরা সিয়াম সাধনা ও অভিন্ন ইবাদতবন্দেগির মাধ্যমে নিজেদের সামষ্টিক ঐক্য ও সংহতি প্রকাশ করে।

মাহে রমজানে মাসজুড়ে রোজাদারদের মাঝে বহুভাবে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। লাখো কোটি রোজাদার একই নিয়মে একই পদ্ধতিতে অভিন্ন লক্ষ্য উদ্দেশ্যে সিয়ামের নির্দিষ্ট আচারকর্তব্য পালনে অধিক মনোযোগ দেয়। রাতে তারাবিহ নামাজে দলবেঁধে সবাই ছুটে যায় মসজিদে। মসজিদে গিয়ে সবাই

একইভাবে নামাজের কাতারে দাঁড়ায়, রুকু, সিজদা উঠা বসায় কোনো প্রভেদ নেই, ভিন্নতা নেই। মাহে রমজানের সব আয়োজনে রয়েছে মানুষকে একই সূত্রে গেঁথে রাখার ও মানবিক গণঐক্য গড়ার প্রেরণা। পাঁচ ওয়াক্ত জামাতে নামাজ আদায়ে মুসল্লিদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো এবং একই ইমামের পেছনে এক সঙ্গে

নিয়ত বেঁধে সবাই নামাজ তথা আল্লাহর উপাসনাআরাধনায় একাকার। বিশ রাকায়াত তারাবিহ নামাজ পড়ায় সবার বিশেষ দৃষ্টি, নামাজে খতমে কোরআনে শামিল হতে পারার আনন্দসব কিছুই একই সূত্রে গাঁথা। সবার মাঝে শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ব, পারস্পরিক যোগাযোগ, সমপ্রীতি, সহমর্মিতা এবং চিন্তায় ও কাজে

ঐক্যবদ্ধতার মিলনের সুর বাজে ত্রিশ দিন ধরে। এই ঐক্য ও সমপ্রীতির অনুকূল প্রভাব পড়ে দেশ ও জাতীয় জীবনে। তখন অশুভ চিন্তা, পরস্পর বিদ্বেষ ভাব, পরনিন্দা, মিথ্যাচার, শঠতা, অন্যের ক্ষতি করার প্রবণতা প্রবৃত্তিগতভাবেই কমে যায়। শেষ রাতে রোজাদারদের ঘরে ঘরে সাহরি গ্রহণের ধুম পড়ে যায়।

আরামের শয্যা ছেড়ে সবাই একই সময়ে সেহরি খাওয়ার আনন্দেগুঞ্জনে মেতে ওঠে। কোরআন তেলাওয়াতের সুমধুর ডাক ভেসে আসে এ বাড়ি ও বাড়িতে। তাহাজ্জুদ নামাজে দাঁড়ানোর সুযোগ পায় রোজাদাররা। সেহরির সময় ফুরিয়ে যেতেই আবার ফজরের নামাজ আদায়ে মসজিদে ছুটে চলা। রমজানের সকল পুণ্যকর্মে ও কর্তব্যকর্মে মানুষে মানুষে মেলাবার সুপ্ত তাগাদা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রাম্পের ভাগ্যে এখন কী
পরবর্তী নিবন্ধঅভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনীতিকদের নাক গলানো সমীচীন নয় : তথ্যমন্ত্রী